somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

লক্ষণ ভান্ডারী
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন

ঈদের চাঁদ

২৬ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঈদের চাঁদ
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

আজ রাতে চাঁদ উঠবে। ঈদের চাঁদ।
আজ সকাল থেকেই হাসান বেশ খুশিতেই আছে।
রাতে জ্বলে উঠবে আলো। নীল, রঙিন, বেগুনী ও সবুজ আলোয় ঝলমল করে উঠবে সারা বিশ্বভুবন। সমগ্র ইসলাম জাতির কাছে এই রাতের অভিজ্ঞতাই কিছু আলাদা রকমের।
হাসানের মন চায় সেও ঈদের চাঁদ দেখবে। সবকিছু পেয়েও না পাওয়ার ব্যথা যারা অনুভব করে, হাসান তাদের মধ্যে একজন। অন্ধ হলেও সে অনুভব করতে পারে। চারদিকে আলোর ছড়াছড়ি, বাজি পুড়ছে, বহুলোকের আনাগোনা। ঈদগাহের এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকে সে।
হাসান কিন্তু জন্মান্ধ ছিল না। তাকে জোর করে অন্ধ করে দিয়েছে তার আপন চাচা ও চাচী দুজনে মিলে। সে এক সকরুণ ইতিহাস। আল্লাতালার রাজত্বে যে আজও অবিচার চলছে তারই নীরব সাক্ষী হাসান নিজে। দিনটা ছিল জুম্মাবার। মসজিদের নমাজ সেরে ফেরার পথে কে বা কারা তার আব্বাজানকে খুন করে। আব্বার রক্তাক্ত লাশটা মসজিদ থেকে দূরে জমিনে পড়ে আছে।
ছোট বেলা থেকেই হাসান তার আম্মাকে হারিয়েছে। কিন্তু তার আব্বাজান আম্মার অভাবকে বুঝতে দেয় নি কোনদিন হাসানকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তার আব্বাজানকেও আজ হারাল হাসান।
কবরের নীচে যখন তার আব্বাকে রাখা হলো তখন কবরগাহের মুঠো মুঠো মাটি নিয়ে হাসান কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল—হে খোদা, দীন দুনিয়ার মালিক! দুঃখ দিয়েছো দাও। ক্ষতি নাই। কিন্তু দুঃখকে ভুলবার, কষ্টকে সহ্য করার ক্ষমতা আমায় দিও মেহেরবান।
চোখের সামনে হাসানের রঙিন আসমান কালো কালিতে কালো হয়ে গেল।
তার আপন চাচা ও চাচীরা তাকে ঠাঁই দিল না। ঘর থেকে হাসানকে ওরা বের করে দিতে চাইল। হাসান কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল— “আমায় শুধু একটুখানি ঠাঁই দিও চাচা । আমি তোমাদের সবই কাজ করে দেব। আমি চিরদিন তোমাদের কেনা গোলাম হয়ে থাকবো।”
কিন্তু ওরা তা দেয় নি। ওরা নিষ্ঠুরের মত অত্যাচার করত। কারণে অকারণে বেত্রাঘাত করত ওরা হাসান কে। তার পর অভিশপ্ত এক কালো রাত। দুটো লোহার শিক গরম করে ওরা দুজনে মিলে হাসনের চোখ দুটোকে অন্ধ করে দিল। প্রাণফাটা আর্তনাদ করে উঠল হাসান।
তার কান্না শুনে কেউ তাকে বাঁচাতে এলো না। তার আর্তকান্না সেদিন শুনেছিল তার চারপাশের ইট, কাঠ, পাথর আর ইমারতের ফাটলধরা পুরানো দেয়ালগুলো। আর সেদিন রাতের আঁধারে ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল দিলরুবা।
দিলরুবা ওর আপন চাচাতো বোন। সে বলেছিল— “তুই পালিয়ে যা হাসান। তা নইলে আমার আব্বা আর আম্মাজান তোকে মেরে ফেলবে। আর চুপিচুপি একটা কথা বলছি মনে রাখিস দুনিয়ার কাউকে কোনদিন বিশ্বাস করিস না।সে যত আপনারই হোক।এই বেইমান দুনিয়ার কেউ তোর কান্নার দাম দিতে পারবে না।”
আলো ঝলমল করা রাতে আজ হাসানের অভিশপ্ত সেই দিনটির কথা মনে পড়ে।তার চারপাশে কত লোকজনের আনাগোনা। সবার পরণে নতুন পোশাক। নতুন টুপি। আর একটু পরেই বুঝি চাঁদ উঠবে আকাশে। সেই ঈদের চাঁদ।
হাসানের চোখদুটো জলে ভরে ওঠে। হাসান কাঁদছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:১৫
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×