অনুমোদন না থাকা এবং হুন্ডির অভিযোগে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসি বাংলাদেশে অনলাইন রিচার্জ বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ দর্শাতে দেশের ছয় মোবাইল ফোন অপারেটর এবং ওয়াইম্যাক্স সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলালায়ন ও কিউবিকে এ সংক্রান্ত চিঠিও দিয়েছে বিটিআরসি। দেশের সব থেকে বড় অনলাইন রিচার্জ সাইট ইজি ডটকম ডট বিডি তাদের ওয়েবসাইটে অনলাইন রিচার্জ এ অপারগতার নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছে। যে কোন সময় ইন্টারনেট থেকে ওয়াইম্যাক্স ও মোবাইল ফোন গ্রাহকরা অনলাইন রিচার্জ করে যে সুবিধা ভোগ করতেন তা বন্ধ হওয়ায় অনেকেই বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।
দেশের কয়েকটি অনলাইন ব্যাংকের সহযোগিতায় ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (ভ্যাস) প্রোভাইডররা অনলাইন রিচার্জ সেবাটি দিয়ে আসছিল। এজন্য ব্যাংক ও কনটেন্ট প্রোভাইডরদের মধ্যে চুক্তি হয়। অনলাইনে রিচার্জের সুযোগ চালু হওয়ার পর দেশ-বিদেশে এ জাতীয় অনেক সাইট চালু হয়। বাংলাদেশের বহুল প্রসিদ্ধ এ ধরনের কয়েকটি সাইট হল http://www.easy.com.bd, http://www.amarbill.com, http://www.paypointcom.bd। ক্রেডিট কার্ড যেমন ভিসা, মাস্টার কার্ড এবং ডেবিট কার্ড যেমন ডিবিবিএল নেক্সাস, ব্র্যাক ব্যাংক এটিএম ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে অনলাইনে গ্রাহকরা সহজেই তাদের প্রিপেইড নম্বর রিচার্জ বা পোস্টপেইড নম্বরের বিল পরিশোধের সুযোগ পেতেন। গ্রাহকদের কাছ থেকে এ জন্য ক্ষেত্রবিশেষে ৪-৬ শতাংশ হারে কমিশন নেয়া হতো। প্রায় সব মোবাইল ফোন অপারেটরের জন্য অনলাইন রিচার্জ সুবিধা চালু ছিল। মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটভিত্তিক অর্থনৈতিক সেবা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোই সেবাটি দিয়ে আসছিল। অনলাইন রিচার্জ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহক নিয়মিত সেবাটি গ্রহণ করতেন। কিউবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের ৪০ শতাংশ গ্রাহকই অনলাইনের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করে থাকেন। এ ব্যবস্থায় প্রিপেইড মোবাইল ফোন গ্রাহকদের জন্য ৫০-২০০০ টাকা এবং পোস্টপেইড গ্রাহকদের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা বিল পরিশোধের সুযোগ ছিল। অনুমোদন নেই এবং দেশের বাইরে যেসব সাইট অনলাইন রিচার্জের সুবিধা দিচ্ছে তাদের মাধ্যমে হুন্ডির সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছে বিটিআরসি। অপারেটররা যেহেতু এ সেবার মাধ্যমে সুবিধা পেয়ে থাকে, তাই তাদের এর কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। দেশের ছয় মোবাইল ফোন অপারেটর এবং ওয়াইম্যাক্স সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলালায়ন ও কিউবিকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সেবাটির জন্য অপারেটরদের অনুমোদন নিতে বলা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিটিসেল, কিউবি ও বাংলালায়ন অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে। তবে দেশের শীর্ষ দুই মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবি কমিশনের এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। জানা গেছে, টেলিযোগাযোগ আইনের ৪০-এর ১ ধারা প্রয়োগ করে বিটিআরসি সেবাটি বন্ধ করেছে। এ ধারায় বলা আছে, কমিশনের অনুমতি ছাড়া কোন অপারেটর তার লাইসেন্সকৃত টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বা সেবা প্রদানের কোন স্থাপনা, যন্ত্রপাতি বা সুবিধা ব্যবসায়িক ভিত্তিতে বা ফিস বা অন্য কোন ধরনের মূল্য বা সুবিধার বিনিময়ে অন্য কোনও ব্যক্তিকে ব্যবহারের অনুমতি বা সুযোগ দিতে পারবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে ই-কমার্সে নতুন একটা অধ্যায় শুরু হয়েছে। সে সময় এ ধরনের জনপ্রিয় প্রিমিয়াম সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্রাহকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনলাইনের বিভিন্ন সার্ভিস থেকে আস্থা উঠে যেতে পারে। এ কারণেই দ্রুত সেবাটি পুনরায় চালুর অনুমতি দেয়া প্রয়োজন।
-এম. মিজানুর রহমান সোহেল