somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধুত্ব কেমন হওয়া উচিৎ

১২ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষ সামাজিক জীব। এর মানে হলো- মানুষ একা হলেও সে একটি সমাজের অংশ। সমাজ গড়ে ওঠে সমষ্টিকে নিয়ে, একাকি সমাজ গঠিত হয় না। সমাজে বিচিত্র শ্রেণীর লোক বাস করে। একেক জনের পেশা একেক রকম। তাই সমাজে একজনকে আরেকজনের প্রয়োজন পড়ে।

এটা আল্লাহর এক অশেষ নিয়ামত। কেননা সমাজবদ্ধতার প্রশ্নে মানুষ একে অপরের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। সঠিকভাবে যথার্থ বন্ধু নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে মানুষ তার সামাজিক এবং ব্যক্তিগত জীবনকে সুষ্ঠু ও নিরাপদ করে তোলে। এই বন্ধুত্বের ব্যাপারে ইসলামের রয়েছে বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি।

আপনাদেরও নিশ্চয়ই অনেক বন্ধু আছে এবং তাদের সাথে কথা বলেন, তাদেরকে দেখতে যান, তাদের সাহায্যে এগিয়ে যান এবং তারাও আপনার দুঃসময়ে নিশ্চয়ই আপনার সাহায্যে এগিয়ে আসে! কারো কারো বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যা প্রচুর। আবার অনেকেই কয়েকজন বন্ধু নিয়েই তৃপ্ত, সন্তুষ্ট। অবশ্য এটা স্পষ্ট যে, বন্ধুদের মাঝে অনেকেই আছে খুবই আন্তরিক এবং সুহৃদ,ঘনিষ্ঠ এবং দুর্দিনে সাহায্যের হাত সম্প্রসারণকারী। ইসলামের দৃষ্টিতে বন্ধুর মর্যাদা অনেক উপরে। এমনকি মানুষের সৌভাগ্যের ওপরও বন্ধুত্বের প্রভাব পড়ে। এজন্যেই নবী করিম (সাঃ) এবং তাঁর উত্তর প্রজন্মের ইমামগণ বন্ধু নির্বাচন করার ব্যাপারে মূল্যবান কিছু দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, 'একটি মানুষ তার বন্ধুর ধর্মের অনুসারী হয়, তাই সবার ভেবে দেখা উচিত কার সাথে বন্ধুত্ব করবে।'

অন্যভাবে রাসূলে করিম (সাঃ) বন্ধুত্বকে এতো বেশি প্রভাব বিস্তারকারী বলে মনে করেন যে বন্ধুত্ব আপন সহচরকেও নিজের ধর্মে নিজের আকিদা বিশ্বাসের দিকে নিয়ে আসে। তাই সহচরের গুরুত্ব বিশেষ করে উত্তম বন্ধুর গুরুত্ব অপরিসীম। এ প্রসঙ্গে নবীজী বলেছেনঃ "একাকী নিঃসঙ্গতার চেয়ে ভালো বন্ধু উত্তম, আর নিঃসঙ্গতা মন্দ বন্ধুর চেয়ে উত্তম।" তার মানে হলো-ভালো এবং যথার্থ বন্ধু যদি নাও থাকে তাহলেও তা একজন মন্দ ও অযোগ্য বন্ধু থাকার চেয়ে ভালো।

বন্ধু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আগ-পর বিচার বিবেচনা করে নেওয়া উচিত। কারো প্রতি মন আকৃষ্ট হলেই তার সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে এমনটা ঠিক নয় বরং প্রথমে পর্যালোচনা করে দেখতে হবে ভালো লাগা বা তার প্রতি আকর্ষণের কারণ কিংবা উৎসটা কী এবং সে আদৌ বন্ধু হবার যোগ্য কি না ইত্যাদি। আমিরুল মুমেনিন হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছেঃ "যে ব্যক্তি চিন্তাভাবনা করে যথাযথ বিচার বিশ্লেষণ করে বন্ধু নির্বাচন করবে, তাদের বন্ধুত্ব বজায় থাকবে এবং তাদের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর হবে।"

