[বাচ্চাদের সাথে আরদিন ভাই]
আরদিন ভাই (তুর্কি) আমার ভাষা (ইংরেজি ) বুঝেন না , আমিও তার ভাষা (টার্কিশ) বুঝি না। দোভাষী হয়ে কাজ করছে আরদিন ভাইয়ের ৯ বছরের বাচ্চা "থাহা"। আরদিন ভাই জব করেন দুবাই অবস্থিত তুর্কি এমব্যাসিতে। একদিন নামাজ পড়তে যেয়ে পরিচয় সেই সুত্রে ইফতারের আমন্ত্রণ।
আমি আরদিন ভাইয়ের বাসায় যেতেই বাচ্চারা এসে টার্কিশ ভাষায় কিছু একটা বলছে, আরদিন ভাইয়ের স্ত্রী (আপা) এসে সালাম দিলেন এবং আমার যাওয়ার জন্য ধন্যবাদ দিয়ে কিচেনের দিকে গেলেন। আপাও ইংরেজি বুঝে না। আমাদের মাঝে কথা আদান প্রদানের জন্য "থাহাই" একমাত্র ভরসা। অনুমতি নিয়ে ইফতার টেবিলের কিছু ছবি নিচ্ছি। আপাও কিছু ছবি নিয়ে দিলেন। ইফতার শুরু করছি স্যুপ দিয়ে। আমাকে বললেন মেইন ফুড শুরু করার আগে স্যুপ খাওয়া তুর্কীদের নিয়ম।
[ইফতার টেবিলে আরদিন ভাই , আমি , আরদিন ভাইয়ের বন্ধু এবং থাহা]
স্যুপের সাথে ব্রেড দিয়ে খাচ্ছি। কোনো ভাবেই শেষ করতে পারছি না। অনেক টা মাটির স্মেল পাচ্ছি। স্যুপ শেষে ভাত , মাংস এবং টিকিয়া সাথে সালাত খাচ্ছি। ভাত খুব নরম , মনে হচ্ছে বাটিতে রেখে তারপর প্লেটে সাজানো হইছে। বাটির ছাপ স্পষ্ট। মাংস মুখে দিয়েই আর খেতে পারছি না। অর্ধসিদ্ধ আমাদের মত কোনো মসলার স্বাদ পাচ্ছি না। থাহা আমাকে বলছে এটাই ওদের ফেভারিট মাংসের মেনু। খাবারে কোনো ঝাল ব্যবহার করে নাই। তুর্কিরা ঝাল খায় না বলে মনে হচ্ছে। ঝাল ছাড়া মাটন এটা তো অসম্ভব। দেখতে টিকিয়ার মত হলেও খাইতে কোন টেস্ট পাচ্ছি না। আরাবিয়ান মসলার স্বাদ পাচ্ছি। ঝাল ছাড়া টিকিয়া ওহহ .........
