somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্ন উড়াল দিন

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
"ঝিঁঙ্গে বেঁচো পাঁচ ছিকেতে
হাজার টাকায় সোনা
বন্ধু তোমার লাল টুকটুকে স্বপ্ন বেচনা।’
- প্রতুল মুখোপাধ্যায়


আশির দশকের মাঝামাঝি আমরা ছিলাম একদল উচ্ছন্নে যাওয়া পোলাপান। উচ্চ মাধ্যমিকের পরের বন্ধুত্ব, কেউ কারো বাপ দাদার ঠায়-ঠিকানা জানি না। আমরা তখন ফার্মগেইট ছেড়ে শাহাবাগ, কলতা বাজার ছেড়ে শাহাবাগ, মতিঝিল কলোনী ছেড়ে শাহাবাগ, এলিফেন্ট রোড আর ধানমন্ডি ছেড়ে দিনে দশবার নীলক্ষেত, আজিমপুর, চানখার পুল চক্কর মেরে মেরে শাহাবাগ। সে সময় চানখারপুল মোড়ের মাঝখানটায় ট্রাফিক পুলিশ দাড়াবার জন্য একটা ছোট্ট গোল চক্কর ছিল। চানখারপুল রাস্তায় ঢুকতেই বাহাতে আমেনা ড্রাগ হাউস বলে একটা ঔষধের দোকান ছিল। তখন দেশে শুধু মাত্র একটি টিভি চ্যানেল ছিল। মহিলা সমিতি আর গাইড হাউজে প্রতি সন্ধ্যায় নাটক হতো। গ্যাসের ট্যাবলেট এন্টাসিড সাইজের ৫ টাকা দিয়ে একটা ট্যাবলেট পাওয়া যেত নাম ম্যানড্রেক্স। শাহাবাগ মার্কেটের শেষ দোকানটায় সুটকেস আর চামড়ার ব্যাগ বিক্রি হতো, পিজির বিল্ডিং এর গা ঘেষে একটা ছাপড়া মত চা দোকান ছিল, আজিজ মার্কেটের পুরো যায়গাটা জুড়ে একটা ডোবার মত ছিল, পাবলিক লাইব্রেরীতে নান্নুর ক্যান্টিনটাও ছিল আর ছিল চারুকলার উল্টো দিকে মোল্লা চাচার দোকান। আমাদের সেই উচ্ছন্নে যাওয়া পোলাপান কারোই কষ্ট একাউন্টিং পড়তে ভালো লাগত না। ভালো লাগত না বিজনেস’ল আর স্টাটিসটিক্স এর ক্লাশ! মনে মনে আমরা তখন খুঁজতাম একটা কবিতার ইশকুল, গানের ইশকুল, সিনেমার ইশকুল! চানখার পুল থেকে ঘুরে এসে আমরা যেনো আরো কোন কোন ইশকুল খুঁজতাম, কি কি হবার স্বপ্ন দেখতাম... রঙচটা জিন্স, পুরোনো ক্যামেরা, তাঁর ছেড়া গিটার হাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে প্লেন উড়ে কই যায় কোন দিন তা ভেবেছিলাম কিনা মনে নেই। ঢাকা শহরে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়ানো সেই ভ্যাগাবন্ড গুলো কখন কিভাবে যেনো একে একে উড়াল দিল সব! কেউ কেউ তো সেই উড়ালে একেবারে পরপারে।

আমাদের সেই দলের এক বন্ধু গিটার কাধে ঘুরে বেড়াত রক গায়ক হবার স্বপ্ন নিয়ে। দিনের মাঝে দশবার ঝগড়া হতো, যার সাথে আমার কোন কিছুতেই মিলতনা অথচ আমরা দল বেধে ঘুলে বেড়াতাম দিনমান। ক'দিন আগে জাঙ্ক মেসেজ বক্সে অদ্ভুত ইংরেজীতে আমার ফোন নাম্বার চেয়ে একটা ম্যাসেজ এলো। দেখি, আমার সেই বন্ধুটি এখন দক্ষিন আফ্রিকায় স্থানীয় ভাষার গানের গীতিকার, সুরকার, শিল্পী! ওর গান শহরের ক্লাবে, রেডিওতে দিনরাত বাজে। গায়ক হবার স্বপ্ন পুরন হয়েছে তার সুদূর দক্ষিন আফ্রিকার জোহানেসবার্গ শহরে। গত পরশু ফোনে আমাদের কথা আর ফুরায় না। ২৬ বছর যার সাথে আমার আর কোন যোগাযোগ নেই, জাঙ্ক মেসেজর লিংন্ক ধরে আমার সেই তারছেড়া বন্ধুটির স্বপ্ন পুরনের খবর পড়ি, যে গানের মাথামুন্ডু কিছু বুঝিনা সেই গান শুনে চোখ ঝাপসা হয়ে গেলে নিজে নিজেই হাসি। ইন বক্সে বন্ধুটিকে আমি লিখে জানাই,
'Dosto, tuito finally singer hoya gachos mama! That is what you wanted to be all your life. Glad to see that you are rocking mama!'
উত্তরে বন্ধু আমাকে লিখে,
'tumer mama pagla dowell akhon kobita lekhe ...gun lekhe ..ah sob tumer jonno ..tume oke shekheocho kobita lekhte ..gun lekhte ...crying ..manushe ke valo bashte ..tumer mama akhon south africa hiphop singer ..pray 4 him'

বন্ধুটি আমাকে ওর গাওয়া গানের লিংন্ক পাঠায় (Click This Link), যে গানের ছাতামাথা আমি তেমন বুঝি না, এই গানকে রক বলে না হিপ্হপ্ বলে তাও জানিনা কেবল শুনতে থাকি। আমার চোখ বেয়ে জল গড়ায়, কেবল উচ্ছনে যাওয়া দিন গুলোকে মনে পরতে থাকে আমার...

১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×