somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এমএলএম একটি আধুনিক প্রতারনার ফাঁদ

২৬ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০২ সালের দিকে খুলনার নিউ মার্কেটের পিছনে প্রায় বিকেলেই যাওয়া হতো। নূর, শান্ত, মুক্তা এবং আমি সাইকেল চালিয়ে ওখানে যেতাম। উদ্দেশ্য ছিলো আড্ডা আর বিশেষ মালাই চা খাওয়া।

আড্ডার মাঝে প্রায় লক্ষ করতাম একটি বিল্ডিং এর সামনে বিভিন্ন বয়সি তরুন ছেলেরা ভির করে দাড়িয়ে আছে। তাদের সবাই সুসজ্জিত। গলায় টাই বাধা হাতে একটি করে ডায়েরী। পরষ্পর নিজেদের মধ্যে কি নিয়ে যেন কথা বলছে।

একদিন আমাদের ব্যাচের এক ছেলের সাথে কথা হলো। আলাপ প্রসঙ্গে বললো লেখা পড়ার পাশাপাশি সে পার্ট টাইম কাজ করে। মাসে ভালো টাকা আয় করে। বেকার লাইফে অন্য কোনো ছেলের এ রকম কথা শুনলে স্বাভাবিক ভাবেই কৌতুহল জাগে। তাকে প্রশ্ন করলাম সে কি কাজ করে ? উত্তরে বললো মার্কেটিং এর কাজ করে। জানতে চাইলাম কি প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করো। সে বললো তুমি যদি আগ্রহী থাকো তবে আমাদের অফিসে একদিন সময় করে আসো, সবকিছু বুঝিয়ে বলা হবে। যাহোক পরবর্তীতে জানলাম সে ডেসটিনি-২০০০ লিঃ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে যাদের ব্যবসা হচ্ছে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং সংক্ষেপে এমএলএম।

খুলনার মতো একটি বিভাগিয় শহরে যেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ কম এমন একটি জায়গায় এই ব্যবসা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পরেছিল। এমনকি আমাদের বন্ধু মহলে অনেকেই এমএলএম এর সাথে জড়িয়ে যায় কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউেই সফল হতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে সরকার এর কঠর অবস্থান এবং এমএলএম কোম্পানীগুলোর প্রতারনার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই ব্যবসা অনেকটা বিলুপ্তপ্রায় হয়।

কিন্তু এত বছর পর ইদানিং আবার সেই টাই পরা সুসজ্জিত বেকার ছেলেদের ডাইরি হাতে ঘুরে বেড়ানো দৃশ্য চোখে পরছে। প্রোডাক্ট বিক্রির আড়ালে তারা এমএলএম এর ব্যবসা করছে।

আমাদের এলাকায় একজন বয়স্ক লোকের সাথে সম্প্রতি পরিচয় ঘটে। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারি তিনি একটি ডিস্ট্রিবউটর কোম্পানীতে চাকরী করেন। একটি সুপরিচিত কোম্পানীর প্রোডাক্ট বিক্রি করেন। তিনি পাবনা, রাজশাহী অঞ্চলের দায়িত্বে আছেন। তার আন্ডারে বেশকিছু টিম আছে তারা এই ডিস্ট্রিবউশনের কাজ করে। প্রায়ই দেখি তার বাসায় গ্রাম থেকে নতুন নতুন ছেলে আসছে। কিছুদিন থাকে তারপর চলে যায়। আবার নতুন ছেলেদের আগমন ঘটে। ভদ্রলোক তার কাজ সম্পর্কে এর থেকে বেশিকিছু কখনো বলেন না।

কৌতুহল বশত তার টিমের এক ছেলেকে ডেকে তাদের কাজের ধরন সম্পর্কে জানতে চাইলাম। ছেলেটি গ্রাম থেকে এসেছে। এস.এস.সি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। সংসারে অভাবের কারনে তাকে লেখাপড়া বাদ দিয়ে উপার্জনের পথ বেছে নিতে হয়েছে। সে বললো তার চাকরী নেওয়ার জন্য কোম্পানীকে ৪৫০০০/- টাকা ভর্তি ফি হিসেবে দিতে হয়েছে। এর পর সে যতজন লোক ভর্তি করতে পারবে তাকে জনপ্রতি ৩০০০/- টাকা দেওয়া হবে। যখন তার আন্ডারে ১০জন লোক হবে তখন সে টিম লিডার হয়ে যাবে। সে সময় তাকে এককালীন ১০০০০/- টাকা দেওয়া হবে। এভাবে তার আন্ডারে যখন ৭ টি টিম তৈরি হবে তখন সে মাসে ৭০০০০/- টাকা পাবে।

প্রথমিক অবস্থায় একজন ছেলে যখন নতুন ভর্তি হয় তখন সে এক মাস ট্রেনিং এ থাকে। তার থাকা খাওয়ার ব্যয়ভার কোম্পানী বহন করে। সারাদিন তাদের কোনো কাজ নেই । শুধু অফিসে হাজিরা দেওয়া আর সিনিয়রদের কাছ থেকে নিয়মকানুন শেখা ছাড়া। একমাস পর লোক ঢুকাতে পারলে টাকা পাবে আর না হলে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হবে।

এই তরুন ছেলেগুলো অনেক টাকার মোহে বাস্তবিক চিন্তা ভাবনা না করে এমএলএম চক্রে প্রবেশ করছে। কম বয়সী বেকার ছেলেদের টার্গেট করে যে প্রতারনা কোম্পানীটি করছে তা এই ছেলেগুলো বুঝতে পারছে না। একমাস টাই পরে ফিটফাট হয়ে অফিসে যাচ্ছে। সবাইকে বলছে চাকরী করছে কিন্তু মাস শেষে যখন টার্গেট ফিলআপ করতে পারে না তখন শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হয় বেকার অবস্থায়। মাঝখানে সংসারের ঋণের বোঝা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বেকার ছেলেদের সাথে এই প্রতারনা এখনই বন্ধ হওয়া উচিত।



শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু
উত্তরা, ঢাকা
২৬/০৮/২০১৬
www.facebook.com/snalam.raju





সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:৩১
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×