[খাবার পরিবেশন চলছে]
সালাতের স্বাদ ও অন্য রকম। সালাতের সাথে একধরনের মসলা মাখানো হয়েছে যা কোনো ভাবেই মুখে দিতে পাচ্ছি না। অনেক নতুন আইটেম আমি চেক করতেছি কোনটাই আমাদের খাবার মত টেস্ট নাই। আমার অবস্থা দেখে আপা সব খাবার একটা একটা করে টেস্ট করাচ্ছেন। যেহেতু মাছ খাই না। মাছের কোনো আইটেম চেক করছি না। সবজি রান্নাটা একটু খেতে পারছি। ঝাল ছাড়া আলু , টম্যাটো এবং একধরনের শাক দিয়ে রান্না করা। অনেকটা খেতে টম্যাটোর সসের মত লাগছে। আপাকে অনেক ধন্যবাদ দিলাম সবজি রান্না করার জন্য। আপা এমন ভাবে খাবার পরিবেশন করছেন যেন পারলে আমাকে হাত দিয়া খাইয়ে দেন। আমি কিছু খেতে পারছি না বলে তার চিন্তার শেষ নাই। তিনি বিভিন্ন ধরনের খাবারের আইটেম নিয়ে আমার সামনে রাখছেন এবং আমাকে প্রশ্ন করেই যাচ্ছেন এটা কি খেতে পারছেন ওটা কি খেতে পারছেন।
আরদিন ভাই আমার অবস্থা দেখে এগুলো সরিয়ে রেখে ফল এগিয়ে দিলেন। অনেক ধরনের ফল খাচ্ছি। খাবার টেবিলে "থাহা" আমাদের কথা কনভার্ট করে দিচ্ছে। খাবার শেষে নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
[নামাযের সময় তাফার দুষ্টামি]
আরদিন ভাইয়ের ছোট বাচ্চা "তাফা" বেশ দুষ্টামি করছে। সেও নামাজে দাড়াচ্ছে আবার দৌড়াচ্ছে। নামাজ শেষে শুরু হলো চা পর্ব। তুর্কি রা যে এত চা পছন্দ করে আগে জানতাম না। চায়ের সাথে এরাবিয়ান মিষ্টি। আপা কালো কালারের মিষ্টির অনেক প্রসংশা করছেন কিন্তু আমি একটু খেয়ে আর খেতে পারছি না। চা পান করছি আর গল্প করছি। "থাহা" আমাদের দোভাষী হয়ে কাজ করছে। আরদিন ভাই এবং আপা টার্কিশ ভাষায় কথা বলছেন থাহা সেটা ইংরেজি করে আমাকে শুনাচ্ছে আর আমার ইংরেজি কনভার্ট করে টার্কিশ ভাষায় আরদিন ভাইদের শুনাচ্ছে। আমরা অনেক হাসাহাসি করছি। মনেই হচ্ছে না আমাদের মাত্র একদিনের পরিচয়। হয়ত আর কখনো দেখাও হবে না। তাদের বিনম্র ব্যবহার এবং অনুপম ভদ্রতায় সত্যিই মুগ্ধ হচ্ছি।
আমি দুই কাপ চা শেষ করছি।কাপ না বলে ছোটো কলসি বলা ভালো। আপা আরেক কাপ চা নিয়ে আসছে। আমি বলছি আমি আর খেতে পারছি না , তবুও আমার সামনে চা রাখছেন। এরমধ্যে আরদিন ভাই ৫ কাপ চা শেষ করছে। আপাও একের পর এক চা খেয়েই যাচ্ছে। এক ঘন্টা ধরে চা পর্ব শেষ করে চলে আসার চেষ্টা করছি কিন্তু আরদিন ভাই আরো গল্প করেতে চায়। বেশির ভাগ কথাই ছিল আমাদের দেশ নিয়ে। আমাদের দেশ দেখতে কেমন , আবহওয়া কেমন , শিক্ষা ব্যবস্থা ইত্যাদি। আমি পজেটিভ দিকগুলো বলার চেষ্টা করছি। আরদিন ভাই ও তার দেশের কথা বলতে লাগলেন। আমাকে তার দেশের যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালেন। দুবাই অবস্থিত তুর্কি এমব্যাসিতে যেতে বললেন।
ছোট বাচ্চা তাফার দুষ্টামি ছিল দেখার মতো। সে আমার গায়ের উপরে হেলে পরছে। সোফা থেকে পরে যাওয়ার চেস্টা করছে। পরে যাওয়ার আগেই আমি ধরতেছি। পরম আনন্দে সে এই কাজ করেই যাচ্ছে।
রাত দশ টার দিকে আরদিন ভাইয়ের বাসা থেকে বিদায় নিচ্ছি। সবাই বাসা থেকে বেড়িয়ে এসে বিদায় দিচ্ছে , মনে হচ্ছে আমি তাদের কত পরিচিত একজন। কিছু দূর এসে পিছন ফিরে দেখি তাফা হাত নেড়েই যাচ্ছে। দৃশ্যটা আজীবন চোখের কোনে ভেসে থাকবে......
জাবেল হাফিত পর্বতের অপরূপ সৌন্দয্য (ছবিব্লগ)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১:৫২