সুরা আল ইমরানের ৮১ তম আয়াতে আল্লাহ তাবারাক্তায়ালা বলেন," আর আল্লাহ যখন নবীগনের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহন করলেন যে, আমি যা কিছু তোমাদের দান করেছি কিতাব ও জ্ঞান এবং অতঃপর তোমাদের নিকট কোন রসূল আসেন তোমাদের কিতাবকে সত্য বলে দেয়ার জন্য, তখন সে রসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তার সাহায্য করবে। তিনি বললেন, ‘তোমার কি অঙ্গীকার করছো এবং এই শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহণ করে নিয়েছ? তারা বললো, ‘আমরা অঙ্গীকার করেছি’। তিনি বললেন, তাহলে এবার সাক্ষী থাক। আর আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম।
মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত আছে, হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)! আমি আমার এক কুরাইযি ইয়হুদি বন্ধুকে বলেছিলাম যে, সে যেনো আমাকে তাওরাতের সমস্ত কথা লিখে দেয়। আপনার অনুমতি পেলে আমি সেগুলো পেশ করি। একথা শুনে রাসুল (সাঃ) এঁর চেহারা মোবারক পরিবর্তিত হয়ে যায়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সাবিত (রাঃ) তখন হযরত উমর (রাঃ) কে বলেন," আপনি কি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এঁর মুখমন্ডলের অবস্থা লক্ষ্য করছেন না?" তখন উমর (রাঃ) বলেন," আল্লাহকে প্রভু রুপে, মোহাম্মাদ (সাঃ) কে রাসুল রুপে এবং ইসলামকে ধর্মরুপে আমি সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিচ্ছি।" এর ফলে রাসুলুল্লা(সাঃ)-র ক্রোধ দূরীভুত হয় এবং তিনি বলেন," যে আল্লাহর অধিকারে আমার প্রাণ রয়েছে তার শপথ! যদি হযরত মুসা (আঃ) তোমাদের মধ্যে আগমন করেন এবং তোমরা আমাকে ছেড়ে তাঁর অনুসরণ কর, তবে তোমরা সবাই পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। সমস্ত উম্মতের মধ্যে আমার অংশের উম্মত তোমরাই এবং সমস্ত নবী (আঃ) এর মধ্যে তোমাদের অংশের নবী আমি।
মুসনাদ-ই- আবু ইয়ালার মধ্যে রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন," তোমরা কিতাবধারীদেরকে কিছুই জিজ্ঞাসা করো না, তারা নিজেরাই পথভ্রষ্ট, সুতরাং কিরুপে তারা তোমাদেরকে সুপথ প্রদর্শন করবে? বরং সম্ভবত তোমরা কোন মিথ্যার সত্যতা প্রতিপাদন করবে এবং কোন সত্যকে মিথ্যা বলে দেবে। আল্লাহর শপথ! যদি তোমাদের মধ্যে হযরত মুসাও(আঃ) থাকতেন, তবে তাঁর জন্য আমার আনুগত্য ছাড়া কোন উপায় ছিলো না। কোন কোন হাদিসে রয়েছেঃ যদি হযরত মুসা (আঃ) ও হযরত ঈসা (আঃ) জিবীত থাকতেন, তবে তাঁদেরও আমার আনুগত্য ছাড়া কোন উপায় ছিলো না।
সুতরাং সাব্যস্ত হয় যে, আমাদের নবী রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সর্বশেষ নবী ও সবচেয়ে বড় ইমাম। যে কোন যুগে তিনি সবী হয়ে আসলে, তাঁর আনুগত্য স্বিকার করা সবার জন্যই কর্তব্য হতো। অর্থাৎ রাসুলে খোদা (সাঃ) এঁর আনুগত্য অনুসরণ একজন সাধারণ মানুষ তো দূর, যে কোন নবী আম্বিয়া (আঃ) এঁর জন্যও শত ভাগ প্রযোজ্য ছিলো।
এই ক্ষেত্রে আমার আলোচনার বিষয় হলো, হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে রাসুলে খোদ(সাঃ) পর্যন্ত সব নবী (আঃ)ই এক আল্লাহর বানীই প্রচার করেছেন। কোন নবী(আঃ) এর ব্যতিক্রম করেননি। তবে কেনো আল্লাহ পাক এমন একটি নির্দেশনা দিলেন? কারণ আল্লাহ তায়ালা নিজেই চেয়েছেন যে, মানুষ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এঁর মাধ্যমেই তাঁর আনুগত্য করুক। তাঁর মাধ্যমেই তাঁর সমস্ত বান্দা হেদায়েতের পথ নসীব করুন।
সুরা ইমরানের উক্ত আয়াতে বলা হয়েছে যে, তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘তোমার কি অঙ্গীকার করছো এবং এই শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহণ করে নিয়েছ? তারা বললো, ‘আমরা অঙ্গীকার করেছি’। তিনি বললেন, তাহলে এবার সাক্ষী থাক। আর আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম।" কোন নবী(আঃ) এর এই কথা বলার সাহস বা এখতিয়ার আল্লাহ দেন নাই যে, হে আল্লাহ! আমরা তো আপনার দেওয়া হুকুম আহকামই পালন করি ও পালনের নির্দেশ দেই, সুতরাং আমি কেন আমার পরে আগত রাসুলের আনুগত্য স্বিকার করতে যাবো? অর্থাৎ আমিই তো আল্লাহর সরাসরি নব্যুয়তি প্রাপ্ত একজন নবী, আমি কেনো অন্য নবীর মাধ্যমে আল্লাহর হুকুম মানতে যাবো? এমন কথা ঘুনাক্ষরেও কোন নবী আম্বিয়া (আঃ) করেননি। কারণ তাঁরা আল্লাহর তায়ালার সঠিক নির্দেশটিই এক কথা মেনে নিয়েছেন।
সুতরাং রাসুল (সাঃ) এর আনুগত্য পালনকে মাধ্যম রেখেই আল্লাহ সমগ্র বিশ্বের সকল মানুষের নাজাতের উছিলা করে রেখেছেন।
আল্লাহ বলেন, হে নবী ! আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর। আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা আলইমরান-আয়াত- ৩১)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:১১