somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘজাল প্রযুক্তিঃ জানা কথা অজানা কথা

২৪ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাগলাটে ল্যারি তার বক্তব্যের ক্ষণে ক্ষণে যখন হেঁয়ালি মিশ্র প্রশ্ন ছোঁড়েন ’হোয়াট দ্য হেল ইজ ক্লাউড কম্পিউটিং’ তখন তা প্রযুক্তির গড় ব্যবহারকারী থেকে শুরু করে পেশাদার প্রযুক্তিবিদদের যেমন কৌতুহলী করে, তেমনি তথ্যপ্রযুক্তি দুনিয়ার সেরা ’ব্র্যান্ড’ প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিব্রতও করে। ইউটিউবে ল্যারি’র বক্তব্যের প্রতিটি ভিডিও’র হিট লাখ ছাড়িয়ে যায় বা ছুঁই ছুঁই করে। এমনটা হবে নাই বা কেন? ল্যারি ইলিসন তথ্যপ্রযুক্তি অভাজন কেউ তো নন। বরং ডাটাবেজ সল্যুউশন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ’ওরাকল’ এর সিইও। ল্যারির মত কৌতুক করে না হলেও একই প্রশ্ন কিন্তু আমরাও করতে পারি। কী এই মেঘজাল বা ক্লাউড কম্পিউটিং?





ক্লাউড কম্পিউটিং হচ্ছে ইন্টারনেট ভিত্তিক প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে আমরা সফটওয়্যার, ফাইল, কম্পিউটারের অন্যান্য তথ্য ব্যবহার ও শেয়ার করতে পারি। একটু সহজ দৃষ্টিকোণ থেকে মেঘজাল বা ক্লাউড হলো আন্তর্জাল বা ইন্টারনেটের ব্যবসা সফল নয়া নামকরণ। তথ্যপ্রযুক্তির অনেক রথীমহারথীরাও বলছেন যে, ক্লাউড কম্পিউটিং অনেকটা নতুন বোতলে পুরনো সুরা গেলানোর প্রচেষ্টা মাত্র। বিপনন কৌশলের কারণেই এই প্রচেষ্টা সফল হচ্ছে। যারা কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এর বিবর্তন সম্পর্কে ধারনা রাখেন, তারা বলছেন ডিস্ট্রিবিউটেড, গ্রিড, ইউটিলিটি কম্পিউটিং, ওয়েব ২·০, ক্লায়েন্ট/সার্ভার এরই সমন্বয় হলো ক্লাউড কম্পিউটিং।



ক্লাউড এর ব্যবহারকারীকে বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সার্ভিসগুলোর রিমোট এক্সেস সুবিধা প্রদান করে একটি ইন্টারফেসের মাধ্যমে। সেই অর্থে আমরা বহু আগে থেকেই ক্লাউড কম্পিউটিং সুবিধাভোগী। হটমেইল, ইয়াহু, জিমেইলের মত ওয়েবভিত্তিক ইমেইল ব্যবহারকারীদের নিজ নিজ এ্যাকাউন্ট এক্সেস করতে রিমোট লগইন করতে হয়। ই-মেইলের তথ্য কিন্তু ব্যবহারকারীর কম্পিউটারে জমা(স্টোর) থাকেনা, থাকে ই-মেইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সার্ভারে । এটি ক্লাউড কম্পিউটিংয়েরই একটি বৈশিষ্ট্য। ক্লাউড কম্পিউটিং রিমোট এক্সেসকে জনপ্রিয় করতে বেশ ভূমিকা রাখছে। লেনোভো প্রতিষ্ঠানের অনেক কর্মী, যাদের গ্রাহকের সাথে সম্মুখ সাক্ষাতের প্রয়োজনীয়তা নেই, তারা এখন বাসা (অথবা অফ-সাইট) থেকেই অফিসের কাজ সারতে পারছে রিমোট এক্সেস এর ফলে।

নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা পাওয়া না গেলেও এটা বোধগম্য যে, ক্লাউড টেকনোলজি এবং ক্লাউড সার্ভিস মিলিয়েই ক্লাউড কম্পিউটিং। ক্লাউড টেকনোলজি পিসি, সার্ভার, স্টোরেজ সিসটেম এর সমন্বয়ে একটি বড় আকারের নেটওয়ার্ক ছাড়া আর কিছুই নয়। এটি ক্লাউডের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ক্লাউড সুবিধা প্রদানকারী বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর শত শত থেকে শুরম্ন করে মিলিয়ন মিলিয়ন সার্ভার থেকে থাকে। ক্লাউড একজন গ্রাহকের গতিশীল অবস্থাতেও সেবা প্রদানে সক্ষম যদি ইন্টারনেট সুবিধাপ্রাপ্ত নেটবুক, স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে ক্লাউড এক্সেস করা হয়। অর্থ্যাৎ তারহীন নেটওয়ার্কে ক্লাউড এক্সেস করা সম্ভব।


[ছবি: মেঘজাল স্তর]

ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানিগুলো গ্রাহকের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক চাহিদা অনুযায়ি ক্লাউড সেবা দিয়ে থাকে। ক্লাউড তাৎক্ষণিক (ইন্সট্যান্ট) ব্যাকআপ, রোল-ব্যাক সুবিধা প্রদান করে ডাটাবেজে তথ্য সংরক্ষণে কোন এরর এড়াতে, যা ক্লাউড ব্যবহারের নির্ভরযোগ্যতা বাড়িয়ে তোলে। ক্লাউড সেবা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানকে নিজ ব্যবসা কেন্দ্রে প্রযুক্তিগত ইনফ্রাস্ট্রাকচার গড়ে তুলতে শ্রম, সময় এবং সর্বোপরি অর্থ ব্যয় করতে হয় না বলে নিজ ব্যবসায় তথ্যপ্রযুক্তিখাতে আর্থিক বিনিয়োগে বিশাল সাশ্রয় ঘটে। এমনকি ব্যবসায়িক স্থান পরিবর্তনে আইটি বিভাগ বা সার্ভার বা ডাটা সেন্টার স্থানান্তরের আর্থিক ঝক্কিও পোহাতে হয় না।



