অজয় নদীর কাব্য
(তৃতীয় পর্ব)
এই সংখ্যাটির প্রথম প্রকাশ 25শে জানুয়ারী,2018
এই সংখ্যাটির দ্বিতীয় প্রকাশ 25শে ফেব্রুয়ারী,2018
এই সংখ্যাটির তৃতীয় প্রকাশ 25শে মার্চ,2018
অজয় নদীর ধারা-1
দিবসের শেষে শেষ অস্তরাগে
হেরি সূর্য বসে পাটে,
দিবা অবসানে অন্ধকার নামে
অজয়ের ঘাটে ঘাটে।
*** *** ***
অজয় নদীর ধারা-2
বেলা বাড়ে ধীরে ধীরে সূর্য অস্তাচলে,
পশ্চিমেতে লাল হয়ে শেষে পড়ে ঢলে।
দিবসের শেষে হেরি আলোক লুকায়,
চাঁদ ওঠে তারা ফোটে আকাশের গায়।
********
ভূমিকা
অজয় নদীর ধারা বয়ে চলেছে অবিরাম, অবিচ্ছিন্ন গতিতে। বহু ভাঙা গড়ার ইতিহাস রচিত হয়েছে অজয় নদীর তীরে। তার নীরব সাক্ষ্য হয়ে আজও অবিরত বয়ে চলে অজয় নদীর ধারা। তাই আজ আবার নব কলেবরে প্রকাশিত হলো অজয় নদীর কাব্য তৃতীয় পর্ব।
প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে বাংলা কবিতার আসরের শ্রদ্ধেয় কবিগণের লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু এবারের সংখ্যায় শুধুমাত্র আমার কবিতাই এই সংখ্যায় প্রকাশ দিলাম।
কারণ হিসাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে আমার পাতায় অন্যদের লেখা প্রকাশ দেওয়া যাবে না। তাই আশা করি শ্রদ্ধেয় কবিগণ ও সহৃদয় পাঠকগণ ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন।
কাব্যখানি সকলের ভালো লাগলে আমার শ্রম সার্থক হবে।
25শে মার্চ 2018 বিনীত কবি।
নতুন দিল্লি-110028
***************
এই সংখ্যায় যে সব কবিতা আমার আছেঃ-
(এক) অজয় নদীর ঘাটে
(দুই) গাঁয়ের অজয় নদী
(তিন) আমাদের ছোট নদী
(চার) নীল আকাশের নীচে
(পাঁচ) গাঁয়ের মাটির টান
********
(এক) অজয় নদীর ঘাটে
- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
অজয় নদীর ঘাটে বিকালের পরে,
সোনা রোদ পড়ে ঝরে নদী বালুচরে।
নীল আকাশের গায় সাদা মেঘ উড়ে,
লাল সূর্য পড়ে ঢলে পাহাড়ের চূড়ে।
শেষ খেয়া বায় মাঝি তরী এসে ভিড়ে,
পাখি সব যায় উড়ে আপনার নীড়ে।
নদীতটে তরী বাঁধা মাঝি গেছে ঘরে,
সাঁঝের আঁধার নামে অজয়ের চরে।
নদীপারে গ্রামে গ্রামে জ্বলে উঠে আলো,
আঁধারেতে নদী জল রং হয় কালো।
আকাশেতে চাঁদ উঠে জোছনা ছড়ায়,
কল কল রবে নদী বয়ে চলে যায়।
রাত কাটে ভোর হয় অজয়ের পারে,
ডাকে পাখি তরু শাখে পথের দুধারে।
********
(দুই) গাঁয়ের অজয়নদী
- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
রাঙাপথ এসে মিশে নদী কিনারায়,
গাঁয়ের অজয় নদী বয়ে চলে যায়।
পূরবে হাসিছে হেরি অরুণ তপন,
পসরা সাজায়ে লয়ে আসে যাত্রীগণ।
