somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নূরজাহান সিরাজীর তিরোধান ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার / শাহীন রেজা নূর

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নূরজাহান সিরাজীর তিরোধান ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার

শাহীন রেজা নূর


আমাদের মা বেগম নূরজাহান সিরাজী সবাইকে শোকসাগরে ভাসিয়ে ২১ ডিসেম্বর গভীর রাতে ইহলোক ত্যাগ করলেন। মাত্র এগারো বছরের এক পল্লীবালা আজ থেকে বাষট্টি বছর আগে লাল চেলী পরে আমার পিতার সংসারে এসেছিলেন। আব্বা তখন কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে সদ্য বিএ পাস করেছেন। ছাত্র থাকাকালীনই তিনি দৈনিক আজাদ পত্রিকায় বার্তা বিভাগে কাজ করছিলেন। ইসলামিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের বিশিষ্ট রাজনীতিক শামসুদ্দীন মোল্লা, বিশিষ্ট সাংবাদিক আসফউদদৌলা রেজা, সে সময়ের ছাত্রনেতা এম এ সালেহ, ইপিআইডিসির সাবেক চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন সাহেব, সাবেক ডিআইজি মান্নান বখত, জগন্নাথ কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বোরহান উদ্দিন প্রমুখ ছিলেন আব্বার সহপাঠী। সে সব প্রসঙ্গ থাক। বলছিলাম মায়ের কথা। আমাদের মায়ের কথা। সে যুগের খুবই সাধারণ নিয়ম মোতাবেক মাত্র এগারো বছর বয়সে আমাদের মা আব্বার সঙ্গে সংসার পাততে এসেছিলেন। সেদিনের সেই লাজ-রক্তিম নব পরিণীতা বধূ পঞ্চাশ ও ষাট দশকে সংসারের নানান ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে অর্জিত অভিজ্ঞতার বলে পর্যায়ক্রমে এক অনন্য সংগ্রামী নারী হয়ে ওঠেন। মাত্র তের বছর বয়সে প্রথম সন্তান শামীম রেজা নূরকে জন্ম দেন মা। অতঃপর এক/দেড় বা দু’বছরের ব্যবধানে আরও সাত সন্তান শাহীন রেজা নূর, ফাহীন রেজা নূর, নাসিম রেজা নূর ও সর্বকনিষ্ঠ তোহিদ রেজা নূর ভূমিষ্ঠ হয় তার কোল আলো করে। এমনিভাবে যখন এক একটি নবজাতক শিশুর মুখ দেখেন আমাদের পিতা ও মাতা ঠিক তখনই অর্থাৎ, প্রতিবারই তাদের হৃদয় আকাশের ‘চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙ্গে যায় উছলে পড়ে আলো’ আর তাদের প্রাণ একত্রে গেয়ে ওঠে ‘ও রজনীগন্ধা তোমার গন্ধ সুধা ঢালো!’ আমাদের শৈশব-স্মৃতির যে রেশ এখনও চোখের কোণে লেগে রয়েছে তা এতই মধুর আর এতই পরিপূর্ণ যে, এ জীবনে তা অমূল্য সম্পদ হয়ে আছে। আব্বা সাংবাদিক। শহীদ সোহরাওয়ার্দীর রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা ও চিন্তা-চেতনায় সর্বোতভাবে বা একনিষ্ঠভাবে সমর্পিত ছিলেন তিনি। এই মহান নেতাকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল আব্বার রাজনৈতিক মানস যা আবার রাজনীতির ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে প্রতিবিম্বিত হতে দেখা যায়। অন্যদিকে নির্ভীক ও গণমানুষের স্বার্থের প্রশ্নে আপোসহীন সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াও ছিলেন শহীদ সাহেবের আদর্শ-তাড়িত এক অকুতোভয় সেনাপতি। দৈনিক ইত্তেফাকের পাতায় পাতায় তদানীন্তন পাকিস্তানে স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকারসহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলার কাহিনী বিধৃত আছে। ওই ইতিহাস রচনায় সাংবাদিক মানিক মিয়া ও সিরাজুদ্দীন হোসেন রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণার ক্ষেত্রে সমকাতারভুক্ত করে তুলতে ইত্তেফাকের মানিক মিয়া ও সিরাজুদ্দীন হোসেনের সেদিনের সে ভূমিকার আজও কোন মূল্যায়ন হয়নি। পত্রিকাটির নিজের গরজেই এই মূল্যায়নের উদ্যোগ নেয়া উচিত ছিল, কিন্তু তা নেয়া হয়নি। কেন হয়নি তা এর মালিকরাই ভাল জানেন। অবিশ্যি, মুক্তিযুদ্ধের পর কোন সরকারই আমাদের স্বাধীনতা বা মুক্তির লড়াই বিষয়ে সত্যিকারের গবেষণার কাজে কখনই পৃষ্ঠপোষকতা করেনি, যা করেছে তা হচ্ছে কিছু তাঁবেদার বা মোসাহেব জাতীয় ব্যক্তিকে দিয়ে গোঁজামিল সৃষ্টির সর্বক্ষণিক পাঁয়তারা। ফলে ইতিহাস বিকৃতির সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছে এ দেশে।
সে যাক। নিবন্ধটি শুরু করেছিলাম সদ্যপ্রয়াত আমাদের মা বেগম নূরজাহান সিরাজীকে নিয়ে। কিন্তু ধান ভানতে শিবের গীতই হয়ে যাচ্ছে বুঝিবা! আসলে এ ক্ষেত্রে তাড়াছা উপায়ই বা কী! কেননা আমাদের মায়েরা হচ্ছেন এক একজন সফল পিতার নেপথ্য কারিগর। তাই কান টানলে যেমন মাথা আসে, ঠিক তেমনিভাবে আমাদের মা কিংবা বাবা দু’জনের যে কোন একজন সম্পর্কে বলতে বা লিখতে গেলে আপনা থেকে অন্যজন এসে সদম্ভে হাজির হয়ে যান মনের পর্দায়। আমাদের মা প্রচলিত বা আক্ষরিক অর্থে বিদূষী ছিলেন না। খুবই ‘স্বল্পশিক্ষিত’ একজন মা। কিন্তু শিক্ষার গর্বে গরীয়ান মায়েদের মতো দাম্ভিক, তথাকথিত ব্যক্তিত্বশালিনী বা নাক উঁচু মানুষ ছিলেন না তিনি। খুবই সাদাসিধা এবং সংসার ও স্বামীঅন্তপ্রাণ একজন কুশলী নির্মাতা ছিলেন। এমনি ধরনের মায়েদের সহযোগিতা, সহানুভূতি, ত্যাগ ও তিতিক্ষার কারণেই অনেক সফল পুরুষের পদভারে মুখরিত হয়েছে আমাদের চারপাশ। আমাদের মায়েদের সংসারে স্বামীরাই ছিলেন অভিভাবক এবং স্বামীর সে অভিভাবকত্ব মেনে নিয়ে একটি সুখের নীড় বাঁধার জন্য তাকে সর্বোতভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে যেতেন মা। সে যুগের মায়েদের সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্যই বুঝিবা ছিল সংসারকে শান্তির আশ্রয়স্থলে পরিণত করতে নীরবে-নিভৃতে এবং হাসিমুখে স্বীয় কর্তব্য করে যাওয়া। মা ও বাবার মধ্যে ব্যক্তিত্বের সংঘাত কিংবা সংসারে কে কত অবদান রাখছে তার রেশিও (ৎধঃরড়) নির্ণয়ের জন্য সদাউন্মূখ থাকতেন না। সন্তানের প্রতি তাদের অপত্য স্নেহ ছিল কিন্তু অন্ধবাৎসল্য ছিল না। আজকের দিনে বিশেষ করে মায়েদের দিক থেকে এই অন্ধবাৎসল্যই সংসারে অনেক অসুখ ডেকে আনছে। সত্যি বটে, আমাদের মায়েরা স্কুল কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ-ি পেরুননি, অথচ তারা কতটা স্বশিক্ষিত এবং উচ্চতর সংস্কৃতি চেতনার অধিকারী ছিলেন তা ভাবলে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে পড়তে হয়। ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’ এই প্রবাদবাক্য কোন মিথ্যে উচ্চারণ ছিল না এই বাংলাদেশে। এই বাক্য নিয়ে শোভেনিষ্ট পুরুষ কিংবা পাশ্চাত্য প্রভাবিত উইমেন লিব নেতৃবর্গকে অনেক সময় ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ বা হাসি-তামাশা করতে দেখা যায়। কিন্তু তাতে এই বাক্যের সত্যতা এতটুকুনও মলিন হয় না। কেননা এই প্রবাদটি শাশ্বত সত্য। আমাদের মা প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার গ-ি পেরুতেই স্বামীর সংসারে এসেছেন। কা--জ্ঞান, প্রখর ধী-শক্তি, সকলের প্রতি গভীর মমত্ববোধ আর স্বামী-সংসার-সন্তানদের প্রতি একনিষ্ঠতা সেই মাকে। অপরূপ সৌন্দর্য দান করেছিল। কৃত্রিমতা তাকে ছুঁতে পারেনি। নেপোলিয়ান দেশ গড়তে শিক্ষিত মায়েদের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। বলাই বাহুল্য যে, সে শিক্ষিত মা মানে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রীধারী, প্রসাধন-এডিক্ট ও এক্সিবিশনিস্ট মা নন। তিনি আমাদের মায়েদের মতো আটপৌঢ়ে, সহজ-সরল, সংস্কৃতি-মনস্ক অখ- ধৈর্যশীল ও স্বশিক্ষিত পল্লী জননীদের কথাই বলতে চেয়েছেন এ ক্ষেত্রে। আজ থেকে দু শ’ বছর আগে এই বাংলায় যখন রাস্তঘাট, বিদ্যুত-বাতি, গ্যাস এবং জীবনকে আরামদায়ক করে তোলার ব্যবস্থাদি ও সরঞ্জাম ছিল না তখন একেবারেই গ-মূর্খদের পদভারে সদাপ্রকল্পিত পাড়া গাঁয়ে কি করে বিদ্যাসাগর, মাইকেল, আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র বসু, বঙ্কিমচন্দ্র, লালন শাহ, নজরুল ইসলামদের অভ্যুদয় ঘটেছিল তা এক অপার বিস্ময় বৈ নয়! গরুও গাড়ি, নৌকা কিংবা পদযুগলই যে সময় ছিল পরিবহনের বাহন সে যুগে বাংলায় এত মনিষার জন্ম সম্ভব হয়েছিল এই সরল-সহজ, তেজোদীপ্ত, কর্তব্যনিষ্ঠ, সংগ্রামী নারীদের কারণে। বিদ্যাসাগর কিংবা মধুসূদনের মায়েদের কথা ভেবে দেখুন তো একবার! কি মহিমান্বিত ও শক্তিময়ী নারী ছিলেন তারা! আক্ষরিক অর্থেই প্রাথমিক শিক্ষায়তনের গ-ি পেরুননি তারা। কিন্তু একজন বিদ্যাসাগর বা একজন মধুসূদনকে তৈরি করতে সমস্ত শক্তি নিয়োগ করেছেন। তাদের এই ত্যেজ, স্নেহমীয় ও কল্যাণব্রতী রূপ-সুষমা তাদের এনে দিয়েছে গৌরব। মোদ্দাকথা, আক্ষরিক অর্থে এঁরা শিক্ষিত না হলেও আবহমান বাংলায় ফলগুধারার মতো বয়ে চলা সভ্যতা-সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের ছোঁয়া সর্বক্ষণই ছিল এদের হৃদয়জুড়ে। ফলে বিশেষ করে ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলায় যে মায়েদের দেখা পাই তারা বিংশ শতকের সেই গৌরব বহন করে গেছেন অনায়াসে।