ক্লাউড সার্ভিসগুলো লিনাক্স, ম্যাক ও উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে স্বাচ্ছন্দে কাজ করতে সক্ষম। সাধারণত যে সকল ক্লাউড সেবাগুলো প্রদান করা হয় তা হলো – সফটওয়্যার এ্যাজ এ সার্ভিস (SaaS), পস্নাটফর্ম এ্যাজ এ সার্ভিস(PaaS), ইনফ্রাস্ট্রাকচার এ্যাজ এ সার্ভিস(IaaS)। মেঘজালকেও অবশ্য ভিন্ন ভিন্ন মেঘে ভাগ করা হয়েছে- পাবলিক ক্লাউড, কম্যুনিটি ক্লাউড, হাইব্রিড ক্লাউড ও প্রাইভেট ক্লাউড। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সেবা চাহিদার মিল ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার শেয়ারের পরিকল্পনা কম্যুনিটি ক্লাউডের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব। প্রাইভেট ক্লাউড অবশ্য গ্রাহকের চাহিদার নিজস্বতা যেমন- সিকিউরিটি, সার্ভিস কোয়ালিটি, মাথায় রেখে করা হয়। হাইব্রিড ক্লাউড সাধারণত পাবলিক আর প্রাইভেট ক্লাউডের সমন্বয়ে তৈরী হয়, যেখানে পাবলিক ক্লাউড সার্ভিসগুলো সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্যবহারকারী বা বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের জন্য উন্মুক্ত।

জনপ্রিয় ক্লাউড সার্ভিসের মধ্যে রয়েছে, (১) ওয়েব এপ্লিকেশন এক্সেস। ইয়াহু, জিমেইল, হটমেইল এই সার্ভিসের উদাহরণ। (২) ভার্চুয়াল ডাটা সেন্টার। আইবিএম এর ব্লু ক্লাউড কমপিউটিং ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ডাটা সেন্টার এক্সেস সুবিধা দিয়ে থাকে। (৩) রিমোট কমপিউটিং। আমাজনের ইলাস্টিক ক্লাউড কমপিউটিং (ইসিটু) সর্বপ্রথম রিমোট ক্লাউড কমপিউটিং সেবা প্রদান করে। (৪) ই-গভর্নেন্স। ক্লাউড কমপিউটিং নির্ভর ই-গভর্নেন্স পদ্ধতি রিসোর্স শেয়ারিংকে বাড়িয়ে তোলে। ফলে ’পেপার লেস’ কাজের চর্চাকেও বাড়িয়ে তোলা যায়। (৫) ই-লার্নিং। দূরশিক্ষণের ক্ষেত্রে ক্লাউড পদ্ধতি শিক্ষার্থী ও বিদ্যাপিঠকে প্রযুক্তির আধুনিক রূপে সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে সক্ষম।

এখন পর্যন্ত ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডার তালিকায় আমাজন, গুগল, মাইক্রোসফট বেশ জনপ্রিয়। অপর দিকে ল্যারি যত যাই বলুক না কেন মেঘের রাজ্যে ওরাকলের পদচারণা কিন্তু বেশ জোরেশোরেই। হালেই তারা প্রকাশ করেছে ওরাকল সার্টিফায়েড প্রাইভেট ক্লাউড ইনফ্রাস্ট্রাকচার।

যেহেতু একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে তার সকল গোপন তথ্য অবলীলায় তুলে দিতে হচ্ছে ক্লাউড সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের হাতে, তাই ক্লাউড সেবা প্রদান ও গ্রহণকারীর মধ্যে ব্যবসায়িক ’বিশ্বাস’ একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। সাধারণত এই দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যে এই টেন্যান্সি এগ্রিমেন্ট সম্পন্ন করে থাকে। টেন্যান্সি এগ্রিমেন্ট যে কেবল গ্রাহক বা ব্যবহারকারীকেই আধিপত্য দেয় তা নয়, বরং ক্লাউড সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানও এই চুক্তি দেখিয়ে প্রয়োজনে সেবা প্রদান স্থগিত ও বাতিল করতে পারে। সাম্প্রতিককালে উইকিলিকস ও আমাজনের ঘটনাটি থেকে উদাহরণ টানা যায়। যদিও সবাই দাবি করে থাকে আমাজন মূলত আমেরিকার চাপে ইউকিলিকস এর আমাজন সার্ভার ব্যবহার সুবিধা বাতিল করেছে, আমাজন ওয়েব সার্ভিস (এডব্লিউএস) অবশ্য নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগ এনেছিল উইকিলিকস এর বিরুদ্ধে।

ক্লাউডকে কেউ কেউ ’ননসেন্স’ বললেও ইন্টারনেট ব্যবহার ও ইন্টারনেট নির্ভরতায় ভিন্নতা এনেছে ক্লাউড। ক্লাউডের জনপ্রিয়তা বোধকরি ইন্টারনেটকেও ছাপিয়ে উঠেছে। যদি অদূর ভবিষ্যতে ইন্টারনেট শব্দটি অপ্রচলিত হয়ে ক্লাউড শব্দের অহরহ প্রচলন শোনা যায়, তো অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না অন্তত!

***
লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিল: সি-নিউজ, জুলাই ২০১১
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:৩১
১৪টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×