somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্যরচনা: পুরোনো দিনের বাংলা সিনেমা

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলা সিনেমাকে নিয়ে আমরা যে যাই বলি না কেন, আমাদের অনেকেরই কিন্তু ছোটবেলার মধুর সময়গুলো কেটেছে বাংলা সিনেমা দেখে। একুশে টিভি আসার আগে বিটিভি ছিল আমাদের একমাত্র চ্যানেল । অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতাম কবে শুক্রবার আসবে। ​যদিও সব বাংলা সিনেমার কাহিনী ঘুরে ফিরে সেই ‘যে লাউ সেই কদু’ টাইপের হত, তার পরেও দেখতে খারাপ লাগতো না। আমরা সবাই জানতাম, সিনেমায় নায়ক/নায়িকা দুইজন থাকলে একজনকে শেষে মরতে হবে, এবং সেটা অবশ্যই নায়ক/নায়িকাকে বাঁচাতে গিয়ে। আসল থ্রিলারটি থাকতো গেজ করার মধ্যে কে মরবে আর কে বেঁচে থাকবে! সিনেমা যেখান থেকেই শুরু হোক না কেন, শেষ হতে হবে অবশ্যই বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে! অল্প বয়সেই বাংলা সিনেমার যে বৈশিষ্ট গুলো আমার চোখে পরেছে সেগুলো হল:

=> কারও সাথে প্রেম হওয়া প্রথম যোগ্যতা হল মারামারি জানতে হবে এবং জীবনে একবার হলেও তাকে গুন্ডাদের হাত থেকে বাঁচাতে হবে।

=> নায়ক-নায়িকাকে গান গাইতে পারতে হবে এবং বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে নাচতে জানতে হবে!

=> ভিলেনের সাঙ্গ-পাঙ্গদের গুলি করে ছাড়খার করে ফেললে সেটা আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া হয় না, কিন্তু যখন আসল গুন্ডাকে মারতে যাবেন, পুলিশের কাছে মনে হবে আপনি আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছেন!

=> কিছু কিছু সিনেমার বাজেট এতো কম যে, পরিচালক টাকার অভাবে পুলিশই রাখতেন না, নায়ক গুন্ডার চোদ্দগুষ্টি মেরে শেষ করে ফেলে, আইনের মায়রে বাপ!

=> পুলিশ যদি ঘটনাস্থলে আসতে দেরি করে, এবং নায়ক তথাকথিত ''আইন'' নিজের হাতে তুলেও ফেলে, তাতেও সমস্যা নেই, দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি তার সাজা মাফ করে দেন এবং সেক্ষেত্রে সিনেমা শেষ হয় আবার সেই কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে!

=> প্রবীর মিত্র বা আনোয়ার হোসেন সিনেমাতে হার্ট এ্যাটাকে করবে সেটা সবাই জানে, কিন্তু সেটার পর মারা যাবেন নাকি প্যারালাইজড হবেন সেটা গেজ করাতে একটা থ্রিলার ছিল ! সিনেমাতে উনারা যখন উত্তেজিত হয়ে যেতেন তখন তাদের দেখে আমারই বেশি ভয় লাগতো, কখন যেন বুকে হাত দিয়ে হার্ট এ্যাটাক করেন!

=> নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস বলেছিলেন, 'Give me blood, and I shall give you freedom!' বাংলা সিনেমার বেলায় এটা ছিল, 'Give me blood, and I shall give you love'! এই কারণে নায়ক-নায়িকার রক্তের গ্রুপ সবসময় একই থাকতে হবে এবং বেশিরভাগ প্রেমের শুরু এই রক্ত প্রদানের মাধ্যমে!

=> যেহেতু তখন ফেসবুক ছিল না তাই সাধারণত নায়কের কোন স্ট্যাটাস থাকতো না!

=> নায়িকাদের একটু ঘনিষ্টভাবে জড়িয়ে শুয়ে পরলেই সে ধরলেই তারা গর্ভবতী​ হয়ে যায়! পুরো প্রসিডিউর সম্পর্কে তখন অবশ্য তেমন ধারণা ছিল না! পরবর্তীতে সিনেমায় অশ্লিলতা শুরু হওয়ায় বিষয়টা বুঝতে পেরেছিলাম!

=> চৌধুরী সারন্যাম যাদের তারা অনেক বড়লোক এবং অহংকারী হয়ে থাকে।

=> ‘scoundrel, rascal, bastard' ছাড়া যে ইংরেজীতে আর কোন গালি থাকতে পারে সেটা আমার ধারনাও ছিল না!

=> গরীব হয়েও অনর্গল ইংরেজী বলতে পারাটা নায়িকাকে পটানো কার্যক্রমে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে!

=> ​ছুরিকাঘাতে মৃত ব্যাক্তির পেট থেকে ছুরি বের করা যাবে না, কারণ আপনি যখন সেটা বের করবেন ঠিক তখনই পুলিশ সেখানে হাজির হবে (এমনিতে তাদের আপনি খুঁজেও পাবেন না)!

=> যখন দেখবেন নায়ক বা নায়িকার বাবা-মা বা বোনকে ভিলেন তুলে কোন জঙ্গল বাড়ীতে নিয়ে যাবে এবং নায়িকার বাবার সব সম্পত্তি লিখে নিতে চাইবে তখন বুঝতে হবে, সিনেমা প্রায় শেষ পর্যায়ে!
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৫
৪২টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×