somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ডাগর মোমবাতি (ভীতি)

২২ শে জুন, ২০১৬ রাত ১২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


*/অ/

দিব্যের সাথে আমার অনেক পর দেখা হয়ে যায় রেললাইনে হাঁটতে হাঁটতে; সাথে তৎকালীন বালিকা-বন্ধু টিলাশোভিত পায়ে পদ্মার মতো একেবেঁকে হাঁটছিল আর বয়সের দোষে ইতল-বিতল ঢং করছিল কিঞ্চিত। হঠাৎ পেছন থেকে একটা সতর্ক গলায় ডাক এলো, 'হাসান?'

চেয়ে দেখি- হারামজাদা দিব্য!

আমি সচেতনভাবে সাড়া দেবার আগেই আমার হাতদুটো ওকে জাপটে জড়িয়ে ধরেছে। দিব্য অপ্রস্তুত হয়ে বলে, আরে শালা কি করিস কি করিস ছাড়, সাথে কে পরিচয় করিয়ে দে তো আগে! আমি অবস্থান বিন্দুমাত্র পরিবর্তন না করে জবাব দেই, 'আমার ভবিষ্যৎ সন্তানের জননী। সাথী, এটা দিব্য। হ্যালো কও।
হ্যালো ভাইয়া।
হ্যালো। ভাল আছেন?
জি।
আমি ওর চোখে চোখ রেখে বলি, কই ছিলি এতদিন?
ও হাসে। এইতো, ছিলাম, গ্রামে-শহরে-বন্দরে।
-যোগাযোগ করিস নি কেন?
ইচ্ছে করেই।
-হালা চোত্মারানি!
তুই কি খুঁজেছিস, বাঞ্চোত!
-চল বাসায় যাবি।
আজকে না দোস্ত। ট্রেন আছে পাঁচটায়। ঝাঁপ দিবো।
-খুব জরুরি?
হ্যাঁ।
-ও।
আসবোনে একদিন বাসায়। আগের জায়গাতেই আছিস?
-হ্যাঁ। ঐ গলিতেই।
আসব। আজকে থাক। ভাল থাকিস।
- যাসশালা ভাগ! বাসায় এলি না মনে কষ্ট পেলাম। সাবধানে থাকিস।
ওকে। সাথী ভাবি ভাল থাকবেন।
জি ভাইয়া। গুডলাক।

তারপর দিব্য হারিয়ে যায়। ফুঁৎকারে। কোথাও, দেরাজে বা কুলুঙ্গিতে, সযত্নে একটা ডাগর মোমবাতি পোড়ে।


*/আ/

আহসান সাহেবের নগ্ন হয়ে বসে থাকতে খুব ভাল লাগে। কিন্তু অফিস আর সংসারের মাঝে এই শখটি পূরণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এমনকি নিজের ঘরে নগ্ন হতে শুরু করলেও স্ত্রীর অভিযোগ শুনতে হয়। তাই নিরুপায় আহসান সাহেব তাঁর বারো বছরের কিশোরী মেয়ের ঘরে ঢোকেন রাতের বেলা; নিঃশব্দে নগ্ন হয়ে খাটের নিচে থাবা গেড়ে বসে থাকেন তারপর। মাঝে মাঝে স্বরনালীকে যন্ত্রণা দিয়ে জন্তুর মতো বিকট শব্দ করেন। নিচু গলায় হাসেন।

এতে খাটের নিচের প্রকৃত বাসিন্দা- একটি প্রেত - বিব্রতবোধ করতে শুরু করে। সেও উপায় খুঁজে না পেয়ে ব্যবস্থা নেয়। আহসান সাহেবের রূপ ধারণ করে মেয়ের মাথার কাছে বসে থাকে। যখন খাটের নিচের জন্মদাতার বিকট শব্দে মেয়েটা আঁতকে ওঠে মাঝ রাতে, তখন প্রেতটি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় আর ফিসফিস করে বলে- কিচ্ছু হয় নি বাবা, ঘুমোও।


*/ই/

আমি জানি আপনার ভেতরের মানুষটাকে।

আপনি না বলে তুমি বলি, হ্যাঁ? পরিচিত ঘনিষ্ঠ মানুষেরা তুমি বলে সম্বোধন করে একে অপরকে। আমি তোমাকে চিনি সবার চেয়ে আপন করে, আমি কেন 'তুমি' ডাকব না!

