"তালের পাখা
প্রাণের সখা,
গরমকালে
দিয়ো দেখা।"
বর্তমানে প্লাস্টিকের হাত পাখা প্রচলন হলেও তালের হাত পাখা বা খেজুর পাতা, কাপড়ের তৈরি পাখার মর্যাদা নিতে পারেনি। তালের হাত পাখার বাতাস একদম শীতল।
বিদ্যুৎ আবিস্কৃত হলেও গ্রামে গঞ্জে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। তার উপর বিদ্যুৎ বিভ্রাট তো আছেই। তাই হাত পাখার প্রসার এখনো কমে নি।
রাজা বাদশাদের আমলে আমরা দেখতাম রাজার সিংহাসনের পিছনে দুইজন পাখা হাতে দাঁড়িয়ে থাকত। তাদের কাজ ছিল বিশাল সাইজের এই পাখা ধীরে ধীরে বাতাস করা।
হাত পাখা ছাড়াও আরেক ধরনের পাখা ছিল। এই পাখা কাপড়ের তৈরি। মাথার উপর সিলিংয়ে ঝুলানো থাকত মোটা কাপড়। এর চারদিকে মোড়ানো থাকত লালসালু। এর সঙ্গে যুক্ত থাকত দড়ি। দূরে বসে একজন দড়ি ধরে টানত। দড়ির টানে লালসালু যুক্ত মোটা কাপড় এদিক-ওদিক নড়াচড়া করতো। এতে সারা ঘরময় বাতাস খেলে যেত।
এক সময় অফিস-আদালতে মাথার উপর সিলিংয়ে ঝুলানো এ ধরনের পাখা টেনে বাতাস করার রেওয়াজ ছিল। বেশি দিন আগের কথা নয়। এই ইংরেজ আমলে এমন কি ইংরেজ আমলের পরেও এ উপমহাদেশে জজ-ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে এ ধরনের পাখা টেনে বাতাস করার ব্যবস্থা ছিল। তখন এ কাজের জন্য সরকারি কর্মচারীও নিযুক্ত ছিল।
এখন এই ধরনের পাখা না দেখা গেলেও হাত পাখার কদর এখনো কমে নি। কৃষক মাঠে কাজ করছে, আর তার বধু তার জন্য খাবার নিয়ে আসছে এবং সাথে একটি হাত পাখা। কৃষক খাচ্ছে এবং গৃহবধু হাত পাখা দিয়ে বাতাস করছে। এই হাত পাখা নিয়ে অনেক গান কবিতা আছে। একটি জনপ্রিয় গান এই রকম...
''তোমার হাত পাখার বাতাসে
প্রান জুড়িয়ে আসে,
কিছু সময় আরও তুমি
থাকো আমার পাশে।''
এখন বিভিন্ন নকশার পাখা পাওয়া যায়। হাত পাখা দিয়ে চৈনিক নৃত্যও আছে। গ্রামের গৃহবধুরা হাত পাখার মধ্যে অনেক ছড়া এবং শ্লোক লিখে থাকে। এই ধরনের কিছু শ্লোক বা ছড়া নিম্নরূপ...
''বিন্দু বিন্দু সৎকর্ম গড়ে তোলে সুখের প্রাসাদ
বিন্দু বিন্দু লোভে দু:খ, বিন্দু বিন্দু কষ্টে অবসাদ"
"সালাম দিয়াছো যারে, জরি সাজে মখমলের জামায়
গতকাল সে ছিন্ন বেশে ভিক্ষা চাহিয়া ফিরে যায়।"
"গোয়ালার গরু নাই, চাষা কাঁদে রাতে
আমার সন্তান কেমনে থাকে দুধে ভাতে?"
"এক দমের কত বাহাদুরী
মাটির কঙ্কাল সাজে সোনার মোহরে,
গরীবের অর্থ করে চুরি"
হাত পাখা টাঙ্গাইলে বিছুন আবার ময়মনসিংহ তে বিচুইন নামে পরিচিত। অনেকে বাণিজ্যিক ভাবে হাত পাখার ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছে।