somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আচরন ও সমাজ ব্যবস্থা

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমাজে বাসকরতে হলে, আমাদের আচার আচারন সম্পর্কে সুন্দর জ্ঞান থাকাটা একান্ত বাঞ্চনিয়। বিশেষ করে আপনার প্রতিবেশী বা কাছের লোকগুলো তো আছেই, যে কোন মানুষের সাথে যদি আপনার আচার আচারন সুন্দর ও সাবলিল না হয়, তবে আপনী কোন ক্রমেই সমাজে বসবাস করতে পারবেন না। হ্যা, বাস করতে পাবেন, আপনী আপনার মত, মানুষ আপনাকে কিন্তু শ্রদ্ধার চোখে দেখবে না। তবে যদি মানুষ ধর্মীয় দিক থেকে নিজেকে পরিচালিত করতে চায়, তবে তো আর কোন কথা বলার অবকাশ থাকে না। আপনী স্বাভাবিক জীবনের কথাই বলুন, আমি তাই ভাবছি।

কল্যাণকর এবং সুন্দর করে কথা বলার মধ্য দিয়ে অনেক ইতিবাচক দিক অর্জিত হয়। এই গুণটি অর্জন করার ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মানুষ সামাজিক জীব। তাই মানুষকে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়। অপরকে সঙ্গে নিয়ে সমাজে চলতে হয়। সমাজ মানেই সমষ্টি, একা বা নি:সঙ্গতা নয়, একবার ভেবে দেখুন।

কিন্তু কীভাবে এই সম্পর্ক গড়ে উঠবে? কথা বলার মধ্য দিয়ে। অপরের সঙ্গে আন্তরিক মিল, বন্ধুত্ব এবং সহৃদয় ভাব বিনিময়ের মধ্য দিয়ে। আজকাল সমাজে লক্ষ্য করা যায় বিচিত্র স্টাইলে এবং অশোভন শব্দ প্রয়োগ করে অপরকে ছোট্ট করা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হয়। ভূ-ভীতি, হুমকি ধমকি দিয়ে চাপের মুখে নতজানু করে রেখে সম্মান ও মর্যাদা আদায় করে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। অথচ ইসলাম এ ব্যাপারে চমৎকার দিক-নির্দেশনা দিয়েছে। ইসলাম বলেছে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অপরের সম্মান ও মর্যাদাকে উপলব্ধি করতে হবে এবং তার যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে হবে। ব্যক্তির উন্নত চরিত্রই একটি সমাজকে উন্নত করে, সম্পদ কিংবা জ্ঞান নয়। ইসলাম তাই নৈতিক চরিত্র গঠনের ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছে। সবোর্পরি ইসলামি চিন্তা-চেতনা নিজের ভেতরে লালন করা সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজনীয় একটি দিক বলে আমি মনে করি।

যেসব গুণবৈশিষ্ট্য অর্জন করার কথা বললাম আমরা সেই নৈতিক গুণগুলো লালন করার ক্ষেত্রে কুরআন বিশ্বাসীদের উদ্দেশে চমৎকার পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিয়েছে। কুরআন বলছে কোনো অশোভন আচরণকারী কিংবা দুষ্টবুদ্ধির অধিকারী লোকের মুখোমুখি হলে তার বেয়াদবিপূর্ণ আচরণকে মহত্বের ঔদার্য দিয়ে উপক্ষোই করবে না বরং তাকে সুন্দর শব্দ ও বাক্য ব্যবহারের সাহায্যে সন্তোষজনক এবং সম্মানজনকভাবে সম্বোধন করবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন 'রহমান তথা আল্লাহর প্রকৃত বান্দার' পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন: "রহমানের আসল বান্দা তারাই যারা পৃথিবীর বুকে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং মূর্খরা তাদের সাথে কথা বলতে থাকলে অর্থাৎ মূর্খতাপূর্ণ কথাবার্তার শোনার জন্য শ্রোতা বানাতে চাইলে বলে দেয়: তোমাদের সালাম"।

এমন কিছু মানুষ আছে যারা আরেকজনের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করার জন্য উপহাস কিংবা তাচ্ছিল্য করার চেষ্টা করে। বিশেষ করে কোনো মজলিশে কিংবা জনবহুল উপস্থিতিতে যার গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করতে চায় তার হাঁটা চলাফেরাকে ব্যঙ্গ করে অনুকরণ করে দেখায়, কথা বলার ভঙ্গি নকল করে উপহাস করে, আকারে ইঙ্গিতে বিচিত্রভাবে অঙ্গভঙ্গি, রঙ্গ রসিকতা করে শ্রোতাদেরকে হাসাতে চেষ্টা করে, তুষ্ট রাখার চেষ্টা করে। এই ধরনের লোকেরা এভাবে রসিকতা-ব্যঙ্গ বিদ্রুপের মাধ্যমে মূলত প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করে এবং এভাবেই সে বা তারা আত্মতৃপ্তি বোধ করে।

ব্যক্তিত্বহীন হিংসুটে লোকদের ব্যঙ্গ-বিদ্রূপাত্মক রসিকতা নিয়ে কথা বলছিলাম। বলেছিলাম যে তারা অপরের চরিত্র নিয়ে বন্ধু বান্ধবদের মাঝে এসব করে বেড়ায় প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে। অথচ আল্লাহর প্রকৃত বান্দারা এরকম পরিবেশে কথাবার্তা বলার সময় আত্মসম্মানের বিষয়টি মাথায় রাখে এবং বুদ্ধি বিবেচনা করে শব্দচয়ন করে। এ ধরনের লোকজন কোনো মূর্খ মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময় তাদের অশোভন কথাবার্তায় কেবল যে দু:খবোধই করে তা নয় বরং তার জন্য মঙ্গল ও সুস্থতাও কামনা করে। কুরআনের ভাষায়: "ভালো দিয়ে মন্দকে প্রতিহত করে"।