আমি জানি তুমি আসলে কেমন।
আমি জানি তুমি বিষণ্ণতায় ভুগে কি কি করেছো।
আমি জানি তোমার মাথায় কি সব কুৎসিত চিন্তাভাবনা চলে।
আমি জানি তোমার নির্দিষ্ট 'সিক্রেট' নেই কোন।
পুরাকালের নিকৃষ্ট পাপীদের নির্দিষ্ট কোন পাপ থাকতো না যেমন।

তোমার প্রিয় মানুষটা, যাকে এতো ভালোবাসো বলে নিজেকে বিশ্বাস করাচ্ছো, সে-ও এগুলো জানতে পারলে অস্বস্তিমাখা চোখে চেয়ে থাকবে তোমার দিকে। তারপর আর কোনদিন তোমাকে ভালবাসতে পারবে না।

হয়তো সে জানে। কিংবা জানে না। হয়তো এই প্রসঙ্গটাকে এড়িয়ে চলে সে ইচ্ছে করে। কিন্তু বিশ্বাস করো, তার করোটির ভেতরে একটা দপদপে কীটের মতো ভাবনাটা অস্তিত্ব জাহির করে চলেছে সব সময়।

চরম আনন্দের উত্তাল মুহূর্তেও, যখন তুমি সে দেহে-কামনায় একাকার, তখনো সে এই অস্বস্তিকে ঝেড়ে ফেলতে পারবে না। যখন তুমি বাচ্চাগুলোকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা-আনন্দে ভাসছ, তার দিকে তাকিয়ে আনমনে ভাবছো- জীবন সুন্দর- তখনো ভাল করে চেয়ে দেখবে- তার হৃদয়ের অনিশ্চয়তা, ভয়, এক চিমটি বিষাদ চোখে প্রকাশ পাচ্ছে। সে তোমার দিকে চেয়ে হাসবে, তোমার সাথে জীবন কাটিয়ে দেবে, বাচ্চাকাচ্চা বড় করে বুড়ো হবে তোমরা একসাথে, কিন্তু সেই জীবনে একশ ভাগ খাঁটি ভালবাসা কখনো সে তোমাকে বাসতে পারবে না। মনের এক কোণে অন্ধকার একটা কিছু ওঁত পেতে থাকবে। সে তোমার সাথে জীবন উপভোগ করবে না, তোমার সাথে মানিয়ে নিয়ে বাঁচতে শিখে যাবে। কারণ সে নিষ্ঠুর নয়, সে তোমার ওপর নির্ভরশীল।

সেই ব্যাঙটার কাহিনি শুনেছ? একটা ব্যাঙকে পানিভরা পাত্রে নিয়ে ধীরে ধীরে তাপ দেওয়া হতে লাগল। ব্যাঙটা প্রথমে দেখল- তাপ তো বেশি নয়, লাফ দিয়ে ইচ্ছে করলেই আমি বেরিয়ে যেতে পারি। সে দেহের তাপমাত্রা পাত্রের তাপের সাথে মানিয়ে নিল, ভাবলো তাপ বেশি হলেই লাফিয়ে বেরোব।

তাপ আরেকটু বাড়ান হয়, ব্যাঙ মানিয়ে নেয়।
আরেকটু বাড়ে, ব্যাঙ আরেকটু অ্যাডজাস্ট করে দেহের তাপমাত্রা।

কিছুক্ষণ পর তাপমাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেলে ব্যাঙ এবার ভাবে- লাফিয়ে বেরোই! কিন্তু ততোক্ষণে অ্যাডজাস্ট করতে করতে, মানিয়ে নিতে নিতে তার লাফ দেবার সমস্ত শক্তি ফুরিয়ে গেছে, হাজার চেষ্টা করেও সে আর সেখান থেকে বেরোতে পারে না। পুড়ে কষ্ট পেয়ে মরে।

তোমার মানুষটার এই ভাবে মানসিক মৃত্যু ঘটবে এক সময়। হয়তো আজ নয়, কাল নয়, পরশুও নয়। কিন্তু একদিন।

কিন্তু তোমার তো তাতে খুব একটা যায় আসে না। তাই না? তুমি বিভ্রমে ভুগে জীবন কাটিয়ে দিয়েছ, এবার এই সুখের বিভ্রমে ডুবে খুন করবে প্রিয় মানুষটাকে। আমরা দুজনেই জানি- তুমি একজন নিষ্ঠুর মানুষ। তুমি তার যোগ্য নও। তুমি একজন লোভী মানুষ, যে সুখের লোভে সংসার পেতেছে, নিজের সঙ্গীর চোখে ভাঙ্গনের সঙ্কেত পেয়েও ভান করেছে না দেখার। সব খুনির হাতে রক্তের দাগ থাকে না। তুমি একজন খুনি।

অভিশাপ দিচ্ছি তোমাকে।
অভিশপ্ত তুমি দূর হও।
দূর হও।
দূর হও।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৬ রাত ১২:৪৬
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×