somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের নিজস্ব খেলাধূলা (পর্ব ০২)

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কৈশোর যাদের গ্রামে কেটেছে তাদের যদি আমি প্রশ্ন করি যে ‘গোল্লাছুট কি?’ তাহলে তা চিনবে না বা মনে করতে পারবে না এমন মানুষ বের করা খুব কঠিন। বর্তমান সময়ে হয়তো ক্রিকেট অথবা ফুটবলের জয়জয়কার। তবুও কৈশোরের গোল্লাছুট খেলাটির আনন্দ যারা উপভোগ করতে পেরেছেন তারা যে আজও সেই আনন্দ মনে রেখেছে এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত। বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত যে কতগুলো খেলা রয়েছে তার মধ্যে গোল্লাছুট অন্যতম। গ্রামের কিশোর-কিশোরীর স্কুলের টিফিনের ফাঁকে অথবা বিকেলের সময়টাতে খেলার জন্য একটি জনপ্রিয় খেলা এই গোল্লাছুট।

মূলত গোল্লাছুট খেলাটি খেলতে হয় দুইটি দলে বিভক্ত হয়ে। প্রত্যক দলের একজন দলনেতা নির্বাচিত হয়ে থাকে। তারপর দু’জন দু’জন করে জোড়া বেধে তাদের ছদ্মনাম নিয়ে দলনেতার কাছে আসে।

তারপর তারা বলে-
ডাক ডাক বে---লী
তারপর দলনেতা বলে-
আমরা সবাই খেলি
তারপর তারা বলে-
কে নেবে ‘আম’ কে নেবে ‘জাম’?

এরপর দলনেতা যার নাম ধরে ডাকে সেই ছদ্মনামধারী তার দলে চলে যায়। গোল্লাছুট খেলায় খেলোয়ারের কোন নির্দিষ্টতা নেই। তবে অবশ্যই তা দুই দলে সমান হতে হবে।


খেলার নিয়মঃ
যেহেতু খেলাটির নাম গোল্লাছুট। তাই বোঝাই যাচ্ছে যে এই খেলায় প্রয়োজন একটি গোল্লার। তাই প্রথমে একটি ‘গোল্লা’ তৈরী করা হয়। মাটিতে একটি গোল দাগ দিয়ে গোল্লা বানানো হয়। মাঠের যে প্রান্তে গোল্লা তৈরী হয় তার ঠিক অপরদিকে প্রায় ৬০/৭০ গজ দূরে তৈরী হয় ‘সীমানা’। গোল্লা থেকে সীমানার দিকে ছুটে যাওয়ার জন্যই এই খেলার নাম দেয়া হয়েছে ‘গোল্লাছুট’।

যে দল প্রথমে খেলার জন্য ঠিক হয় সেই দলের দলনেতা গোল্লার ভেতর দাঁড়িয়ে থাকে। আর দলনেতার হাত ধরে একের পর এক হাত মিলিয়ে সবাই শেকল আকারে গোল্লার বাইরে থাকে। তবে হাত ছাড়া যাবে না। অন্যদিকে অপরপক্ষের খেলোয়ার সীমানার চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকে। সুযোগ বুঝে শেকল থেকে প্রথমজন যখন সুযোগ বুঝে দৌড় দেয় সীমানার উদ্দেশ্য তখন অপরপক্ষের সবাই তাকে ছুঁতে চেষ্টা করে। শিকলে থাকা অবস্থায় যদি প্রতিপক্ষের কোন খেলোয়াড়কে ছোঁয়া যায় তবে সে মরা বলে গণ্য হবে এবং সে আর খেলতে পারবে না। সুযোগ বুঝে শেকল ভেঙ্গে সীমানার দিকে দৌড় দেয়ার চেষ্টা করা হয়। যদি প্রতিপক্ষের কেউ তাকে ছুঁয়ে ফেলে তবে সেও মরা বলে গণ্য হবে এবং আর খেলতে পারবে না। আর যদি সে সীমানা অতিক্রম করতে পারে তাহলে সে পেকে যায় (সীমানা অতিক্রমকারীকে পেকে যাওয়া বলে)। এরপর পেকে যাওয়া খেলোয়াড় গোল্লা থেকে জোড়া লাফ দিয়ে সীমানার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। ফলে খেলা অনেক সহজ হয়ে যায়। যে গোল্লা পাহারা দেয় সে যদি সীমানা অতিক্রম করতে পারে তাহলে খেলায় চুড়ান্ত বিজয় নিশ্চিত হয়। যদি কোন কারণে গোল্লা পাহারাদার মারা যায় (প্রতিপক্ষের কারো দ্বারা স্পর্শিত হলে) তাহলে সেখানেই খেলা শেষ এবং প্রতিপক্ষ খেলার সুযোগ পায়। এরজন্য গোল্লা পাহারাদারকে সবসময় চোখে চোখে রাখা হয় যাতে সে সীমানা অতিক্রম করতে না পারে। এরজন্য সহখেলোয়াড়েরা সীমানা অতিক্রম করে পেকে গিয়ে জোড়া লাফের মাধ্যমে গোল্লাকে সীমানার কাছে নিয়ে আসে যাতে গোল্লা পাহারাদার সহজেই সীমানা অতিক্রম করে চূড়ান্ত বিজয় নিশ্চিত করতে পারে।


একসময়ের বাংলার কিশোর-কিশোরীর কাছে জনপ্রিয় খেলা ছিল এই গোল্লাছুট । দিন দিন এর জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করেছে। পর্যাপ্ত মাঠের অভাব,পৃষ্ঠপোষকতার অভাব,স্যাটেলাইটের প্রভাব ইত্যাদি নানা কারনে আজকের কিশোর-কিশোরী আর সেই সীমানার দিকে ছুটে চলার আনন্দ উপভোগ করে না। আর তাই দিন দিন আমাদের লোকসমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের নিজস্ব খেলা। ছোটবেলায় গ্রামে বেড়াতে গেলে যেখানে বিকেলের সময় গোল্লাছুট খেলার অনন্দ উপভোগ করা যেত সেখানে আজ স্থান পেয়েছে ক্রিকেট অথবা ফুটবল,যা কিনা অন্য লোকসমাজের অন্তর্ভুক্ত। আমরা ক্রিকেট অনেক ভালো খেলতে পারি কিন্তু একবার কি ভেবেছেন যে আমরা নিজেদের খেলা আজ ভুলতে বসেছি। আসুন,আবারো নতুন প্রজন্মের কাছে আজ তুলে ধরি আমাদের নিজস্ব খেলা। পরিচয় করিয়ে দেই ছুটে চলার আনন্দের সাথে।


লেখকঃ
রেহমান রাহাত
ক্রীড়া সম্পাদক
লোকসংস্কৃতি রক্ষা করি (লোরক) সোসাইটি
ই-মেইলঃ [email protected]
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×