হঠাৎ করে কারো সাথে পরিচিত হবার মধ্য দিয়ে অর্থাৎ কোনোরকম বিচার বিশ্লেষণ ছাড়া বন্ধুত্ব গড়ে উঠলে অনেক সময় দুঃখজনক পরিণতি ঘটতে পারে। অনেক ইন্টারনেট বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি খুব সহজেই অনুমান করা যায়। যাই হোক, এই যে আমরা বিচার বিবেচনার কথা বললাম, ইসলাম এ সম্পর্কে কী বলে অর্থাৎ একজন ভালো বন্ধুর গুণাবলী কী ইসলামের দৃষ্টিতে সেদিকে একবার নজর দেওয়া যাক।

ইসলামের দৃষ্টিতে ভালো বন্ধুর অন্যতম একটা বৈশিষ্ট্য হলো বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঐ বুদ্ধি বিবেককে কাজে লাগানো। এই বিবেকবান বন্ধু সদুপদেষ্টা হয় এবং তার ওপর সবসময় আস্থা রাখা যায় কেননা এ ধরনের বন্ধু ভুল ত্রুটি থেকে ফিরিয়ে রাখে। বিবেক-বুদ্ধিমান বন্ধুদের সাথে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বহু বর্ণনা রয়েছে। ইমাম আলী (রাঃ) বলেছেন, বিবেকবান বন্ধুর সাহচর্য অন্তরাত্মাকে প্রাণচাঞ্চল্য দান করে। বিবেকবান বন্ধু মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধি করে এবং মানুষকে ত্রুটি বিচ্যুতি থেকে রক্ষা করে। পক্ষান্তরে অজ্ঞ এবং মূর্খ বন্ধু কারো কোনো উপকার তো করেই না বরং তার কথাবার্তা আর আচার আচরণ অন্যদের বিরক্তি আর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

নৈতিক উপযুক্ততা ভালো বন্ধুর অপর একটি গুণ। ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী ভালো বন্ধু সেই হতে পারে যে নৈতিক স্খলন থেকে দূরে থাকে। কেননা দুশ্চরিত্রবান আর মন্দ কাজে অভ্যস্ত বন্ধু শেষ পর্যন্ত মানুষকে অবৈধ, অশোভন আর অনৈতিক কাজের দিকে নিয়ে যায়। পবিত্র কোরআনের নূরানী আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, "যে বিচ্যুত এবং ফাসেকের সাথে বন্ধুত্ব করে সে আসলে নিজের ওপর নিজেই জুলুম করে।" কিয়ামতের দিন তাদের অবস্থা সম্পর্কে কোরআন বলেছেঃ "হায় আমার দুর্ভাগ্য! আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম! আমার কাছে উপদেশ আসার পর সে আমাকে তা থেকে বিভ্রান্ত করেছিল। শয়তান মানুষকে বিপদকালে ধোঁকা দেয়।" বাংলা ভাষায় একটি প্রবাদ আছেঃ "উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে, সে-ই অধম যে চলে তফাতে।" অর্থাৎ যে ভালো, তার কোনো ভয় নেই, সে ভালো-মন্দ সবার সাথেই বিনা দ্বিধায় চলতে পারে, কেননা সে খারাপ হবে না, খারাপের মাধ্যমে প্রভাবিত হবে না। তাই যে মন্দের প্রভাবের আশঙ্কায় অধমকে এড়িয়ে চলে, সে নিজেই অধম। কিন্তু মনোবিজ্ঞান এই বক্তব্যের পক্ষে নেই। কেননা মানুষ কোনো পাথর নয় কিংবা নয় কোনো শুকনো কাঠ বিশেষ। যতোই সে চেষ্টা করুক না কেন অধমের দোষগুলো বা তার চিন্তাদর্শ থেকে অত্যন্ত সতর্কভাবে দূরে থাকতে পারবে না। যারা সতর্ক থাকার কথা বলে তাদের ঐ বক্তব্য একান্তই ভ্রান্ত একটা দাবিমাত্র। কারণ কারো সাথে বন্ধুত্ব করলে মনের অজান্তেই তার কথাবার্তা, আচার আচরণ, কাজকর্মের প্রভাব পড়বেই। ইরানের জগদ্বিখ্যাত মরমী কবি মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি এ সম্পর্কে লিখেছেনঃ

