৪১১ নাম্বার রুমে হঠাৎ শ্যাম বর্ণের একজন লোক এলেন। নতুন ভর্তি হওয়া সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের কেউই তাকে চিনতে পারলোনা। নিজেই পরিচয় দিলেন, আমি রাজীব মীর। সেদিন তার মুখ থেকে নচিকেতার গানের বিশ্লেষণ শুনেই তার প্রতি আলাদা একটা আন্তরিক ভালোলাগা শুরু হয়েছিল। এরপর তার কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করতাম। তার কথা শুনতে চাইতাম। কারণ এর মাঝেই আমি তার কথার মাদকতায় আসক্ত হয়ে বসে আছি।
আমাদের ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরে লুবনা জেবিন ম্যামকে যৌন হয়রানির অভিযোগে ক্যাম্পাস উত্তাল হল। আমি তখন নতুন সাংবাদিকতা শুরু করেছি। প্রতিদিনই প্রায় এই বিষয়ে খবর করতাম। একদিন হাউজ থেকে একটি ফলোআপ নিউজ করতে বলা হল। লিড করা হবে নিউজটি। তাই লুবনা জেবিন ম্যাম, বর্ণনা ভৌমিক ম্যাম আর রাজীব মীরের স্যারের কাছে ফোন দিয়ে ইন্টার্ভিউ এর জন্য সময় চাইলাম।
রাজীব মীর স্যার একটা রেস্টুরেন্টে ডাকলেন। খাওয়াদাওয়া শেষে বললেন এখানে কথা বলে স্বস্থি পাওয়া যাবে না। চলো বাসায় যাই। আমার বাসা কাছেই। অনেক কথা হল স্যারের বাসায়। তার দৃষ্টিভঙ্গির গভীরতা দেখে মুগ্ধ হলাম সেদিন।
সেই অভিযুক্ত ছাত্রটি স্থায়ীভাবে বহিষ্কার হল। আমিও ক্যম্পাস ছাড়লাম। বিদেশ এলাম। এর পরে একদিন শুনলাম স্যারের উপর যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলা হয়েছে। পত্রিকাগুলো দুইভাগে ভাগ হয়ে গেল। মানুষগুলোও। দুর থেকে কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারলামনা এই বিষয়ে।
কয়েকমাস আগে ক্যাম্পাসের এক বড় ভাই ফেসবুকে ইনবক্স করলেন ’ আপনার দেয়া ১০ টাকায় বাঁচবে রাজীব মীরের জীবন’।
গত কাল রাতে যুবায়ের আব্দুল্লাহ ভাই নক করলেন। পরে আর কিছুই লিখতে পারলেন না। যুবায়ের ভাই স্যারকে সাইজি বলে ডাকতেন। পরদিন পত্রিকার শিরনামে দেখলাম ‘অস্ত্রপাচারের সুযোগ না দিয়ে চলে গেলেন রাজীব মীর। বুঝলাম যে, কি লিখতে গিয়ে লিখতে পারেননি যুবায়ের ভাই।
হোম পেজ স্ক্রোল করতে করতে ছাত্রদের মাঝে একটা চাপা ক্ষোভ অনুভব করলাম। এই ক্ষোভের কিছুটা রাজীব মীরের উপর, তার অকালে ঝরে যাওয়া নিয়ে, আর কিছুটা ক্ষমতার, যে ক্ষমতাগুলো রাজীব মীরকে আজকের পরিণতি দিয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৩৫