মানুষের সাথে যোগাযোগ ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে সুন্দর ও কল্যাণময় কথাবার্তা বলার একটা সুপ্রভাব রয়েছে। সে কারণে পবিত্র কুরআনের অপর একটি আয়াতে সুন্দর কথা বলা এমনকি শত্রুর সঙ্গেও কল্যাণময় কথাবার্তা বলার জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছে। কুরআন বলেছে কেউ যদি নোংরা ভাষায় কথা বলেও তার জবাব দিতে হবে সুন্দর, মার্জিত ও শোভন ভাষায়। কুরআনের ভাষায়:
"সৎ কাজ ও অসৎ কাজ সমান নয়। তুমি অসৎ কাজকে সেই নেকি দিয়ে নিবৃত্ত করো যা সবচেয়ে ভাল।তাহলে দেখবে যার সাথে তোমার শত্রুতা ছিল সে অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে গেছে"।


ঠাট্টা মশকরা বা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করা যে-কোনো মানুষকে নিয়েই হোক না কেন, তা সর্বাংশে নেতিবাচক। ব্যক্তির ব্যক্তিগত মর্যাদা ও ব্যক্তিত্ব যত উন্নত ও গ্রহণযোগ্য হবে এমনকি আল্লাহর দরবারেও পদস্থ ও সম্মানজনক মনে হবে, ঠাট্টা মশকরা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের মাধ্যমে ঠিক সেই পরিমাণই সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নি:সন্দেহে একটি সমাজের প্রতিটি সদস্যের নিজ নিজ একটা অবস্থান ও মর্যাদা রয়েছে। ইসলামের স্বার্থ ও কল্যাণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তার সেই বিদ্রূপ ও ঠাট্টা মশকরার ঘটনা যতটুকু কল্যাণ তার মাধ্যমে হবার কথা ছিল ততটুকু হবে না, বাধাগ্রস্ত হবে। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে তাকে আর ব্যবহারই করা যাবে না।


বলার অপেক্ষা রাখে না যে এ বিষয়টি একটি সমাজের জন্য সুখকর তো নয়ই বরং মারাত্মক ক্ষতির কারণ। এমনও হতে পারে গ্রহণযোগ্যতা হারানোর কারণে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ প্রবণতা দেখা দিতে পারে। অন্যের বিরুদ্ধে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ, ঠাট্টা মশকরা, তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের ঘটনা অপরের অপমানের পাশাপাশি নিজের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ হলো এ ধরনের লোকের ব্যাপারে জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা দুর্বল ও নড়বড়ে হয়ে যায়। তারচেয়ে বড় ব্যাপার হলো এই বিদ্রূপ প্রবণতা আল্লাহর স্মরণ থেকে নিজেকে এবং জনগণকে উদাসীন করে তোলে। কুরআন তাই হুশিয়ার করে দিয়ে বলেছে এ ধরনের আচরণ পুরোপুরি অস্বাভাবিক। তাই এ রকম আচরণ পরিহার করতে হবে।

দুষ্টবুদ্ধির অধিকারী লোকের মুখোমুখি হলে তার বেয়াদবিপূর্ণ আচরণকে মহত্বের ঔদার্য দিয়ে উপক্ষোই করবে না বরং তাকে সুন্দর শব্দ ও বাক্য ব্যবহারের সাহায্যে সন্তোষজনক এবং সম্মানজনকভাবে সম্বোধন করবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন 'রহমান তথা আল্লাহর প্রকৃত বান্দার' পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন: "রহমানের আসল বান্দা তারাই যারা পৃথিবীর বুকে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং মূর্খরা তাদের সাথে কথা বলতে থাকলে অর্থাৎ মূর্খতাপূর্ণ কথাবার্তার শোনার জন্য শ্রোতা বানাতে চাইলে বলে দেয়: তোমাদের সালাম"।

সর্বপরি, আমার একটি অনুরোধ, আচরনের শালিনতা যেন সবাই বজায় রাখি, আজ ও গাড়ীতে উঠলে অনেক ছেলেকে দেখেছি, সীট ছেড়ে দাড়িয়ে গেছে, ভাবতে বেশ অভাক লাগে, সমাজে খুবই কম দেখা যায়। আমাদের উচিৎ সন্তাদেরকে আদর্শ শিক্ষা দান করা, আচার আচরন সুন্দর ও সুষ্ঠুতা বজায় রাখা। একজন মাই হলো প্রাথমিক ও আদর্শ শিক্ষক, তিনি যদি তার সন্তানকে সহজ ও স্বাভাবিক ভাবে গঠন করতে না পারে, এটা একান্তই লজ্জার বিষয়। একজন আদর্শ মা, মানেই একটি আদর্শ সমাজ, একটি আদর্শ রাষ্ট এতে আমার কোন সন্দেহের অবকাশ নাই। আশা করি আপনাদের ও থাকবে না।

আসুন আমরা আদর্শ সমাজ গঠন করি, আদর্শ রাষ্ট গঠন করি, আগামীতে সমাজকে বসবাসের জগ্য করে তুলি, আমাদের পরবর্তী বংশধরদেরকে একটু সুন্দর ভাবে বেচে থাকার উপযোগী করে রেখে যাই।

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৫৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×