somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীল উষ্ণতম রঙ Blue Is The Warmest Colour

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ শনিবার দুপুরে অটোয়া ডাউনটাওনে বাইটাওন সিনেমা হলে দেখলাম ব্লু ইজ দ্যা ওয়ার্মেষ্ট কালার। তিন ঘন্টা দৈর্ঘের ফ্রেঞ্চ সিনেমা। দুই ফরাসী সমকামী তরুনীর প্রেমের মানবিক গল্প। ছবিটি এ বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার গোল্ডেন পাম ও একই উৎসবে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফিল্ম ক্রিটিক্স ফিপ্রেসি পুরস্কার অর্জন করেছে। জুলি মারোহর গ্রাফিক উপন্যাস ব্লু এঞ্জেল অবলম্বনে চিত্রনাট্য করেছেন তিউনেশিয়া জন্ম নেয়া ফরাসী পরিচালক আবদেললতিফ কেচিচে। ছবির প্রধান দুই অভিনেত্রী আদেল এক্সারসিপুলোস ও লেয়া সিঁদু। কান ইতিহাসে প্রথম বারের মত একই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ছবির পরিচালকের সাথে যুগ্ম ভাবে কান চলচ্চিত্র উৎসবের সর্ব্বোচ্চ সন্মান পাম দ্য'অর বা গোল্ডেন পাম পুরস্কারে ভুষিত হয়েছেন এই দুই অভিনেত্রী। কান এর পুরস্কার অনুষ্ঠানে এই ছবি ও দুই অভিনেত্রীর অভিনয় সম্পর্কে জুরি প্রধান স্টিভেন স্পিলবার্গে আবেগী বক্তব্য দিয়েছিলেন।



হাইস্কুলে পড়ুয়া ১৭ বছরের আদেল আর চারুকলার ছাত্রী ২৭ বছর বয়ষ্ক এমার প্রেমে পড়া, সম্পর্ক, বিচ্ছেদ ও জীবন বোধের গল্প ব্লু ইজ দ্যা ওয়ার্মেস্ট কালার। আদেল এই সময়ে এক আদর্শবাদী তরুনী। ফ্রান্সের পথে নেমে সে শিক্ষাখাতে সরকারী বরাদ্দ কমানোর প্রতিবাদ করে। স্লোগান দেয় দৃপ্ত কন্ঠে। ইংরেজী ও ফরাসি সাহিত্য যার প্রিয় বিষয়। জীবনের লক্ষ্য, পড়াশুনা শেষ করে শিক্ষকতা করবে সে। সতেরো বছরের তরুনী আদেল মা, বাবার সাথে ফ্রান্সের লিলে শহরে থাকে। স্কুলের বন্ধুরা খুনসুটি করে স্কুলেরই এক ছেলে আদেলের প্রতি আগ্রহী চোখে তাকায়। স্কুলের পথে বাসে তাদের পরিচয় প্রেম এবং প্রেম পরবর্তী শারীরিক সম্পর্ক। আদেল ঠিক ওর স্কুলের বন্ধুদের মতো শরীর-সম্পর্ক ইত্যাদি নিয়ে কথায় তেমন মুখর নয় বরং লাজুক। ছেলেটির সাথে সম্পর্ক ঠিক বুঝতে পারে না আদেল। তেমন কোন আকর্ষণও অনুভব করেনা সে এই ছেলেটির জন্য। আবার কাউকে খুঁজেও পেতে মন চায় তার।


একবার স্কুল থেকে বাড়ী ফেরার পথে নীল চুলের এক টমবয় মেয়েকে তার সঙ্গিনীর সাথে গলাগলি করে হেটে যেতে যেতে তাকিয়ে ছিল সে। হাটতে হাটতে কেমন করে যেনো ফিরে তাকিয়ে পা জমে গিয়েছিল ওর। সেই নীল চুলের মেয়েও তাকিয়ে ছিল কেমন! আদেলের সাথে ছেলেটির সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়। অবুঝ মনটা কষ্টে ভরে উঠলে এক গে সহপাঠি ওকে শান্তনা দেয়। অন্নান্য বন্ধুদের স্কুলের রকে খিস্তি আলাপ এড়িয়ে আদেল তার এই গে বন্ধুটির সাথে একটা গে নাইট ক্লাবে গিয়ে হাজির হয়। ক্লাবের অদ্ভুত উটক পরিবেশ তার ভালো লাগে না বেরিয়ে পরে সে একাকী। হঠাৎ দেখা হয়ে যায় নীল চুলের সেই মানুষটির সাথে। নীল চুলের মেয়েটি এমা। আদেল কে চিনতে পেরে জিজ্ঞেস করে এই অপরিচিত যায়গায় আদেল কেন এল? এমার সাথে কথা বলতে আদেলের ভালো লাগে। ফোন নাম্বার দেয় আদেল এমাকে। অনুরোধের মত করে জানতে চায় সে কি এমার ফোন কল পাবে!