আমাদের মা বেগম নূরজাহান সিরাজী বাইশ বছর সংসার করার পর একাত্তরে ঘাতক আলবদরদের হাতে স্বামী নিহত হলে বৈধব্যবরণ করেন। এরপর বলতে গেলে নাবালক ৮ সন্তানকে নিয়ে শুরু হয় তার বেঁচে থাকার সংগ্রাম। আব্বা যে রাতে অর্থাৎ, একাত্তরের দশই ডিসেম্বরের নিকষ কালো আঁধারে যখন চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেলেন তখন আমার মায়ের হাতে ছিল মাত্র পঞ্চাশটি টাকা। যে বাড়িতে ভাড়া থাকতাম তার ভাড়া তখন ৩২৫ টাকা। বিদ্যুত-গ্যাস-পানির বিল আর সন্তানদের খাওয়া-পড়াশোনা ও চিকিৎসা ব্যয় ইত্যাদি বাবদ যে অর্থের প্রয়োজন তার এক কানাকড়ি উপার্জনের কোন অবস্থাই ছিল না। দেশের বাড়িতে এমন কোন জমিজমাও ছিল না, যেখান থেকে চাল-ডাল-তেল-নুন ইত্যাদি আনা যেত। এমনি এক কঠিন অবস্থায় নিপতিত তখন তিনি। অতঃপর একাদিগ্রমে ৪১টি বছর সন্তানদের আগলে রেখেছেন পাখিরা যেমন তাদের পক্ষপুটে শাবকদের আগলে রাখে ও সমস্ত প্রকার বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে তাদের জন্য ঠোঁটে করে খাবার সংগ্রহ করে নিয়ে আসে আমাদের সেই স্বামীহারা মহীয়সী মা ঠিক তেমনিভাবে আমাদের আগলে রেখেছেন, সমস্ত প্রকার প্রাণের উত্তাপ ছড়িয়ে দিয়েছেন আমাদের জীবনে। আমাদের জীবনকে কণ্টকমুক্ত রাখতে নীলকণ্ঠের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়েছে তাকে। পিতা ও মাতা দু’জনের ভূমিকাই পালন করতে হয়েছে। বেদনা-দারিদ্র্য আর নানান প্রতিবন্ধকতা বাধার বিন্ধ্যাচলের মতো সামনে এসে দাঁড়িয়েছে কিন্তু নেপোলিয়নের মতোই দুর্জয় সাহস নিয়ে তা অতিক্রম করে গেছেন তিনি। একাত্তরে আব্বার বিষাদান্তক অপহরণ-ঘটনার পর স্বামীর ভালবাসায় সার্বক্ষণিক সিক্ত আমাদের মায়ের বেঁচে থাকাটাই যেখানে ছিল প্রায় অসম্ভব ব্যাপার সেখানে কি করে সেই অতি সাধারণ নারী সংগ্রামে-প্রত্যয়ে-দৃঢ়তায় এক অসাধারণ নারী হয়ে উঠলেন আমাদের সবার চোখের সামনে। সে সময় আজরাইল এসে তার সামনে দাঁড়ালেও তিনি যেন আজরাইলকে ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন যে, ‘তুমি এখন যাও কেননা আমি এখন যেতে পারব না। আমাকে আমার ৮ সন্তান মানুষ করতে হবে, তাদের প্রতিষ্ঠিত না করা পর্যন্ত আমার মরারও অবসর নেই। সুতরাং তুমি এখন যাও, পরে এসো।’ এক চল্লিশ বছর পর বোধ করি তা সেই অচেনা-অজানা দেশে যাবার সময় হলো। কিন্তু আমরা তো তার এমন যাওয়া চাইনি। আমরা আরও বহু বছর তার স্নেহের সুশীতল ছায়ায় অবগাহন করতে চেয়েছি।
একাত্তরের ঘাতকরা যখন এই স্বাধীন বাংলাদেশে পুনরায় তাদের জান্তব উন্মাদনা শুরু করেছে এবং দন্ত ও নখর মেলে ধরেছে প্রগতিবাদী মানুষদের সেই একাত্তরের মতোই নৃশংস-নির্মমভাবে বধ করতে, তখন আমার মা প্রতিটি মুহূর্তে বিচলিত বোধ না করে পারেননি। প্রাণপ্রিয় স্বামীর বিয়োগান্তক হত্যাকা-ের বিচার দেখে যাবার জন্য কি আকুলই না থাকতেন তিনি। আমার চোখে আর মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠত