somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিজেকে জানো (আত্ম পরিচয়)

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবন অভিজ্ঞতা আমাদেরকে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যথাযথ ও বুদ্ধিবৃত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে কিংবা সঠিক আচরণ করতে সহযোগিতা করে। জীবনে কী করে সন্তুষ্ট থাকা যায় বা কী করে সুখ অনুভব করা যায় সেই শিক্ষা ও দিকনির্দেশনা কুরআন আমাদেরকে দিয়েছে। নিজস্ব সামর্থের মধ্যে থেকেই মানসিক টেনশান, হতাশা, নৈরাশ্য থেকে মুক্ত থেকে কী করে আদর্শ জীবনযাপন করা যায় সে সব নিয়েই আজ কিছু কথা বলার চেষ্টা করবো।

বিশ্বব্যাপী টেকেনোলজি বা প্রযুক্তির উন্নতি ও অগ্রগতির ফলে মানব জীবনের সব কিছুই আজ হয়ে পড়েছে শিল্প নির্ভর, বস্তুগত এবং যান্ত্রিক। এই যন্ত্র সভ্যতার কারণে মূল যে সমস্যাটি দেখা দিয়েছে তা হলো মানুষ তার মৌলিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরে পড়তেছে। জীবন যাপনের আদর্শ যে পদ্ধতির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে মানুষকে সে ব্যাপারে তারা উদাসীন হয়ে পড়ছে। মানুষের সুখ শান্তি স্বস্তি প্রশান্তি যেখানে রয়েছে সেখান থেকে মানুষের দৃষ্টি চলে গেছে ভিন্ন দিকে। বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে মানুষ যত প্রযুক্তির অধিকারী হয়েছে সেইসব থাকার পরও মানুষ ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, একাকি হয়ে পড়েছে। মানুষের নিজের ভেতরে, তার নিজস্ব অস্তিত্বে যেসব গুপ্তধন রয়েছে সেগুলোকে খুঁজে বের করার জন্য প্রয়োজনীয় চেষ্টা প্রচেষ্টার অবসরটুকুও যেন তার নেই।

মনোবিজ্ঞানীরা এবং বিশেষজ্ঞরা বিগত বছরগুলোতে মানুষের সামর্থগুলো নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছেন। গবেষণা চালিয়ে তারা মূল্যবান সব তথ্য আবিষ্কার করেছেন। তারা দেখেছেন মানুষের নিজের ভেতর যেসব উপাদান ও শক্তি-সামর্থ্য রয়েছে সেসব মানুষের জীবনযাপনের উন্নয়নসহ বাহ্যিক কল্যাণ তো সাধন করতেই পারে এমনকি মানুষের মন ও মস্তিষ্কের সকল জটিলতা দূর করে প্রশান্তিও এনে দিতে পারে। শুধু তাই নয় আত্ম-উন্নয়নের ক্ষেত্রে, আত্মবিকাশের ক্ষেত্রে এবং নিজের সৌভাগ্য অর্জনের পথ সুগম করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু কীভাবে? বিজ্ঞানীদের সেইসব গুরুত্বপূর্ণ প্রাপ্তির বিশ্লেষণযোগ্য একটি বিষয় হলো মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতি ও কৌশল।

জীবনযাপন পদ্ধতি আমাদের সাহায্য করে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ, যৌক্তিক ও যথাযথ আচরণ করতে। সঠিক জীবনযাপন পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই সুখশান্তির সোনার হরিণ লাভ করে নিরবচ্ছিন্ন প্রশান্ত জীবন উপভোগ করতে পারি। এরকম অবস্থায় অন্যদের সঙ্গেও গঠনমূলক ও উত্তম সম্পর্ক স্থাপন করার মধ্য দিয়ে কোনোরকম সহিংসতার আশ্রয় না নিয়ে আমাদের সামনে উপস্থিত সকল সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে পারি। এভাবে আমরা জীবনে সাফল্য লাভের মধ্য দিয়ে সুখি সমৃদ্ধ জীবনের অনুভূতি লাভ করার সুখ পেতে পারি।