অসৎ বন্ধু থেকে দূরে থাকো যতোটা পারো!

সে যে বিষধর সাপের চেয়েও ভয়ংকর আরো

দুষ্ট সাপ শুধু আঘাত করে তোমার প্রাণের পর

অসৎ বন্ধু ছোবল মারে প্রাণের সাথে ঈমানের পর।

ফলে অধমের সাথে উত্তমের নিশ্চিন্তে চলার বিষয়টা যুক্তিযুক্ত নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে ভালো বন্ধুর বৈশিষ্ট্যের আরো একটি দিক হচ্ছে বন্ধুত্বের বন্ধন রক্ষা করা। ইমাম সাদেক (রাঃ) বন্ধুত্বের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট তুলে ধরেছেন। যেমন বন্ধু বানাবে তাকে যে প্রথমতঃ ভেতরে- বাইরে তোমার জন্যে একইরকম। অর্থাৎ বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে সততা রক্ষা করে। দ্বিতীয়তঃ তোমার ভালোকে নিজের ভালো, তোমার মন্দকে নিজের মন্দ বলে মনে করে। তৃতীয়তঃ যদি সম্পদশালী হয়ে যায় বা উচ্চ পদে আসীন হয়,তাহলে আচরণ পাল্টায় না। চতুর্থতঃ তোমাকে বিপদের মাঝে ছেড়ে চলে যায় না বা একাকী ফেলে যায় না ইত্যাদি।

বন্ধুত্বের একটা গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো সততা রক্ষা করা। ইমাম হাসানে মুজতবা (রাঃ) এর একজন ভক্ত একদিন ইমামের কাছে এসে তাঁর বন্ধু ও সহচর হতে চাইলো। ইমাম ঐ লোকের চেহারার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন এবং ইতিবাচক সাড়া দিয়ে বললেনঃ "আমি তোমাকে আমার বন্ধুর মর্যাদায় অভিষিক্ত করবো তবে কয়েকটি শর্ত আছে যেগুলো আমার সাথে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে অবশ্যই রক্ষা করে চলতে হবে।" লোকটি ইমামের শর্ত মানার প্রতিশ্রুতি দিল। ইমাম তখন বললেনঃ "আমার বন্ধু হতে চাইলে আমার গুণকীর্তন গাইতে পারবে না, কারণ আমি নিজের ব্যাপারে ভালোভাবেই সচেতন, কখনো আমাকে মিথ্যা বলবে না কেননা মিথ্যার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই; একইভাবে আমার কাছে কারো ব্যাপারে গীবত করতে পারবে না।" লোকটি এবার চুপ মেরে গেল,যেহেতু তার মাঝে এ সব গুণ ছিল না তাই সে ইমামকে বললোঃ 'হে রাসূলে করিমের সন্তান! আমাকে ফিরে যাবার অনুমতি দিন।' ইমামের মুখে হাসির রেখা লেগেই ছিল, সেই সহাস্য মুখেই তিনি বললেনঃ 'তোমার যেমন ইচ্ছে, সমস্যা নেই।'