এর পর এ ছবির গল্প এগিয়ে যায় অদ্ভুত আবেগ আর অনুভবে। চিন্তাভাবনায়, পছন্দেঅপছন্দে, এমন কি খাবার অভ্যেসেও সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর দুই মানুষ। এক জন স্পেগেটি মিট সস তো অন্য জন শামুক ঝিনুক সী-ফুড। এমার মা ওর আর্টিস্ট বাবাকে ছেড়ে অন্য একজন কে বিয়ে করেছেন। এমাদের মজার সংসারে সমকামিতাকে তারা খোলা মনে নিতে পারেন। এ পরিবারের জীবন বোধ অনেক উদার। অপর দিকে আদেল এর বাবা, মা'র জানেন এমার কাছে আদেল দর্শন শিখছে। দর্শনে আদেলের গ্রেডও ভালো হচ্ছে ইদানিং, এ নিয়ে আদেলের মা/ বাবা দারুন খুশী। আদেলের বৈসয়িক বাবা এমার কাছে জানতে চান আর্ট কালচার বাড়তি যোগ্যতা বা সখ হিসেবে ভালো কিন্তু জীবন চলতে গেলে বিল পে করা যায় এমন চাকরীবাকরী ভবিষ্যত পরিকল্পনা থাকা চাই। এমা আদেলের সম্পর্কের কথা আদেলের প্রথাগত ধ্যান ধারনার বাবা, মার কাছে ওরা গোপন রাখে। জীবন যাপনে এমন বিপরীত মেরুর অবস্থানের কারনেই হয়ত মানুষের প্রতি মানুষ এমন তীব্র ভাবে আকর্ষিত হয়। একি কেবলি এক আকর্ষন! বাদবাকী জীবনের যেই অন্নান্য যাপন সেখানে কি এই ভীন্ন মেরু কখনো একে অন্যের ঠিক কাছাকাছি হতে পারে? এমার চুলের নীল রঙ সুখের এক মোটিফ হয়ে অদ্ভুত ভাবে ফিরে এসেছে ছবিতে বারে বারে। ভালোবাসার উষ্ণতা বোঝাতে দুঃখের নীল রঙয়ের ব্যাবহার জীবন বৈপরিত্যের অদ্ভুত এক দোতনা। এমার ছবির মডেল হয় আদেল। সময় গড়ায়। আদেল, এমার যাপিত জীবন চলে, এমার ডাই করা চুলের নীল রঙ ফিকে হয়ে যায়। জীবনের সব কিছুইতো আর মধুময় হয় না। একসময় রঙের প্রলেপ উঠে গেলে ধুসর হয়ে যায় সব।


এই ছবিটি আমার প্রিয় ছবির তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বাকী জীবনের জন্য। শুধু এই কারনে নয় যে এই ছবিতে প্রায় সাড়ে সাত মিনিট দৈর্ঘের পর্দা ঝলসানো সেক্স সিন অছে। যা নিয়ে সুধী ও অসুধী মহলের চরম সমালোচনাও রয়েছে। এই ছবিটি আমার অন্তরের অন্তস্থলে গেথে রইবে কারন শেষ পর্য্যন্ত এই সিনেমাটি মানুষের মানবিক সম্পর্কের এক গল্পই বলে। স্নেহ ভালোবাসায়, প্রেম অপ্রেমে নারী পুরুষ নয় সব কিছু ছাপিয়ে আমি মানুষ আর মানুষের আবেগ খুজে পাই।


ছবি দেখে আমি ভীষন ভাবে আলোড়িত। নিজেকে বরাবরই চলচ্চিত্রের ছাত্র হিসেবে বিবেচনা করি। তাই ছবি দেখলে আলোড়িত হলে সেটা নিয়ে রীতিমত নিজের সাথে নিজের পাঠ চক্র শুরু হয়ে যায় আমার। আজ ও তাই হলো। এই ছবিটা গল্পকে নিয়ে দেখতে পারবোনা আঁচ করে আর মেয়েকে নিয়ে যাই নি। তবে বাড়ী ফিরে যথারীতি মেয়েরে সাথে কিছুটা শেয়ার করেছি। ফিল্মের ছাত্রী মেয়ে হয়তো কোন এক সময় ছবিটা দেখে নেবে। এখানে একা একা আর কারো সাথে ছবির আলাপ করার নেই। এত সুন্দর একটা ছবি দেখে একাকী হাতড়ে বেড়াচ্ছি ইন্টারনেট। করে ফেলছি ছবি সম্পর্কিত যতো অনুসন্ধান।

দুঃখের রঙ নীল। কেমন করে নীলও হয়ে ওঠে উষ্ণতম রঙ? জীবনের এই চরম বৈপরিত্যই বুঝি জীবনের প্রতি জীবনের পরম আকর্ষণ!
La vie d'Adèle. Viva La Cinema!

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:০১
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×