somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইনু বললেন , জে. জিয়া ছিল জাতীয় বেঈমান

১২ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তাহের হত্যার বিচার : আদালতে ইনু ও জিয়াউদ্দিন

জিয়ার ক্ষমতা চ্যালেঞ্জকারী সবাইকেই হত্যা করা হয়


জাহিদুল ইসলাম :

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা যারাই চ্যালেঞ্জ করেছিল, তাদেরই হত্যা করা হয়। ক্ষমতা কুক্ষিগত ও পাকাপোক্ত করতে জিয়া শত শত মুক্তিযোদ্ধা ও সেনা সদস্যদের হত্যা করেছিলেন। তিনি রাজাকারদের পুনর্বাসনসহ স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত স্থান ধ্বংস করেছিলেন। জেনেভা কনভেনশন বা দেশের আইন লঙ্ঘন করে গোপন বিচারের মাধ্যমে তিনি এসব হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করেন। জিয়া ও আবু সাদাত মোঃ সায়েম সেসব বিচারের অধিকাংশ নথিই ধ্বংস করেছেন বলে এখন তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

সেক্টর কমান্ডার ও বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল এম এ তাহেরের সঙ্গে গোপন বিচারে দণ্ডপ্রাপ্ত মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু হাইকোর্টের আহ্বানে সাড়া দিয়ে গতকাল আদালতে হাজির হয়ে এসব কথা বলেন। সামরিক আদালতে গোপন বিচারের মাধ্যমে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের রিটের শুনানিকালে এসব কথা বলেন তারা। বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মোঃ জাকির হোসেনকে নিয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চে গতকাল মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

এ রিটের গত সোমবারের শুনানিকালে আদালত ওই বিচারে দণ্ডিত জীবিতদের স্বপ্রণোদিত হয়ে বক্তব্য দেয়ার আহ্বান জানান। সে অনুযায়ী ইনু ও জিয়াউদ্দিন আদালতে হাজির হয়ে সেই সময়ের সার্বিক অবস্থা, কর্নেল তাহেরের ফাঁসি কার্যকর করার কারণ ও ফাঁসির বর্ণনা দেন।

১৯৭৫ সালের ২০ আগস্ট সামরিক আইন জারি এবং ১৪ জুন আরেকটি সামরিক আইন আদেশ জারি করে তাহেরের গোপন বিচারের জন্য সামরিক আইন আদালত গঠন করা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এ আদালত স্থাপন করে ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই তাহেরসহ অন্যদের গোপন বিচার সম্পন্ন করা হয়। বিচার শেষে কর্নেল তাহেরসহ ১৬ জনকে সাজা দেয়া হয়। এ রায় ঘোষণার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

রিটের পক্ষে ড. শাহদীন মালিক এবং রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান শুনানি পরিচালনা করেন।

হাসানুল হক ইনু আদালতে বলেন, ১৯৭৭ সালে জেনারেল জিয়া ১৩টি সামরিক আইন জারি করেন। ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে জেনারেল জিয়া সে সময় ৮৯৬ জন সেনা সদস্যের ফাঁসি দেন এবং হাজার হাজার সেনা সদস্যের সাজা দেয়া হয়। দুই হাজারেরও বেশি সেনা সদস্য নিখোঁজ হন। এখন পর্যন্ত তাদের পরিবার তাদের পরিণতির বিষয়ে কিছু জানে না। ওই সময় রাত ১২টার পর থেকে শুরু হয়ে সারা রাত চলতো ফাঁসি দেয়ার কাজ। কারা অভ্যন্তরে প্রতি রাতে ৩০ থেকে ৫০ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হতো। এ সময় আদালত বলেন, জিয়া একজন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন এবং ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। কিন্তু ৭৫ পরবর্তী সময়ে তিনি রাজাকারদের পুনর্বাসন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান ধ্বংসসহ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের মতো আচরণ কেন করলেন? এর জবাবে ইনু বলেন, কর্নেল তাহের ও জাসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে ফিরে যেতে চেয়েছিল। এ কারণে জিয়া জাসদ ও কর্নেল তাহেরকে বাধা মনে করেছিল। ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে এ বিষয়টিকে রাজনৈতিক বাধা হিসেবে দেখেছিল। তাই জিয়া ওইসব কাজ করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম মীর জাফর ছিলেন, মীর জাফর আলী খান। দ্বিতীয় মীর জাফর মোশতাক এবং তৃতীয় জিয়া বলেও মন্তব্য করেন ইনু।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, ওই বিচারের মাধ্যমে আমাদের সম্মান হরণ করা হয়। সেই সম্মান পুনরুদ্ধার ও ওই বিচার অবৈধ প্রমাণ করার জন্য আমরা আদালতে এসেছি। এ বিচারের পর দোষীদের বিচারের দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, জিয়া ও সায়েম ওইসব বিচারের অধিকাংশ নথি ধ্বংস করেছেন। ফলে এখন সেসব নথি খুঁজে পাচ্ছে না সরকার।

