somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগ কড়চা: বাবুয়ার সার বিষয়ক পোস্ট এবং হাবিজাবি

২০ শে জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ৮:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"ব্লগার বাবুয়ার এক সার বিষয়ক পোস্টকে কেন্দ্র করে সামহোয়ারইনব্লগ আবার উত্তপ্ত" -- সামহোয়ার জাতীয় পর্যায়ে বিখ্যাত মাধ্যম হলে আজ সকালে হয়তো খবরের পত্রিকায় এরকম একটা খবর পাওয়া যেত। এবিষয়ক সব পোস্ট পড়া হয়নি, তবে যতটুকু পড়েছি তাতে মোটামুটি কি ঘটেছে তা আঁচ করতে পারছি। সেখান থেকেই একটা পয়েন্টে হতাশা বোধ করে এই লেখার অবতারনা, সেই অবতারনায় অনেকের সমালোচনা থাকে (যেহেতু হতাশা নিঃসৃত), সেটা কারো উপকারে আসবে নাকি কাউকে রাগিয়ে তুলবে, সেটা সবসময় ভাবলে তো আর হয়না।

কমিউনিস্ট শাসনামলে অন্যসবকিছুর মতোই সোভিয়েত রাশিয়ায় চলচ্চিত্রের উপর সেন্সরশীপটা ছিল খুবই কড়া (সম্ভবতঃ এখনও একই অবস্থা)। কোনভাবেই যেন শাসকগোষ্ঠীর কোনরূপ সমালোচনা না হয়, সেদিকে সেন্সরবোর্ডের কর্তাব্যক্তিরা খুব সতর্ক চোখ রাখত। কিন্তু এত কিছুর মাঝেও সলঝেৎসিন টাইপের লোকেরা তো আর চুপ থাকতে পারেনা! তারা ঠিকই সরকারকে খোঁচা দেয়ার উপাদান রেখে দিত ফিল্মে। কিন্তু সেন্সরবোর্ডের চোখ সেখান থেকে সরানোর জন্য তারা যা করত তা হলো, খুব বিমূর্ত কিছু অর্থহীন দৃশ্য ফিল্মে ঢুকিয়ে দিত। যেমন ধরুন খুব হাই টেনশন এ্যাকশন মুভির ভেতর হঠাৎ দেখা যেত, 'শান্তশিষ্ট শীতের সকালে এক পার্কের বেঞ্চিতে একটা কাক বসে আছে, একটু পরে উড়ে গিয়ে একটা গাছের ডালে বসল।' মূল ছবির কাহিনীর সাথে এসব দৃশ্যের কোন সম্পর্ক থাকতোনা। মজাটা ছিলো সেখানেই, সেন্সরবোর্ডের কর্তারা এসব বিমূর্ত দৃশ্যের নিশ্চয়ই কোন অন্তর্নিহিত অর্থ আছে ভেবে সেটা খুঁজতেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়তেন। ফলাফল যা হতো, কোন কূল কিনারা করতে না পেরে সেই দৃশ্যগুলো তারা সেন্সর করতেন, এবং এই ভেবে স্বস্তি পেতেন যে "সরকারবিরোধী হতে পারে এমন দৃশ্য"গুলোকে কেটে ফেলা হয়েছে। ওদিকে মূল ঘটনার ভিতর নির্মাতার নির্দেশ করা আসল সমালোচনা বা খোঁচাগুলো বহাল তবিয়তেই থেকে যেত। এভাবে মনোযোগ ডাইভার্ট করা বা ঘুরিয়ে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ার পদ্ধতি অবশ্য আমরা অন্যান্য ক্ষেত্রেও দেখতে পাই, এটার একটা সোশিওকালচারাল টার্মও আছে ("সামথিং ইফেক্ট" হিসেবে এই কূটচালটা পরিচিত) যদিও এই মুহূর্তে মনে পড়ছেনা সেটাকে কি বলা হয়! আমি এখানে খুব সাধারণ একটা নাম দিলাম, "সাইডমিরর ইফেক্ট"।

