somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুভ জন্মদিন ঢাবির উপাচার্য শ্রদ্ধেয় আআমস আরেফিন সিদ্দিক

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


২৬ অক্টোবর, ২০১৩
শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধেয় অভিভাবক আবুল আহসান মোহাম্মদ সামসুল আরেফিন সিদ্দিক,

ঘড়ির কাঁটা তখন রাত ১ টা অতিক্রম করেছে। বিশাল বড় ড্রয়িং রুমে কিছুক্ষণ আগে আরও দর্শনার্থী ছিল তারাও চলে গেছে একে একে। এখন রুমে মাত্র তিনজন প্রাণী। একজন বেয়ারা এসে একটি প্লেটে করে মিষ্টি দিয়ে গেল। সেই মিষ্টি দেখেই একজন তাগাদা দিয়ে বলে উঠলেন- আসল পোড়াবাড়ির চমচম। আজই আনিয়েছি। জলদি খাও। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী অনেক মিষ্টি বা খাবার খেতে চাইলে আপনি এখানে আসতে পারেন কারণ ওনার শখের মধ্যে একটি হচ্ছে তিনি এগুলো নিজ তদারকিতে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন আর নিয়ে এসে কার্পণ্যতা করে শুধু একাই খান না সবাইকে দিয়েই খান। এইকথাগুলো এভাবেই বলতে ছিল আবুল হাসনাত সোহাগ। তাদের পত্রিকা DUTIMZ এর কাজে তারা ঐ মানুষটির সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। রাত ১ টা বেজে গেলেও তিনি দেখা করতে বিরক্ত প্রকাশ করেন নাই বরং মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করেছিলেন। আর সেই মানুষটি আর কেউ নয়, আমাদের সবার পরিচিত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক, আমাদের শ্রদ্ধেয় উপাচার্য অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিক স্যার। আজ আপনার ৬০ তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৫৩ সালের আজকের এই দিনে ঢাকার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে আপনি জন্মগ্রহণ করেন। তাই এই চিঠির ভূমিকাতে আবারও জন্মদিনের শুভেচ্ছা রইলো।

জীবনের ষাটটি বসন্ত কেটে গেল। দেখতে দেখতে পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত ২১৯০০ টি দিন কাটিয়ে দিলেন। সেই ২১৯০০ টি দিনের অর্জন ও ব্যর্থতার মূল্যায়ন করার দুঃসাহস আমার নেই। তবে আমি যে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গর্ববোধ করি যেখানে পড়ার সুযোগ লাভের কারণে আমি আমার জীবনকে বদলাতে সক্ষম হয়েছি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হচ্ছেন আপনি। অর্থাৎ আমার ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের কারিগর এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক আপনি। তাই অভিভাবক হিসেবে আপনার মূল্যায়ন করতে চাই। আপনি নিজেকে নিয়ে গর্ব অনুভব করতে পারেন সেই সাথে আমরাও করি কারণ আপনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর ছাত্রত্ব আবার ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট যে সমাবর্তনে ওনার যোগ দেবার কথা ছিল সেই সমাবর্তনের উপহার সামগ্রী আপনি তার পরিবার এর কাছে ফিরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কমুক্ত করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঋণমুক্ত করেছেন। আমাদের লজ্জার হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর যথাযথ সম্মান তাকে ফিরিয়ে দেবার জন্য এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আপনার এই উদ্যোগ আজীবন মনে রাখবে। আর আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনার এই উদ্যোগের জন্য হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে ভালোবাসা জানাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৪০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করে। এখানেই জীবনের ৫টি বছর কাটিয়ে দেয় অথচ কখনো তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবকের সাথে দেখা করার সুযোগ হয় না, তার সাথে হাত মেলানোর সুযোগ হয় না। সেক্ষেত্রে আমি নিজেকে নিয়ে গর্ব করতে পারি কারণ আপনার সাথে আমার অনেকবার দেখা করার সুযোগ হয়েছে, কথা বলার সুযোগ হয়েছে, হাত মেলানোর সুযোগ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থাকাকালীন আমি বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া লোকসংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের জন্য ‘লোকসংস্কৃতি রক্ষা করি (লোরক) সোসাইটি’ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগ নেই। আমাদের সংগঠন থেকে প্রকাশিত ‘মাচাঙ’ সাময়িকীর জন্য আপনার কাছ থেকে যখন শুভেচ্ছা বাণী আনতে যাওয়া হয় আপনি তখন স্বেচ্ছায় সেই শুভেচ্ছা বাণী দেন। আপনার এই শুভেচ্ছা বাণী আমাকে কতটা সাহস দিয়েছে তা বলে বুঝাতে পারবো না। আমার মত এই ক্ষুদ্র মানুষকে বড় মানুষ হবার জন্য আপনি যে সাহস দিয়েছেন সেই কৃতজ্ঞতা লিখেও প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আপনি। জীবনে কতটা পরিশ্রম করে আজ আপনি এই পর্যন্ত এসেছেন। সেই পরিশ্রমের গল্প আমাদের জানাবেন বলে আশা করি কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনাকে আইডল হিসেবে অনেকেই মনে করে। তারা সেই গল্প জেনে উপকৃত হবে। ফার্সি ভাষা ও সাহিত্যে বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুমিত আল রশিদ ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে আইডল হিসেবে সম্মান করে তাইতো একদিন তার সামনে যখন আপনাকে নিয়ে খারাপ মন্তব্য করা হয় তিনি সাথে সাথে তার প্রতিবাদ করে যুক্তি উপস্থাপন করেন। তাকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম- উপাচার্য মহোদয়কে কেন আপনি আইডল মনে করেন? তিনি বলেছিলেন- ‘তাঁর রয়েছে মানুষকে আপন করে নেওয়ার সহজাত ক্ষমতা, তাঁর কাছে প্রত্যেকটি মানুষের একটি আলাদা মূল্য রয়েছে। তিনি না বললেও এটা সহজেই বুঝতে পারা যায় উপরোক্ত গুণগুলো সমাজ, রাষ্ট্র এবং পৃথিবীটাকেই বদলে দিতে পারে।‘