আদালতে মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন ওই গোপন বিচার ও কর্নেল তাহেরের ফাঁসির মর্মস্পর্শী বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, রোমান কৃতদাসদের খাঁচায় বন্দী করে রোমান লর্ডরা যেভাবে বিচার করতো, ঠিক সেভাবে আমাদের বিচার করা হয়। ওই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান কর্নেল ইউসুফ হায়দার একজন রাজাকার ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার মিশন নিয়ে জেনারেল জিয়া গোপন আদালতে গণবিচার (মব ট্রায়াল) করেছেন। তিনি ছিলেন উচ্চাভিলাষী। এ উচ্চাভিলাষ চরিতার্থের জন্য মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন থেকেই কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন জিয়া। তিনি কখনো সম্মুখ সমরে অংশ নেননি। জেনেভা কনভেনশন ও দেশের আইন লঙ্ঘন করে শত শত মানুষ হত্যা করেছেন তিনি। অনুমোদনের জন্য জেনারেলদের মিটিংয়ে ওই গোপন বিচারের রায় উপস্থাপন করেন জিয়া। রায়ে ৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ফাঁসি দেয়ার কথা বলা হলে জেনারেল মঞ্জুর প্রতিবাদ করেন। তখন রাগ করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় জিয়া বলেন, আমি কর্নেল তাহেরের বিষয়ে কোনো কথা শুনতে চাই না। তিনি বলেন, জিয়া মূলত তিনটি কারণে তাহেরকে হত্যা করেন। প্রথম কারণ, তাহের কনোনিয়াল আর্মির পরিবর্তে দেশে একটি উৎপাদনমুখী (প্রডাক্টিভ) আর্মি গড়তে চেয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, আর্মির পেশাদারিত্ব রক্ষার জন্য ক্ষমতার বাইরে রাখতে চেয়েছিলেন। তৃতীয়ত, ৭ নভেম্বরের পর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সবাইকে নিয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠন করতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, এসব ইচ্ছা যৌক্তিক হওয়ায় কর্নেল তাহেরের জনপ্রিয়তা ছিল। জিয়া তার ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করতে হত্যাযজ্ঞ চালান বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি জিয়ার মরণোত্তর বিচার দাবি করে বলেন, কেউ যেন জিয়ার মতো দেশকে নিজের বাবার সম্পত্তি মনে করতে না পারে এ জন্য তার বিচার করা প্রয়োজন। জাতীয় সংসদ চাইলে এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে।

১৯৭৬ সালের ১৬ নম্বর মার্শাল ল’ রেগুলেশন ও গোপন বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কর্নেল তাহেরের স্ত্রী লুৎফা তাহের, ভাই ফ্লাইট সার্জেন্ট আবু ইউসুফ খানের (বীরবিক্রম) স্ত্রী ফাতেমা ইউসুফ ও অপর ভাই ড. আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে গত ২৩ আগস্ট হাইকোর্টে রিট কারেন। ‘এ আইন এবং আইনের অধীনে গঠিত বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনাল ও প্রথম মামলার রায়কে কেন বেআইনি ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না’ তার কারণ জানতে চেয়ে ওই দিন রুল জারি করেন হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা কর্তৃপক্ষ এ নথি খুঁজে না পাওয়ার কথা জানালে গত ২ ডিসেম্বর আদালত নথি তলবের আদেশ বাতিল (রিভোক) করে রুল শুনানির উদ্যোগ নিতে বলেন। গতকাল এ রুলের শুনানি শুরু হয়।

১৯৭৫ সালের ২৪ নভেম্বর কর্নেল তাহেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ভোরের কাগজ ** ১২ জানুয়ারি ২০১১



১৯টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×