তবে একটি বিষয় নতুন করে আবিষ্কৃত হয়েছে যে ধর্ম জীবন যাপনের পদ্ধতিগুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নিয়ে বহু শতাব্দি আগে থেকেই ভেবেছে এবং সমাধান দিযে রেখেছে। জীবনে সাফল্য লাভ ও সন্তুষ্টির ব্যাপারে পবিত্র কুরআন চমৎকার জীবনযাপন পদ্ধতির দিকনির্দেশনা দিয়েছে। কুরআনের শিক্ষার মধ্যেই আমরা সেগুলো দেখতে পাবো। কুরআন এমনকি মানুষের নৈতিকতা, মন-মানসকিতার ভিত্তিতে যথাযথ আচরণ পদ্ধতি বাতলে দিয়েছে। সেই আচরণ পদ্ধতির মধ্যেই রেখে দিয়েছে সমস্যার সমাধান। কুরআনের শিক্ষাগুলো ধর্ম, নৈতিকতা ও বৃদ্ধিবৃত্তিক জীবনের সুষ্ঠু পরিকল্পনা দিয়ে দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতির দশটি দিকের কথা উল্লেখ করেছে। আমরা সেগুলোকে কুরআনের দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করবো।

জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও গঠনমূলক দিক হলো আত্মসচেতনতা। আত্মসচেতনতা মানে হলো নিজেকে চেনা,নিজের সম্পর্কে জানা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মনোবিজ্ঞানীরা সামাজিক অবক্ষয় ও নৈতিক আচরণগত স্খলন সম্পর্কে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, বেশিরভাগ অবক্ষয় ও স্খলনের উৎস বা কারণ হলো নিজের সম্পর্কে না জানা। সাফল্যের উপায়গুলো যা নিজের ভেতরেই রয়েছে সেগুলো উপলব্ধি করতে না পারা। এরকম অসচেতন মানুষেরা নিজের ব্যাপারে দোদুল্যমান থাকে। সে কোনোভাবেই নিজের উপর আস্থা রাখতে পারে না। সে শক্তি, সমাজ, পরিবেশের তরঙ্গে নিজেও একটি উপাদান হয়ে যায়। কীসে কল্যাণ আর কীসে ধ্বংস সেটা নির্ধারণ করার শক্তি সে হারিয়ে ফেলে।

অন্যভাবে বলা যায় যে মানুষ নিজেকে চেনে না, সে একজন নাবালকের মতো। বাইরের শক্তিগুলো তাকে সহজেই একবার এইদিকে আবার ওইদিকে টেনে নিয়ে যায়। সুতরাং আত্ম-অসচেতন মানুষ অস্থিরতায় ভোগে। এ কারণেই নিজেকে চিনতে পারলে মানুষের মন-মানসিকতা ও দৈহিক সুস্থতার ওপর তার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়ে। সুতরাং নিজেকে চেনাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মনোদৈহিক প্রশান্তি ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে দৃঢ়মনোবল থাকার নেপথ্য উপায় উপকরণ হলো নিজেকে চেনা। যার সম্পর্কে সক্রেটিস বলেছিলেন নো দাইসেলফ, সঙস্কৃতে বলা হয়েছে আত্মানাম বিদ্দি। আর ইসলাম বলেছে ‘মান আরাফা নাফসাহু ফাকাদ আরাফা রাব্বাহু”। ভাষা যা-ই হোক, অর্থ হলো নিজেকে জানো।

আজকের এই আলোচনা থেকে আমরা জানলাম নিজেকে জানাটা কতটা জরুরী্। আসুন আমরা নিজের মাঝে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাই, শান্তির পথে এগিয়ে আসি।
আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৬
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×