আরেকটু সহজ একটা উদাহরণ দিই। এই সাইডমিরর ইফেক্টটা মানুষের ভুলেও ঘটে, অনেকটা ন্যাচারাল ইফেক্টের মতো। যেমন ধরুন আপনার গাড়ীতে পেছন থেকে এসে একটা বাইক ধাক্কা দিলো। আপনার ড্রাইভার গাড়ী থেকে বের হয়ে দেখলো গাড়ীর কোন একটা অংশে ট্যাব খেয়ে গেছে। মেজাজ সামলাতে না পেরে সে বাইকের জওয়ানদের বলে বসলো, "ঐ খানকি-মাগীর পোলা, দেইখা চালাইতে পারোস না!" তাহলে কিন্তু শেষ! এরপর আপনার গাড়ীর ট্যাব খাওয়াজনিত ক্ষতিপূরণ পাওয়া তো দূরের কথা, ব্যস্ত রাস্তা হলে আঘাতবিহীন শরীরে বাসায় ফেরাটাই দূঃসাধ্য হয়ে যাবে। আর আপনার গাড়ীর দুচারটা কাঁচ তো ভাঙবেই! এখানেও, মূল বিষয়টা ছিলো বাইকচালকের ভুলে গাড়ীতে ট্যাব পড়া, কিন্তু ন্যাচারাল "সাইডমিরর ইফেক্টের" কল্যাণে সেটা হয়ে যাবে "তুই আমারে গালি দিলি ক্যান" ইস্যু!

এগুলোর সবই আমাদের জানা।

২.
একদম ডাইরেক্টলি বলি, ব্লগার বাবুয়া সম্ভবতঃ বিএনপি সাপোর্টার, অথবা নিদেনপক্ষে ঘোরতর আওয়ামী লীগ বিরোধী। সেজন্যই ব্লগার ফকির ইলিয়াসের পোস্টে সার সংক্রান্ত শুভংকরের ফাঁকিটি, যেব্যাপারে তাঁর কাছে বেশ ভালো তথ্য আছে, সেটাকে তিনি সমালোচনা চড়িয়ে ব্যক্ত করতে গেছেন। তারপর নিজে একটা পোস্ট দিয়েছেন। এখানে কারো কিছু করার নেই, আপনার হাতে মোক্ষম অস্ত্র থাকলে আপনি সেটা ব্যবহার করবেনই।

কাজেই বাবুয়ার দেয়া সেই সার সংক্রান্ত পোস্ট, যেখানে তিনি বেশকিছু তথ্যের মাধ্যমে তুলে ধরতে চেয়েছেন যে সরকারের সাম্প্রতিক ঘোষিত সারের দাম ৫৫% কমানোর ব্যাপারটি আসলে ১২৩৬ কোটি টাকা ১২ জন বিশেষ অনুরাগভাজন আমদানীকারকের হাতেই তুলে দেয়া, সেটা দিয়ে তিনি খুব ভালো কাজই করেছেন। বিশেষ করে যখন দেশের অধিকাংশ পত্রিকাই আওয়ামী লীগের প্রতি দূর্বল, তখন ব্লগমাধ্যমে এধরনের তথ্যনির্ভর পোস্ট আসাটা আমাদের ব্লগারদের জন্যও ভীষনভাবে পজিটিভ। তবে, তিনি নিজের প্রদত্ত তথ্যের যুক্তিগ্রাহ্যতা বাড়ানোর জন্য নিজেকে "গত ১৪ বছর যাবত একজন প্রতিস্টহিত ফার্টিলাইজার ইম্পোর্টার এবং তার কোম্পানীর নিয়োগকৃত সারা দেশে ছয় শতাধিক সম্মানিত ডিলার আছেন" বলে পোস্টে প্রচার করেই "সাইডমিরর ইফেক্ট" তৈরী হবার একটা সুযোগ দেয়ার মতো একটা ন্যাচারাল ভুল করলেন।

এখন আবার ডাইরেক্টলী বলি, বাবুয়ার পোস্টে এসে তাঁর এই ১৪ বছর ধরে ইম্পোর্টার তথ্যের উপর ভর করে, "চাকুরী দিন", "আমি অমুক পাশ" -- এসব বলে তাকে উত্যক্ত করেছেন যারা তারা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে এরকম তথ্যসমৃদ্ধ সমালোচনা সহ্য করতে পারেননি, কারণ তাঁরা হয়ত দলটির অন্ধভক্ত। কাজেই তারা "সাইড মিরর ইফেক্ট"র সুযোগ নিয়ে মূল আলোচনাটাকে পুরোপুরি ডাইভার্ট করেছেন। তারা এখন যতই এগুলোকে "রসিকতা" বা "ঠাট্টা" বলুননা কেন, আমার নিজস্ব বিচারবুদ্ধিতে আমি বলবো, এটাকে কোনভাবেই ঠাট্টা মনে হয়নি, এটাকে মনে হয়েছে একজনকে ইরিটেট করা!

