স্বাধীন পৃথিবীতে স্বাধীনতার স্বাধীন সংজ্ঞাটা কি?
আসলেই কি আমাদের স্বাধীনতার দরকার আছে? অথবা স্বাধীনতার নামে আসলে কতটুকু স্বাধীনতা আমরা ভোগ কারার সাধ্য আছে আমাদের?
চলুন আমাদের স্বপ্ন নিয়ে কথা বলি, আমরা এখন যেই স্বপ্ন দেখি ডাক্তার আর ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার, এই স্বপ্নগুলো কি সত্যিই আমাদের? আসলে এগুলো স্বপ্ন নয়, এগুলো একেকটা সময়ের 'ট্রেন্ড'। যেমন উনিশ শতকের দিকে তাকালে দেখা যায়, সে সময়ের লেখা পড়া শেখার যারাই সুযোগ পেয়েছেন তাদের অধিকাংশই নিজেদেরকে ব্যারিষ্টার হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। সে শতকের গান্ধী, থেকে শুরু করে পরবর্তী অধিকাংশ গুণী ব্যাক্তিগনকেই বিলেতে ব্যারিস্টারি পড়তে যেতে দেখা গেছে। এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে দামি 'সাবজেক্ট' হিসেবে আইনকেই ধরা হয়ে থাকে। এবং এই বিষয়ে ভর্তি হতেও সবচেয়ে বেশি মার্ক পেতে হয়।
আচ্ছা আমরা যেই পোশাক পরি, তা কি আমরা পুরোপুরি নিজের মত করে পরার স্বাধীনতা পাই। আমরা সর্বোচ্চ ডিজাইন, রং, এর বেশি হলে অন্য কোন দেশের মডেলকে অনুসরণ করতে পারি। যেমন, ২০১৫ সালে 'পাখি' তার আগে 'আনারকলি' এবং 'আসিকি 2' এর কথা বলতে পারি। তবে এগুলোর কোনটাই কি আমরা নিজেরা ঠিক করতে পারি? না আমরা এগুলো নিজেদের জন্য ব্যবহার করলেও আমাদের নিজস্ব বলে চালিয়ে দেয়ার স্বাধীনতা নেই। আসলে এগুলো আমাদেরকে কেউ ঠিক করে দিয়েছে এবং এখনো দিচ্ছে। দুদিন আগেইতো টিভিতে খবর হল, জারা নামের ফ্রান্স এর একটি ব্রান্ড লুঙ্গি দিয়ে স্কারট বানিয়েছে। সামনের ঈদে ছেলে মেয়েরা লুঙ্গি পরাকেই হয়ত তাদের ব্যাক্তিগত স্বাধীনতার বলে বসতেও পারে।
এর পরে আমরা যেই ভাষায় কথা বলি, এই ভাষাগুলো কি শুরু থেকেই এমন? নাকি আমাদের আগে কেউ এটিকে পরিবর্তন, পরিমার্জন এবং সংযোজন করে বলে গিয়েছে যে না আজ থেকে সাধু ভাষা থাক চলিত ভাষাই চলুক সব জায়গায়। দেখেননা, কাজি নজরুল আরবি ফারসি মিশিয়ে কবিতা গান লিখে গেলেন, আবার তার সমসাময়িক হিন্দু কবি-সাহিত্যিকেরা প্রমোট করলেন সংস্কৃত ভাষা। তার আগে আবার পর্তুগিজ- ইংরেজি আরো আগে আরবি, ফার্সির, তুর্কি শব্দে ভাষার সমৃদ্ধি করানো হল।
চলেন এবার খাবারের দিকে যাওয়া যাক। আচ্ছা আমরা যে খাবার স্বাধীনভাবে খাই, এই খাবারগুলোই যে আমাদের খাবার, তা আমরা কিভাবে জানি? একটু ইতিহাস ঘাঁটলেই বোঝা যায় বিরিয়ানি থেকে শুরু করে ভাত-মাছের রান্নার পদ্ধতি পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটাই বিভিন্ন 'সময়ের' প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছে। যখন মুঘলরা আসল, তারা আসল তাদের নিজেদের খাবার নিয়ে। পরে তারা সেটা এখানেই রেখে গেলো। বিরিয়ানি, জেলাপি, রসমালাই, সবি এখন আর মোঘলদের না, আমাদের। আমরা এগুলোকে নিজেদের বানিয়ে নিয়েছি।
ঠিক এভাবেই আমাদের প্রত্যেকটা অভ্যাস, চাহিদা, মোট কোথায় আমাদের ব্যক্তিত্বকে উপস্থাপন করার প্রত্যেকটি উপকরণই কেউনা কেউ আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে। তাই আমরা চাইলে ভাত-মাছ ছেড়ে চাইনিস খাওয়ার স্বাধীনতা তো দেখাতে পারবো ঠিকি কিন্তু একটি 'অভ্যাস' থেকে আরেকটি 'অভ্যাসের' মাঝে ঘোর পাক খাওয়া ছাড়া অন্য কিছু করার স্বাধীনতা আদৌ আছে কিনা তা ভাবলেই বের হয়ে আসবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:১৩