somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রাম হল চারণভূমি; ঝাপসা আয়নাটি আমার ছেলেবেলা।।

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছেলেবেলায় বছর শুরুর সময়টা থাকত নতুন বইএর গন্ধ ভরা, কারণ ফুল কিংবা ফুলের গন্ধের হৃদয়তাত্ত্বিক মাহাত্ব্যটা বোঝার বয়স তখন হয়নি। সেজন্য স্মৃতির আয়নাটা কেবল রোদে পিঠ দিয়ে দুলে দুলে 'ছোটন ছোটন' পড়া ছাড়া তেমন কিছু দেখাতে পারেনা।

একলয়ে রিং গাড়ি চালিয়ে; মুড়ি মুড়কি খেয়ে-শেষ বিকেলের সাথে পাল্লা দিয়ে সূর্য বাড়ি ফেরার আগেই বাড়ি ফিরতাম। ক্লান্তি নয়, ফিরতাম সূর্যের তাড়া খেয়ে। সন্ধ্যা শুরু হত গুনগুনিয়ে। প্রাক-অধুনা এবং অধুনা'র এক বিব্রত সময়ে কেটেছে ছেলেবেলাটা। তাই, ইলেকট্রিক বাতির পাশাপাশি হারিকেন কিংবা হ্যাজাকের পরিচয় ছিলো আমার। আর একটা আবশ্যিক জিনিস ছিলো- গ্লোব মশার কয়েল। কখনো কখনো ধূপ জ্বলত ঘরে; আহ! কি মিষ্টি ঘ্রাণ! ওর'ই মাঝে ডুবে ডুবে চলতো আমাদের দু ভাইবোনের পড়ালেখা। আব্বা টিভির ভ্যলিউম কমিয়ে দিয়ে ৮ টার খবর শুনতেন, আর আমরা তখন ব্যস্ত ওয়ার্ডবুকে। আসলে ওয়ার্ডবুক তো নয়; সময় পার করে দেবার ফন্দি আরকি!

কারণ, আমাদের মফস্বলে রাত নামত সন্ধ্যাতেই। সুতরাং, রাতে খাবার পরেই ঘুমের ভিসা পেয়ে যেতাম। মাঝে মাঝে যখন ইলেকট্রিসিটি থাকতনা তখন বাসার সামনের রাস্তায় চলতো আড্ডা আর খেলাধুলা। আমরা শিশুর দল যেন স্বাধীনতা পেয়ে যেতাম। তখন মা’র শাসনের মাত্রাটা অনেকটা শিথিল থাকত। পুরো পাড়া ভেঙ্গে পড়তো তখন ওই রাস্তাটিতে। আর আমরা তখন শব্দের উৎস ধরে খুঁজে বের করতাম ঝিঁঝিঁ পোকার বাসা; পেলেই পানি ঢেলে দিতাম। জোছনারাতে লুকোচুরি খেলতাম, মাঝে মাঝে বরফ-পানিও খেলতাম। ও হ্যাঁ; আরেকটা খেলা ছিল- 'কুমির তোর জলে নেমেছি'। এটা খুব উত্তেজনাকর খেলা ছিলো আমাদের; অনেক খেলেছি। সে যাই হোক, এরকম হৈ-হল্লার মধ্যেই কখন যে বেরসিকের মতো ইলেকট্রিসিটি চলে আসত! আমরা মুখ ব্যাদান করে ঢুকে পড়তাম মশারির ভেতরে ওত পেতে থাকা ওই ঢালাও বিছানায়।

গ্রাম হল চারণভূমি। শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠতাম শুধু সর্ষেক্ষেতের এপার-ওপার দৌড়ে যাবার জন্য। গোসল করার জন্য দলবেঁধে চলে যেতাম দূরদূরান্তে ফিরতে ফিরতে সেই দুপুর গড়তো। পুকুরে নেমে কখনও চোখ লাল করা ছাড়া উঠিনি। একটু দূরেই নদী ছিল। শীতের সময় যখন সত্যি সত্যি'ই জল হাঁটুর নিচে নেমে যেতো, তখন চলত কাদার মধ্যে আমাদের মাছ ধরা, নিজের উপার্জিত মাছ খেতে গিয়ে গর্বে বুক ফুলিয়ে থাকতাম।

আমি তখন'ও সুমন’কে চিনিনা; কিন্তু এখন বুঝতে পারি, সব শিশুর মধ্যেই একজন করে সুমন বাস করে। নইলে কেন এই বাংলাদেশের অখ্যাত একটা গ্রামের ক্ষুদ্র একটা শিশুর ভাবনার সাথে মিলে যাবে সুমনের দইওয়ালা হবার স্বপ্নটা! আর তখন আমি হতে চেয়েছিলাম ফেরিওয়ালা।

এইসব ছোট ছোট দৃশ্যগুলো কোনটা এখন আর স্পষ্ট নয়; কিন্তু মনের কোথায় যেন দাগটা কেটে আছে। আমার আয়নাটা এখন আর খুব বেশী কিছু দেখাতে পারেনা আমার শৈশব কে নিয়ে। আমার ছোট্ট মনের কোল জুড়ে কেবল উঁকি দিত সহজিয়া দিনগুলোর টুকরো টুকরো ছবি। আমার আয়নাটা এখন’ও ঝাপসা হয়ে যায়নি। আমার গোপন বিলাসের ভাবনাগুলোকে এখনও নিরলস সংঙ্গ দেয় আমার আয়না।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১:০১
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×