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে একটা ভয়ে ছিলাম- সেশনজটে আবার না পরে যাই। আপনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় কোন রাজনৈতিক সহিংসতায় বন্ধ হয়ে যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বাংলাদেশের একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টিতে পরীক্ষার হলে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসিয়ে গার্ড দেয়া হয় নকল দূর করার জন্য। সেশনজট ছাড়াই যথা সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করতে পারার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ জানাই। তবে আপনার অনেক ব্যর্থতাও আছে। এখনো ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সহাবস্থান নিশ্চিত হয়নি। হলে রাজনৈতিক দলের আধিপত্য। ডিজিটাল বাংলাদেশে দেশ এগিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি ডিজিটাল হতে পারেনি। আমাদের আইডি কার্ড ডিজিটাল নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ফটক নেই ফলে নিরাপত্তাহীনতা আছে। ক্যাম্পাসে রিকশাভাড়া বেশি। প্রায়ই এই নিয়ে রিকশাওয়ালাদের সাথে ক্যাচাল হয়। এইরকম হাজারো সমস্যা আছে। তবে হাজারো সমস্যা থাকলেও আপনি যে সৎ সাহস দেখিয়েছেন তাঁর জন্য আপনাকে সাধুবাদ জানাতে হয়। আগামী ৭ নভেম্বর আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে এক সংলাপে বসতে চলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এটাই প্রথম যে কোন ভিসি শিক্ষার্থীদের সাথে সরাসরি তাদের নানা সমস্যা ও পরামর্শ শোনার জন্য সংলাপ এর আয়োজন করতে পারে। সেই সংলাপ আশাকরি ফলপ্রসূ হবে এবং আরও অনেক সমস্যা সেদিন উঠে আসবে সেই সাথে তার সমাধান।

পরিশেষে, আপনার নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আরও সামনে এগিয়ে যাক সেই শুভকামনা রইলো। আর আমার জন্য দোয়া করবেন যেন আমি আমার কর্মের দ্বারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম আরও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করতে পারি।

ইতি
আলামিন মোহাম্মদ
সেশনঃ ২০০৭-২০০৮
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×