নদীঘাটে জমে ভিড় অজয়ের তীরে,
ডাক ছাড়ে মাঝিভাই যাত্রীদের ভিড়ে।
তরণী ভাসিল যেই অজয়ের জলে,
ভিড় ঠেলে যাত্রীগণ আসে দলে দলে।
সাদা পাল তুলে তরী ছাড়ে অবশেষে,
গায় মাঝি ভাটিয়ালি আসে সুর ভেসে।
শাল পলাশের বন অজয়ের বাঁকে,
বন শালিকের দল আসে ঝাঁকে ঝাঁকে।
অজয়ের নদীতটে পড়ে আসে বেলা,
ধীরে ধীরে সাঙ্গ হয় দিবসের খেলা।
********
(তিন) আমাদের ছোট নদী
-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
আমাদের ছোটনদী নামটি অজয়,
অজয়ের জলধারা অবিরাম বয়।
দুইকূলে ছোট গ্রাম সবুজ ছায়ায়,
অজয় আপন বেগে বয়ে চলে যায়।
দুই ধারে হেরি শাল পিয়ালের বন,
তরুশাখে পাখি ডাকে ভরে ওঠে মন।
বালুচরে শালিকেরা আসে ঝাঁকে ঝাঁকে,
দুইকূলে কাশবন অজয়ের বাঁকে।
আম কাঁঠালের বনে গলি পথ বেয়ে,
নদীঘাটে জল নিতে আসে যত মেয়ে।
নদীচরে পড়ে বেলা সূর্য্যি বসে পাটে,
সাঁঝের আঁধার নামে অজয়ের ঘাটে।
চাঁদ উঠে তারা ফুটে আকাশের গায়,
নদীজল ঝিলিমিলি করে জোছনায়।
********
(চার) নীল আকাশের নীচে
-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
নীল আকাশের নীচে,
নদীর ঘাটের কাছে,
ফুটফুটে ঐ জোছনা পড়ে ঝরে।
আকাশের বুকে তারা,
রাত জেগে দিশেহারা,
জোছনায় নদীজল ঝিকিমিকি করে।
নদীর কাছে বটের গাছে,
পাখিরা সব ঘুমিয়ে আছে,
রাতের হাওয়ায় বটের পাতা দোলে;
নির্জন রাত্রি শয্যা পেতে,
শুয়ে আছে নদীর ঘাটে,
প্রকৃতির স্নেহছায়ায়, ধরণীর কোলে।
বাউল গানের আখড়াতে,
সুর শোনা যায় একতারাতে,
বেণী মাধব গাইছে করুণ স্বরে ;
পথ চলেছে এঁকে বেঁকে,
নৌকাখানি বেঁধে রেখে,
চলে গেছে মাঝি আপন ঘরে।
নদীর পাশে শ্মশান ঘাট,
আছে পড়ে, পোড়া কাঠ,
চাঁদের আলোয় দেখতে লাগে ভালো।
অবশেষে রাত কাটে,
বনে বনে ফুল ফোটে,
দিগন্তে ফুটে ওঠে ভোরের আলো।
********
(পাঁচ) গাঁয়ের মাটির টান
-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
বাডি আমার পাথরচুড়ে,
অজয় নদীর ধারে।
সাদা বকেরা আসে উড়ে
নদীতীরে দুই পাড়ে।
আমার গাঁয়ের দক্ষিণেতে
কাঁটা কুলের বন।
রাতে সেথা শেয়াল ডাকে
শিউরে ওঠে মন।
ফুল ফোটে বনে বনে,
বিহগের কলতান।
প্রভাত পাখির কণ্ঠে শুনি
ঘুম ভাঙানোর গান।
ভাঙা পাঁচিলে আছে বসে
দেখি ময়না চড়ুই পাখি,
ভোরের বেলা আমবাগানে
উঠলো কোকিল ডাকি।
পূব গগনে সূর্য উঠেছে
ফুল ফোটে, মোরগ ডাকে।
শিশুরা পড়িছে আপন মনে,
ফেরিওয়ালারা রোজ হাঁকে।
গাঁ আমার, মাটি আমার,
এই গাঁ আমার জন্মভূমি।
এই মাটিতে লভিয়া জনম
সত্যই ধন্য হয়েছি আমি।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:৪৩