somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভিনদেশের লোকসংস্কৃতিঃ পারস্য নারী চোখে আপনি

২১ শে জুন, ২০১২ রাত ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘মাচাঙ’ এর প্রথম সংখ্যায় আমরা প্রাচীন পারস্যের লোকসমাজে প্রচলিত প্রতীকধর্মী কিছু জিনিস পরস্পরের মনের ভাব বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতো সে বিষয় সম্বন্ধে জেনেছি। এ পর্বে প্রাচীন পারস্যের আরও কিছু মজার জিনিস জানার চেষ্টা করব।

ইরানিয় লোকসংস্কৃতি থেকে জানা যায়, প্রাচীন ইরানের মেয়েরা পুরুষজাতকে তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করে তাদের প্রতি শ্রেণী অনুসারে আচার-আচরণ প্রকাশ করত। শ্রেণী অনুসারে পুরুষজাত (১) আসল লোক, (২) অর্ধেক লোক এবং (৩) নিকৃষ্ট বা তৃতীয় শ্রেণীর লোক। এদের কার্যকলাপ এবং তাদের প্রতি স্ত্রীদের ব্যবহার এবং আচার-আচরণ নিম্নরূপঃ



(১) আসল লোকঃ
আসল বা প্রকৃত লোক সেই ব্যক্তি যে স্ত্রীর কথা ছাড়া এক পা নড়ে না। স্ত্রী যখন যা ফরমায়েশ দেয় তা বিনীতভাবে তাই করে এবং উপার্জনকৃত টাকা পয়সা সব স্ত্রীর কাছে গচ্ছিত রেখে তার হাতের পুতুল হয়ে থাকে। নিজের ব্যক্তিত্ব এবং সত্তা বলতে কিছুই যার নেই। স্ত্রী সর্বস্ব বা স্ত্রী নির্ভর এসকল ব্যক্তিই স্ত্রীর নিকট আসল লোক হিসেবে গণ্য হয়।

(২) অর্ধেক লোকঃ
অর্ধেক লোক সেই ব্যক্তি যার অবস্থা বড়ই করুণ। গরীব গরীব ভাব। রুটি আনতে নূন থাকে না, নূন থাকতে রুটি থাকে না। স্ত্রীর ঝামটা সবসময় সহ্য করতে হয়। দরবারে পেয়ে ঠাঁই, ঘরে এসে মাগ কিলাই এর অবস্থা যদি তার হয়, তবে সে ক্ষেত্রে স্ত্রী তার দাঁড়ি গোঁফ ছিঁড়ে ফেলে এবং ঐ ব্যক্তির নতুন কাশ্মিরী আলোয়ান ছিঁড়ে ফেলতে কুন্ঠিত হয় না। এরূপ ক্ষেত্রে ‘অর্ধেক লোক’ যদি কাজির শরণাপন্ন হয় তবে কাজি তৎক্ষণাৎ তাদের তালাক মঞ্জুর করে দেন। ‘অর্ধেক লোক’ দের আরেকটি সংজ্ঞা বড় চমৎকার- তারা না নারী না পুরুষ অর্থাৎ ‘.........’।

(৩) নিকৃষ্ট বা তৃতীয় শ্রেণীর লোকঃ
নিকৃষ্ট বা তৃতীয় শ্রেণীর লোক সেই ব্যক্তি যে গাটে পয়সা না থাকা সত্ত্বেও ফুলবাবু সেজে গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ায়। এই ধরনের পুরুষের স্ত্রী যদি মাসাধিক কালো ‘নাইওর’ (স্ত্রীর নিজ বাড়িতে অবস্থানকে নাইওর বলে) খেয়ে বেড়ায়, সে স্ত্রীর খোজ-খবর রাখার প্রয়োজন বোধ করে না। এমনকি স্ত্রীকে কোনদিন জিজ্ঞেস করাও প্রয়োজন বোধ করে না যে, ‘তুমি এতদিন কোথায় ছিলে?’ তাছাড়া বাড়িতে থাকাবস্থায় স্ত্রী যদি ভিন্ন পুরুষের সঙ্গে আড্ডাও জমায়, তবে সে চোরের মতো আস্তে করে বাড়ি থেকে সটকে পড়ে।

বাড়ি পৌঁছে সে যদি দেখে ঘরের দরজা বন্ধ, তবে দরজা খোলার জন্য টোকা পর্যন্ত দেয় না। দিনের বেলা হলে ঘন্টার পর ঘন্টা এবং রাত্রি বেলা হলে ভোর না হওয়া পর্যন্ত সে দরজায় প্রতীক্ষা করে এই জন্য যে, কখন দরজা খুলবে আর সে ঘরে প্রবেশ করবে। এই ধরনের স্বামীরা যদি স্ত্রী সঙ্গে উচ্চবাচ্য করে তবে স্ত্রী কাজির শরণাপন্ন হলে সঙ্গে সঙ্গে কাজি তালাক মঞ্জুর করে দেন। ‘কিতাব-ই-কুলসুম নামা’ এর ভাষ্যকারগণ কুলসুম এর বরাত দিয়ে বলেন, এই ধরনের কোনো কুলসুমের স্বামী যদি হাত জোর করে ক্ষমা ভিক্ষাও করে তবু কুলসুম একদিনের জন্য হলেও স্বামীর ঘর করতে নারাজ।

এছাড়াও আরও প্রচলিত কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে, যেমন-

ক) ধরা যাক, একজন মহিলা নামাজ পড়ছে। সে মুহুর্তে তার স্বামী পাশের ঘরে একজন ভিন্ন রুপবতী রমনীর সঙ্গে আলাপ করছে। নামাজ পড়া অবস্থায় তাদের আলাপ শোনা যায়। এমতাবস্থায় নামাজ্রত মহিলা আপত্তিকর কোন আলাপ শুনে তবে সেক্ষেত্রে নামাজ বন্ধ করে তাদের আলাপ শুনে নিতে পারবে।

খ) কোন মহিলা যদি গোসলের প্রয়োজনবোধে টাকার অভাবে পানি সংগ্রহ করতে না পেরে গোসল বন্ধ করে দেয়। তবে সে স্বামীর অনুমতি ছাড়াই বাড়ির যেকোন জিনিস বিক্রয় করে গোসলের পানি সংগ্রহ করতে পারবে। আর যদি স্বামী এই ব্যাপারে কোন পাত্তা না দেয় তবে স্বামীকে গালমন্দ করা হলেও মোটেই দোষণীয় নয়। এটাই প্রচলিত নিয়ম।

‘মাচাঙ’ এর পরবর্তী কোন সংখ্যায় বাসর ঘরকে কেন্দ্র করে পারস্যে প্রচলিত হরেক রকম মজার ও আকর্ষণীয় নিয়ম কানুন তুলে ধরার ইচ্ছে রইল।


লেখকঃ
মুমিত আল রশিদ
উপদেষ্টা, লোরক সোসাইটি
শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×