একটা বিষয় ঠাট্টা তখনই থাকে যখন সেটা অন্যপক্ষ হাসিমুখে গ্রহন করে বা অন্যপক্ষকে হাসানোর জন্য করা হয়, এটা বুঝাতে রকেট সায়েন্টিস্ট হবার দরকার নেই। আর যখন কাউকে খোঁচানোর জন্য দলবেঁধে ফাজলামো করা হয়, তখন সেটা বুলিংয়ের পর্যায়ে চলে যায়। বাবুয়ার সেই পোস্ট দেখে আমার সাধাসিধেভাবে এটা মনে হয়েছে যে, সরকারের পলিসির এরকম তথ্যসমৃদ্ধ সমালোচনা সহ্য করতে না পেরে বিষাক্ত মানুষ, আরণ্যক, মকবুল ও আরো কয়েকজন হবেন, তাঁদের সবাই দলবেঁধে বুলিংয়ে নেমেছেন। সেই সাথে পরে বন্ধুত্বের খাতিরে আরো কয়েকজন যোগ দিয়েছেন। এ ধরনের ফাজলামোকে আমি কোনভাবেই সমর্থন করতে পারিনা।

এরপর বাবুয়া যেটা করলেন সেটা আমাদের সিনিয়র ব্লগারদের কমন দোষ। তাঁরা ভার্চুয়াল আর বাস্তবের পার্থক্যটা ঠিক ধরতে পারেননা, হম্বিতম্বি শুরু করেন, গালিগালাজ শুরু করেন। তারা বোঝেননা যে তাঁকে উত্যক্ত করা হচ্ছেই যাতে তিনি ফাউল করেন। সেজন্যই "বাস্টার্ড" শব্দের মতো আপত্তিকর গালি এরা অনয়াসেই দিয়ে বসেন। তিনি কিন্তু এক্ষেত্রে উত্যক্তকারী ব্লগারদের গালিগালাজ না করে জিজ্ঞেস করতে পারতেন, "পোস্টের বক্তব্যের বিষয়ে আপনার মতামত কি?", তাহলেই হয়! এটা হয়ত ব্যক্তিবিশেষে ডিফার করে, তবে "আমি এই, আমি সেই" , "তুই কে?", অনেক সিনিয়র ব্লগারদের এরকম হামবড়া মনোভাব অনেকক্ষেত্রেই ব্লগারদের মধ্যে জেনারেশনঘটিত বিভেদ তৈরী করবে।


৩.
ফলাফল যেটা হলো সেটা খুব দূর্ভাগ্যজনক। বাবুয়ার পোস্টটিতে অনেক "ভেতরের খবর" আমরা দেখতে পাচ্ছি, কিছু প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে যেগুলো নিয়ে হয়তো পোস্টটাকে "উত্যক্তকারী ব্লগার"রা নষ্ট না করলে আলোচনাও করা যেত। কিন্তু সেগুলোর কিছুই হলোনা, কয়েকজন ব্যান হলো, কারো স্ট্যাটাস নামলো, সেগুলো নিয়ে পোস্টের পর পোস্ট পড়লো। এখনও দেখছি ঝগড়া চলছেই!

আমাদের কৃষক বেচারাদের ভাগ্য নিয়ে যে ছিনিমিনি খেলার ইঙ্গিত আমরা পেলাম তা নিয়ে আমাদের ব্লগারদের কারুরই তেমন একটা কষ্ট বা প্রতিক্রিয়া দেখা গেলোনা! এরচেয়ে হতাশার বিষয় আর কি হতে পারে!!

বটমলাইন হলো, দেশের মানুষের স্বার্থজড়িত এরকম সমালোচনাগুলোকে যদি আমরা ব্লগে সহ্য করতে না পারি, তাহলে ব্লগিংয়ের মূল ফল আমরা কখনই পাবোনা, সারা জীবন ছাগলের তৃতীয় ছানার মতো নৌকা বা ধানের শীষ হাতে তাধিন তাধিন নাচতে নাচতেই চলে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ৮:৪১
১৭১টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×