বন্ধুকে সম্মান করা বন্ধুত্বের নীতিমালার আরেকটি বৈশিষ্ট্য। কারণটা হলো বন্ধুত্বের মধ্য দিয়ে যে বন্ধন তৈরি হয়, তারফলে একজনের প্রতি আরেকজনের একটা অধিকার সৃষ্টি হয়, আর সেই অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা অবশ্য কর্তব্য। সর্বোপরি একজন মুসলমান হিসেবে দায়িত্ব হলো অপরের সম্মান রক্ষা করা। চাই তা নীতিকৌশল পরিবর্তনের ব্যাপারেই হোক কিংবা ব্যক্তির আচার আচরণে সংস্কার আনার ব্যাপারেই হোক, অবশ্যই সাহায্য করতে হবে। ইমাম আলী (রাঃ) একদিন কুফায় ফিরছিলেন। পথিমধ্যে এক ইহুদির সাথে দেখা। ঐ ইহুদি লোকটিও কুফার দিকেই যাচ্ছিল। ইহুদি লোকটি হযরত আলী (রাঃ)কে চিনতো না এবং জানতোও না যে তিনিই মুসলমানদের খলিফা। কিন্তু একই গন্তব্যের যাত্রী যেহেতু সেজন্যে আলী (রাঃ) সাথেই যাচ্ছিলো। যেতে যেতে এক সময় দুজনের মাঝে কিছু কথাবার্তা হলো। কথা বলতে বলতে একটি তেমোহনীতে এসে পৌঁছলো। সেখান থেকে একটি রাস্তা চলে গেছে কুফার দিকে অপরটি তার আশপাশের কোনো এলাকার দিকে।