সে আকুলতা। একাত্তরের জঘন্য পৈশাচিক ঘটনার যারা কুশীলব তারা যখন সহিংস কর্মকা-ে মেতে ওঠে বা ঘাতকদের বিচারকার্য নস্যাতের জন্য হিংস্র বন্য পশুর রূপ ধারণ করে তখন আমার মা জায়নামাজে বসে চোখের পানিতে বুক ভাসান আর আল্লাহর দরবারে দু’হাত তুলে এই বলে ব্যাকুল ফরিয়াদ জানাতে থাকেন, ‘হে মহান আল্লাহ তুমিই সব করনেওয়ালা। যারা আমাকে ৪১টি বছর ধরে বিধাব করে রেখেছে যারা আমার নিষ্পাপ সন্তানদের জীবন অনিশ্চিত করে তুলতে চেয়েছে, তুমি কি তাদের শাস্তি নিশ্চিত করবে না? এই ঘাতকরা কি পার পেয়েই যাবে? নরপিশাচরা আর কতকাল আস্তিনের নাচে এমনিভাবে ছুরি নিয়ে ঘুরে বেড়াবে? হে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তুমি এ প্রতিবিধান করো, তুমি এর প্রতিকার করো’! এই মোনাজাত কবুল হবে এই বিশ্বাস পোষণ করেছেন তিনি অত্যন্ত দৃঢ়চিত্তে।
আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচার নানান হীন কৌশল দেখছি চারি ধারে। প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলটির প্রধান বেগম খালেদা জিয়া ও অন্যান্য নেতা-যেমন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা ফখরুল ইসলাম, এম কে আনোয়ার এবং তাদের স্যাঙ্গাতদের ইদানীং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে যে ধরনের মিথ্যাচার করতে দেখছি তা জাতির আশা-আকাক্সক্ষার প্রতি চরম অবমাননাস্বরূপ। তবু হীন ও মতলবি স্বার্থে তা তারা করে চলেছেন। আগামীতে আরও জোরেশোরে তা করে যাবেন এতে আর বিচিত্র কী। কেননা তাদের দলটির অভীষ্ট লক্ষ্যই হচ্ছে সেই পাকিস্তানী ধারায় কৃত্রিম রাজনীতিকে ফিরিয়ে আনা। সম্প্রতি বেগম জিয়া ভারত সফরে গিয়ে যেসব কথা বলেছেন, প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা সবই যে এক ধরনের মিথ্যা ও ধোঁকাবাজির নামান্তর এখন তা তার এবং তার দলের কর্মকা-ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। একে এক ধরনের আত্মপ্রতারণা ছাড়া আর কি বলা যাবে! তবু তাকে তা-ই করতে হবে। কেননা, যারা তাকে নেত্রী বানিয়েছে তারা বেগম জিয়ার মুখে ভারত-প্রীতির কথা শুনতে চাইবে না। আর তাদের উপেক্ষা করে ভারতপ্রেমের উদ্যোগ নিলে এর নতিজা যে তার জন্যই কত ভয়াবহ হবে তা ইতিহাসের দিকে তাকালেই আঁচ পাওয়া যায়। একাত্তরের ঘাতক-দালালদের সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতার অনন্য নজির স্থাপন করে বেগম জিয়া আদৌ ইতিহাসে নিজের কোন জায়গা করে নিতে পারবেন কি? আমার সদ্যপ্রয়াত মায়ের ঈমানের জোরের ওপর ভিত্তি করে তারস্বরে এ কথাটিই দেশবাসীকে বলতে চাই যে, না বেগম জিয়া তা পারবেন না। কেননা, মিথ্যার বিনাশ আর সত্যের জয় কেউই রুখতে পারে না-পারবে না। এটিই ইতিহাসের লিখন।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

দৈনিক জনকন্ঠ ** ৩০ ডিসেম্বর ২০১২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×