গভীর সমুদ্রে চারদিকে শুধু পানি থৈ থৈ, কোনো কূলকিনারা নেই, পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ চেনার কোনোই উপায় নেই, নাবিকরা দিশেহারা, কোনটা তাদের সঠিক পথ_ সেই ভয়ানক বিপদ মুহূর্তে নাবিকদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে কুতুবদিয়া বাতিঘর। বিপদের বাতি হিসেবে কুতুবদিয়া বাতিঘরটি বিগত কয়েক শত বছর ধরে জ্বলছে, মাঝে মধ্যে নিভছে, আবার জ্বলছে। এখন আবার নিভে গেছে। এ বাতিঘরটি এখন শুধু কালের সাক্ষী হয়ে আছে, এটি নিয়মিত জ্বলে না।
সমুদ্রপথে জাহাজ চলাচলে সুবিধার জন্য ব্রিটিশরা এ বাতিঘর নির্মাণ করেছিল। দূর থেকে এই বাতি দেখে জাহাজের নাবিকরা পথভ্রান্ত না হয়ে সঠিক পথ নির্ণয় করতে পারবেন সেটিই ছিল নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য। সুতরাং এ বাতিঘর শুধু কালের সাক্ষী নয়, সমুদ্রপথে সঠিক পথে চলাচলের একটি অতি জরুরি বিষয়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে এ বাতিঘরটির অবস্থান এর ৪৫ কিলোমিটার উত্তরে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম, ৩০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গভীর সমুদ্রে সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্র। ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বাস্তবায়নাধীন সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর। এ ছাড়াও বর্তমানে কুতুবদিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ গ্যাসক্ষেত্রের সফল জরিপ কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কাজেই এ বাতিঘরটির বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে যে বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে এতে কারো দ্বিমতের কোনো অবকাশ নেই। অথচ নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও অযত্ন-অবহেলায় এই অতীব জরুরি বাতিটি নিয়মিত জ্বলছে না; নাবিকদের সমুদ্রপথে নিতান্তই কষ্ট হচ্ছে। অনেক জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ জিনিস অযত্ন-অবহেলা ও প্রকৃত নজর না দেয়ার অভাবে নষ্ট ও ধ্বংস হয়ে যাওয়ার নজির এ দেশে ভূরি ভূরি রয়েছে। সুচিকিৎসার জন্য মূল্যবান এক্স-রে, ইকোকার্ডিওগ্রাম মেশিন বহুদিন খোলা আকাশের নিচে থেকে পানিতে-রোদে নষ্ট হয়ে যাওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। কুতুবদিয়া বাতিঘরটি তেমন অবহেলার শিকারে পরিণত হয়েছে, বর্তমানে বাতিঘরের আলো জ্বলা-না জ্বলা কর্মরত কর্মচারীদের ওপর নির্ভর করছে খবরে আমরা মর্মাহত না হয়ে পারি না। অভিযোগ রয়েছে, সেখানকার কর্মচারী বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে জায়গা ও দিঘি লিজ না দিয়ে নিজেরাই ভোগ করছে। বাতিঘরে জেনারেটরের মাধ্যমে ১৫টি ব্যাটারিতে চার্জ করা হয়। ওই ব্যাটারির মাধ্যমে বাতিঘরে আলো জ্বলে। জেনারেটরের জন্য বার্ষিক ৩ হাজার ৫০০ লিটার ডিজেল বরাদ্দ থাকে। প্রায় সময় ইঞ্জিন বিকল দেখিয়ে ডিজেলগুলো বাইরে পাচার করে দেয়া হয়। লক্ষ্যণীয়, সমস্যাটি খুব বড় নয়। প্রকৃত তত্ত্বাবধানের অভাবে এমনটি ঘটছে। বাতিঘরটির রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান অভ্যন্তরীণ নৌ-বাণিজ্য অধিদফতরের। আমরা আশা করবো, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনতিবিলম্বে বাতিঘরটির প্রতি নজর দেবে এবং বাতিটি যেন নিয়মিত জ্বলে নাবিকদের পথ দেখায়, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১২