ইমাম আলী (রাঃ) ঐ তেমোহনীতে এসে কুফার পথে পাড়ি না জমিয়ে অপর পথে অগ্রসর হয়ে ইহুদি লোকটিকে সঙ্গ দিলেন। ইহুদি লোকটি জানতো যে তার সঙ্গী অর্থাৎ আলী (রাঃ) কুফায় যাবে, এখন ভিন্নপথে যাচ্ছে দেখে জিজ্ঞেস করলোঃ 'তুমি না বলছিলে কুফায় যাবে?' ইমাম বললেনঃ হ্যাঁ,বলেছি। ইহুদি লোকটি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলোঃ 'তুমি তো কুফার পথ চেনোই, তাহলে আমার সাথে আসছো কেন'? ইমাম জবাবে বললেনঃ 'আমরা চলার পথে বন্ধু হয়েছি, বন্ধুত্বপূর্ণ সফরের শুভ পরিসমাপ্তির জন্যেই তোমার সাথে যাচ্ছি, কেননা আমাদের নবী রাসূলে করিম (সাঃ) বলেছেন পথিক বন্ধুর প্রতি সম্মান দেখানোর স্বার্থে বিচ্ছিন্ন হবার সময় কিছুটা পথ বন্ধুকে সঙ্গ দেওয়া উচিত অর্থাৎ তাকে কিছুটা এগিয়ে দেওয়া উচিত।' ইহুদি লোকটি জিজ্ঞেস করলোঃ সত্যিই তোমাদের নবী এরকম বলেছেন?' ইমাম বললেনঃ হ্যাঁ। ইহুদি লোকটি ইমাম আলী (রাঃ) এর চিত্ত্বাকর্ষক এই আচরণ আর নৈতিকতায় মুগ্ধ হয়ে গিয়ে শেষ পর্যন্ত মুসলমান হয়ে যান। বন্ধুত্বের নীতিমালার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচার হচ্ছে অসুখ-বিসুখ, বিপদ-আপদেও বন্ধুত্ব অটুট রাখা। যেমনটি কবি সাদি বলেছেনঃ 'বন্ধু হলো সে-ই, যে বন্ধুর হাত ধরে মানসিক অস্থিরতা আর চরম দুরবস্থায়'। লোকমান হাকিম বলেছেনঃ 'প্রয়োজনের মুহূর্ত ছাড়া বন্ধুকে চেনা যায় না।' কেউ যখন অসুস্থতায় ভোগে তখন তার প্রতি সেবাযত্নের প্রয়োজন হয়, সে সময় অসুস্থ ব্যক্তি আশা করে বন্ধুরা তার সেবায় এগিয়ে আসবে। নবীজীর আহলে বাইতের মহান ইমাম হযরত আলী (রাঃ) যখন শুনতে পেলেন তাঁর বন্ধু হারেস হামেদানী অসুস্থ এবং একেবারে মরণাপন্ন অবস্থা, তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁর সেবায় যাবেন এবং যথারীতি চলে যান। ঘরে ঢুকে হারেসের শিয়রে বসলেন। হারেস তার চোখ মেলে আমিরুল মোমেনিন (রাঃ) কে দেখতে পেল তার পাশে। ইমাম তার খোঁজখবর নিলেন এবং তার মনস্তুষ্টির জন্যে তিনবার বললেনঃ 'হে হারেস! পরকালেও এই দুনিয়ার বন্ধুকে বন্ধু হিসেবে পাবে এবং তার সাহচর্য ধন্য হবে'। হারেস যেহেতু ইমামকে ভীষণ ভালবাসতো, ইমামের একথায় ভীষণ খুশি হয়ে গেল এবং কিছুক্ষণের জন্যে একটু ভালো অনুভব করে উঠে বসে বললো। 'এখন আর কোনো ভয় কিংবা শঙ্কা নেই যে আমি মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাবো নাকি মৃত্যু আমার দিকে এগিয়ে আসবে।' এর কিছুক্ষণ পরই হারেস মৃত্যুবরণ করেন।বন্ধুত্বের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচার হলো ব্যক্তিগত অহমিকা বা গর্ব পরিহার করা। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক যখন গভীর হয় তখন এক বন্ধু আরেক বন্ধুর কাছ থেকে কেবল যে সম্মানই পায় তা-ই নয় বরং নিজেকে কেউ বড়ো করে দেখারও চেষ্টা করে না, অহংকারও করে বেড়ায় না। পবিত্র কোরআনের সূরা যুমারের ষাট নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ 'অহংকারীদের স্থান হচ্ছে দোযখ।' সূরা শুয়ারার ২১৫ নম্বর আয়াতেও বলা হয়েছেঃ 'আপনাকে যারা অনুসরণ করছে সেইসব মুমিনের জন্যে আপনার পাখা বিস্তৃত করুন অর্থাৎ তাদের প্রতি সদয় হোন।' ইসলামের দৃষ্টিতে বন্ধুদের সাথে আচরণ হতে হবে সদয়, আন্তরিক এবং বিনয়ী। তবে গঠনমূলক সমালোচনাও বন্ধুত্বের মাঝে বিদ্যমান অনিবার্য একটি শিষ্টাচার। হাদিসে এসেছে, রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ 'এক মুমিন আরেক মুমিনের জন্যে আয়নার মতো।' তাই বন্ধুর দোষত্রুটিগুলো শোধরানোর ব্যাপারে সহযোগিতা করা শিষ্টাচারভুক্ত। কেননা এতে মঙ্গল ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে। গঠনমূলকভাবে বন্ধুর দোষগুলো ধরে দিলে বন্ধু রাগ তো করবেই না বরং ভাববে সেই তো পরম শুভাকাঙ্ক্ষী। তাই তাদের মধ্যকার বন্ধুত্ব আরো দৃঢ় আরো গভীর হবে। তবে কখনো ভুল করলে ক্ষমা চাওয়াটাও একটা শিষ্টাচার। কেননা ভুল স্বীকারের মধ্যেই রয়েছে সংশোধনের বীজ। ইমাম আলী (রাঃ) এর ভাষ্য অনুযায়ী 'সবচেয়ে মন্দ লোক হলো সে-ই যে ভুল স্বীকার করতে রাজি নয়।'

বন্ধুরা, আজ আমরা যেটুকু জানলাম , তা যদি মেনে চলি তবে সমাজে শান্তি আসবে ইনস আল্লাহ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×