somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কুঙ্গ থাঙ
আমার মাতৃভাষার নাম বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি । পৃথিবীর মাত্র তিন লক্ষ মানুষ এই ভাষায় কথা বলে । ভাষাটিকে ইউনেস্কো এনডেঞ্জার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ হিসাবে ঘোষনা করেছে ।

পাঠ্যবইতে মণিপুরীদের সম্বন্ধে ফালতু তথ্য

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ সকাল ৮:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাঠ্যবইতে আলতু ফালতু জিনিষের সমাবেশ ঘটানো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য প্রধান দিক। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক র্বোড বলে আমাদের একটি সংস্থা আছে যেটি নানান সরকারের আমলে নানানরূপে এই আকামটি করে থাকে। পঞ্চম শ্রেণীর 'পরিবেশ পরিচিতি সমাজ' বইতে তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির বিবরন অন্তর্ভূক্ত করেছে। অবশ্যই ভালো কথা, কিন্তু আমার বড় আগ্রহ কোন জাতিসত্তা, তাদের জীবনধারা, ভাষা বা সংস্কৃতির মতো র্স্পশকাতর বিষয় নিয়ে র্চচা করার র্পুবে র্পযাপ্ত গবেষনা ও মাঠ র্পযায়ে অনুসন্ধানের প্রয়োজন আছে বলে তারা মনে করেন কিনা । কারণ বইটিতে মণিপুরীদের জীবনধারা, ভাষা ও সংস্কৃতি সমন্ধে যেভাবে ভিত্তিহীন, খন্ডিত এবং ক্ষেত্রবিশেষে মনগড়া ও হাস্যকর তথ্যের অবতারনা করছে যেগুলো খুবই প্যাথেটিক। বিশ্বের বিভিন্ন জাতি র্শীষক অধ্যায়ের ১৪৩, ১৪৪ ও ১৪৫ পৃষ্ঠাব্যাপী 'মণিপুরী' শিরোনামে লেখাটিতে বাস্তবের সাথে সংগতিপুর্ণ তথ্য খুবই কম। ছোটবেলায় আমরা যেমন বানায়া "গরু রচনা" লিখতাম অনেকটা সেইরকম। কিয়দংশ উল্লেখ করি -

(১) ‘এদের আদি বাসস্থান আসামের মণিপুর রাজ্যে।’
প্রকৃতপক্ষে মণিপুর ভারতের উত্তর-পুর্বাঞ্চলের একটি স্বতন্ত্র রাজ্য (২৩.৫μ-১৫.৩μ উত্তর আংশ থেকে ৯৩.১μ -৯৪.৩ μ পুর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত এবং আয়তন ২২, ৩২৭ বর্গ কি.মি.); এর রাজধানীর নাম ইম্ফাল। মণিপুর আসামের অন্তর্গত নয়; আসাম হলো মণিপুরের সীমান্তবর্তী আরেকটি ভিন্ন রাজ্য এবং এর রাজধানী দিসপুর।

(২) ‘তাদের গায়ের রং ফর্সা, চোখ ছোট, নাক কিছুটা চ্যাপ্টা, উচ্চতা মাঝারি।’
প্রকৃতপক্ষে মণিপুরীদের সবার গায়ের রং ফর্সা নয়,সবার চোখ ছোট বা সবার নাক চ্যাপ্টাও নয়। মণিপুরীদের মুখাবয়বে একইসাথে ভোটব্রহ্মী এরিয়ান দুই ধরনের বৈশিষ্ঠই আছে।

(৩)‘বিয়েতে ছেলেমেয়েরা একত্রে দেবতাকে খুশী করার জন্য নৃত্য পরিবেশন করে।’
মণিপুরীদের বিবাহের দিন বৈষ্ণব রীতি অনুসারে পুরুষ পালাকার ও মৃদঙ্গ বাদকদের পরিবেশনায় বৈষ্ণব পালাকীর্ত্তন পরিবেশিত হয়, এর বাইরে কোন প্রকারের নাচের অনুষ্ঠানের অবকাশ নেই।

(৪) ‘পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য তারা নদীর ধারে বাড়ি নির্মান করে।’
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য নদীর ধারে বাড়ি বানাতে হবে কেন? এদের কাজ হলো উপজাতিদের নিয়া যথাসম্ভব অদ্ভুত তথ্য বের করা। মণিপুরীরা অরণ্যচারী বা যাযাবর কোনটাই নয়, থাকে সমতলে। নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রত্যেকটা গ্রামের পাশ দিয়া কোন না কোন নদী বয়ে চলছে, আলাদাভাবে মণিপুরীদের বাড়ীঘরের আশেপাশে নদীর অবস্থান খুঁজে বেড়ানোর মানে কি?

(৫) ‘মণিপুরীদের নিজস্ব কোন ধর্ম নেই।’
মণিপুরীদের নিজস্ব লৌকিক ধর্ম আপোকপা যা অত্যন্ত প্রাচীন, আধ্যাত্তিকতায় গভীর ও র্দাশনকিভাবে উচ্চস্তরের। প্রাচীন ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী সৃষ্টকর্তা নিজের প্রতিকৃতি থেকে মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন এবং প্রতিটা মানুষ সৃষ্টিকর্তার একেকটা ছায়া। এখনো মণিপুরী মৈতৈদের অনেকে এই ধর্মের অনুসারী। মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়াদের একাংশের মধ্যে আপোকপা পুজার প্রচলন রয়েছে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে মণিপুরীরা বৈষ্ণব র্ধমে দীক্ষিত হয়।
দেখুন: The Manipuri Religion

(৬)‘রাধা, কৃষ্ণ, বিষ্ণু, গৌড়াঙ্গ এদের প্রধান দেব দেবী।’
লৌকিক দেবদেবী সরালেল, সনামাহি, পাখাঙবা, ইমাগিথানি ইত্যাদির নাম এদের জানা নেই এটা নাহয় বুঝলাম কিন্তু গৌরাঙ্গ তো কোন দেবদেবী নন, তিনি গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের প্রবক্তা মহাপুরুষ।

(৭) ‘মণিপুরীদের নিজস্ব ভাষা ও বর্ণমালা আছে। এই ভাষাকে বলা হয় মেথেয়ী।’
"মেথেয়ী" নয়, মৈতৈ। আর ভাষাগতভাবে বাংলাদেশের মণিপুরীরা বিষ্ণুপ্রিয়া ও মৈতৈ এই দুই শাখায় বিভক্ত । Sil International বাংলাদেশের ৩৯টি ভাষার মধ্যে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ও মৈতৈ ভাষাকে তালিকাভুক্ত এবং উভয় ভাষার জন্য ISO 639-2 Language code প্রবর্তন করেছে। ভারত ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নথিপত্র ও দলিল দস্তাবেজে দুইটি ভাষাই মণিপুরী ভাষা হিসাবে স্বীকৃত এবং ভারত সরকার আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যের ইস্কুলগুলোতে উভয় ভাষায় শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ করে দিয়েছে।
দেখুন: Languages of Bangladesh এবং ISO 639 Code: mni

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ঢাকা থেকে প্রকাশিত পঞ্চম শ্রেণীর ‘পরিবেশ পরিচিত সমাজ’ পাঠ্যবইটির রচনায় ড. সাবিহা সুলতানা, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, সেলিনা আক্তার ও লুৎফুর রহমান এবং সম্পাদনায় প্রফেসর মোহাম্মদ আলতাফ হোসেনের নাম রয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ২:০২
১৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×