somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কুঙ্গ থাঙ
আমার মাতৃভাষার নাম বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি । পৃথিবীর মাত্র তিন লক্ষ মানুষ এই ভাষায় কথা বলে । ভাষাটিকে ইউনেস্কো এনডেঞ্জার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ হিসাবে ঘোষনা করেছে ।

মণিপুরী নৃত্যকলার প্রসারে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনবদ্য ভুমিকা, রবীন্দ্রনাথের গানে মণিপুরী সুর এবং অন্যান্য প্রসংগ

০৮ ই মে, ২০০৮ ভোর ৫:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মণিপুরী সংস্কৃতির সবচেয়ে সমৃদ্ধ শাখা মণিপুরী নৃত্য। মণিপুরী নৃত্যকলা তার কোমলতা, আঙ্গিক, রুচিশীল ভঙ্গিমা ও সৌন্দর্য দিয়ে জয় করেছে ভারতর্ষের অসংখ্য দর্শকের মন। শুধুমাত্র মণিপুরী জীবনধারা ও ধর্মাচরনের সাথে জড়িত এই নৃত্যকে বহির্বিশ্বে পরিচিত করান কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

কবিগুরুর ভ্রমনের ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৯১৯ সালে তিনি সিলেট ভ্রমনে এলে ৬ই নভেম্বর সিলেট শহরের অদুরে মাছিমপুর পল্লীতে বেড়াতে আসেন। সেখানকার বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী মেয়েরা কবিগুরুকে অভ্যর্থনা জানান এবং পরে তার সম্মানে কবির বাংলোতে মণিপুরী নৃত্যের আসর আয়োজন করা হয়। দুপুরে কবিগুরুকে ঐতিহ্যবাহী মণিপুরী গোষ্ঠলীলা এবং রাতে মণিপুরী রাসলীলা দেখানো হয়। কবিগুরু মণিপুরী নৃত্যের সজ্জা, সাবলীল ছন্দ ও সৌন্দর্যে বিমোহিত হন এবং শান্তিনিকেতনের ছেলেমেয়েদের এ নৃত্য শেখাবার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী নৃত্যশিল্পী ইমাগো দেবী। ইমাগো দেবীকে কবিগুরু শান্তিনিকেতনে নিয়ে যেতে চাইলেও মণিপুরীদের কঠোর সামাজিক বিধিনিষেধের জন্য তা সম্ভব হয়নি।

কবিগুরুর আমন্ত্রনে প্রথমে মণিপুর থেকে তিনজন নৃত্যশিক্ষক শান্তিনিকেতনে আসেন , কিন্ত বাংলা জানা না থাকার কারণে তার ফিরে যান। এরপর ১৯২৬ সালে আগরতলা থেকে গুরু বুদ্ধিমন্ত সিংহ এবং ত্রিপুরা থেকে গুরু নবকুমার সিংহ শান্তিনিকেতনে যোগ দেন। প্রথমবারের মতো মনিপুরী নৃত্য ব্যবহার করে শান্তিনিকেতনে মঞ্চষ্থ হয় "নটীর পুজা" ও "ঋতুরঙ্গ"। ২য় পর্য়ায়ে কবিগুরুর আমন্ত্রনে যোগ দেন সিলেটের কমলগঞ্জের বালিগাঁও গ্রামের বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী নৃত্যগুরু নীলেশ্বর মুখার্জ্জী। এরপর শান্তিনিকেতনে মণিপুরী নৃত্যের জন্য আলাদা শাখা গঠন করা হয়।

রবীন্দ্রসংগীতের গভীরতা ও কাব্যময়তার সাথে মণিপুরী নৃত্যের সাবলীল গতি ও বিশুদ্ধ নান্দনিকতার মধ্যে বিশেষ সামঞ্জস্য থাকায় শান্তিনিকেতনে উচ্চাঙ্গ নৃত্যধারার মধ্যে মণিপুরী নৃত্য সর্বাপেক্ষা সমাদৃত হয়। এরপর বাংলাদেশে এবং সারা ভারতে মণিপুরী নৃত্যের প্রচার ও প্রসার ঘটে। এছাড়া রবীন্দ্রনাথ মণিপুরী গানের সুর ও তাল দিয়েও প্রভাবিত হয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের "শ্যামা" ও "চন্ডালিকা" ও নৃত্যনাট্যে আংশিক এবং "চিত্রাংগদা " নৃত্যনাট্যে সম্পুর্নভাবে মণিপুরী নৃত্যের সুর ও তাল অনুসরন করা হয়েছে। এছাড়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনেক গানে মণিপুরী সুর ব্যবহৃত হয়েছে, যেমন -
১. শ্রীবাস কাছে থেকে দুরে কেন ছিলগো আধাঁরে
২. আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে
৩ .রোদন ভরা এ বসন্ত
৪. বাকি আমি রাখবো না

লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা মণিপুরী নৃত্যের বিশ্বময় প্রচার এবং মনিপুরী সংস্কৃতির পুনর্জাগরনে অসামান্য ভুমিকা রাখার জন্য মনিপুরীরা আজো কবিগুরুকে মণিপুরী নৃত্যের পথিকৃৎ হিসাবে বিবেচনা করেন। মণিপুরী নৃত্যগুরুরা আজো গভীর শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারন করেন কবিগুরুর নাম। সম্মানিত করার জন্য কবিগুরুর লেখা গান মণিপুরী রাসলীলায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে । সিলেটের মাছিমপুরের বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী পল্লীতে স্থাপন করা হয়েছে কবিগুরুর প্রতিকৃতি।



তথ্যসুত্রঃ
১. আকাংখা - শান্তিনিকেতনের পত্রিকা ১৩২৬ বাংলা
২. শ্রীভূমি সিলেটে রবীন্দ্রনাথ - অধ্যাপক নৃপেন্দ্রলাল দাস
৩. ভারতের নৃত্যকলা - গায়ত্রী চট্টোপাধ্যায়
৪. Tagore and his influence in Bishnupriya Manipuri Society


মণিপুরী নৃত্য সম্পর্কেঃ
মণিপুরীরা আদিবাসী সম্প্রদায়ভূক্ত হওয়ায় অনেকে মণিপুরী নৃত্যকে আদিবাসী বা "উপজাতীয়" নৃত্য বলে ভুল করেন। বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ বাংলাপিডিয়ায় উপজাতীয় নৃত্য শীর্ষক নিবন্ধে মণিপুরী নৃত্যকে উপজাতীয় নৃত্য বলে লেখা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন পাঠ্যবই ও জাতীয় প্রকাশনাগুলোতে প্রায় নিয়মিতভাবে মণিপুরী নৃত্যকে পার্বত্য নৃত্য হিসাবে উপস্থাপন করা হয় । প্রকৃতপক্ষে ভারতবর্ষের প্রধান পাঁচটি ধ্রুপদী ধারার নৃত্যকলার মধ্যে একটি হলো মণিপুরী। আঙ্গিকের দিক থেকে কমনীয়তা ও নম্রতার জন্য অন্যান্য ধ্রুপদী নৃত্যধারা কথক, কথাকলি, ভরতনাট্যম ও ওড়িষি থেকে সহজেই আলাদা করা যায় মণিপুরীকে। বর্তমানে বাঙালীসহ ভারত বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতি সম্প্রদায়ের নৃত্যশিল্পী মণিপুরী নৃত্যকে পেশা হিসাবে গ্রহন করেছেন। ভবিষ্যতে মণিপুরী নৃত্য নিয়ে বিস্তারিত পোষ্ট দেবার ইচ্ছা রইলো।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০০৮ রাত ১১:৪৬
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×