somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বকাপের কোচেরা

১৬ ই জুলাই, ২০১০ রাত ৮:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্বকাপের মূল জ্বরটা নিশ্চয়ই নেমে গেছে এখন; কে চ্যাম্পিয়ন হবে, কে গোল্ডেন বুট আর গোল্ডেন বল -- এসব নিয়ে জল্পনা কল্পনাও শেষ। এখন হয়তো বেচারা কোচদের দিকে একটু নজর দেয়া যায়।

বিশ্বকাপের মাঠে দৌড়োদৌড়ির পরিশ্রমটা মূলতঃ খেলোয়াড়রা করলেও, বিশ্বকাপ আলোচনাকে মাতিয়ে রাখতে খেলোয়াড়দের চেয়েও কম যাননা যাঁরা, সেই কোচেরাই এই লেখার আলোচ্য। নানান ধরনের এই চরিত্রগুলো প্রতিবারই বিশ্বকাপে নানা রকমের আলোচনার জন্ম দেন, কখনও তাঁদের কেউ কেউ হয়ে যান মহান বীর, কখনও মিডিয়ার আক্রমনের মোক্ষম শিকার, আবার কখনও স্রেফ হাসির পাত্র। সব মিলিয়ে খেলোয়াড়দের চেয়ে কোন অংশেই কম রং ছড়াননা তাঁরা। এবারও বিশ্বকাপের বত্রিশটি দলের কোচদের দেখে যা মনে হয়েছিলো, বা তাঁদের সম্পর্কে এখানে ওখানে যা শুনেছি এসব মিলিয়েই একটা জগাখিচুড়ী এই লেখাটি। একেবারে আনাড়ী লেখা, তথ্যের চেয়ে বাকোয়াজই বেশী, আগেই বলে রাখি, সিরিয়াস মুডে না পড়াই ভালো।

কোচদের দেখলে কি আসলেই কোচ মনে হয়?
প্রথমেই বলা যাক খেলার মাঠের পাশেই বেঞ্চ এলাকায় বসে থাকা এই কোচদের চেহারা, পোশাক-আশাক বা আচার আচরণ দেখে যে ইম্প্রেশন আমার হয়েছে সেটা নিয়ে। খেলা দেখতে দেখতে যা লক্ষ্য করলাম তা হলো, এদের অনেককে দেখেই ফুটবলের কোচের চেয়েও অন্য কোন পেশায় বেশী মানানসই বলে মনে হয়েছে। যেমন ফ্রান্সের কোচ রেমন্ড ডমেনেখ। মাঠের বাইরে এই লোককে দেখে ফুটবল নিয়ে আলোচনা করতে কেউ উৎসাহ বোধ করবেনা আমি কনফার্ম। খেলার গো-হারা হারতে থাকা দলের দিকে কোনরকম রাগ, ক্ষোভ বা বিরক্তি ছাড়া উদাসচোখে তাকিয়ে থাকা এই কোচের উস্কোখুস্কো সাদাকালো চুল দেখলে মনে হয় তিনি অর্কেস্ট্রার মাস্টার, এখনই কোটের ভেতরের পকেট থেকে দুটো কাঠি বের করে নাচাতে শুরু করবেন।
তবে শেষদিনে ব্যাটার আচরণে আমি ভীষন বিরক্ত হয়েছি, খেলা শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ পাহেইরার সাথে সে হ্যান্ডশেক করলোইনা! কারণটা নাকি আয়ারল্যান্ডের সাথে প্রস্তুতিপর্বে আনরির হাত দিয়ে করা গোল নিয়ে পাহেইরার সমালোচনা। ভাগ্যিস ব্যাটা মিউজিক লাইনে আসেনি, এমন গোঁয়াড় লোকের কাছ থেকে কিরকম মিউজিকই বা আশা করা যায়?
অথবা ধরা যাক চিলির কোচ মার্সেলো বিয়েলসার কথা! কিরকম শূণ্যদৃষ্টি নিয়ে ক্যামেরার দিকে তাকান, মনে হয় কাজী নজরুল ইসলাম! তাঁর চলাফেরাও কেমন যেনো এলোমেলো, এই দেখা গেলো বেঞ্চে বসে আছেন, পরের মুহূর্তেই দেখা গেলো বেঞ্চ ছেড়ে এরিয়ার এক কোণায় গিয়ে কি ভাবছেন। আর খেলোয়াড়দের প্রত্যেক মুভেই বিরক্তির প্রকাশ তো আছেই। কবি অথবা চিত্রশিল্পী হলেই যেন তাঁকে বেশী মানাতো। তবে এখনকার যুগের খুব হাতেগোণা কয়েকজন কোচের একজন তিনি যাঁরা এ্যাটাকিং ফুটবলকে ছাড়েননি। প্রি-কোয়ার্টারে বিদায় নিলেও এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে "সুন্দর" ফুটবল খেলেছে আর্জেন্টিনার পর চিলিই।
আবার ধরুন, হল্যান্ডের কোচ, মারউইক নাম সম্ভবতঃ, ভদ্রলোককে দেখে আপনার কি মনে হয়? দেখুন তো একমত হতে পারেনন কিনা? পোশাক, চুলের শেড, ভদ্র, বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার এই লোককে দেখে আমার ফার্স্ট ইম্প্রেশনই ছিলো তিনি হল্যান্ড দলের ফ্যাশন ডিজাইনার, মনে হচ্ছিলো এঁর নাম আরমানি, রাল্ফ লরেন বা গুচ্চি টাইপের কিছু। আবার জার্মান কোচ জোয়াকিম লো, বেশ কিছু হলিউড সিনেমার পরিচালকরা কি অলরেডী এই ভদ্রলোককে নায়কের রোলে রেখে সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা শুরু করে দেননি?
অন্যদিকে সুইজারল্যান্ডের কোচ যিনি, নাম মনে নেই, তাঁকে দেখে ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ছাড়া আর কিছুই মনে হবার কোন জো নেই। খেলোয়াড়দের ভুলে বা গোল মিস হলে ভদ্রলোক যে মৃদু প্রতিক্রিয়া দেখান, সমান্য কপাল চাপড়ে বা দাঁড়ানো অবস্থা থেকে টুক করে বসে পড়ে, তা দেখে মনে হয় এর উপযুক্ত ক্যাপশন হবে, "ইশ্, অংকটা এবারও মিললোনা!" উরুগুয়ের কোচেরও একই দশা, এই ভদ্রলোকের ক্ষেত্রে আবার স্কোপটা একটু বেশী, ইউনিভার্সিটির প্রফেসরের সাথে সাথে তাঁকে হাইস্কুলের ম্যাথ বা সাইন্সের টিচার বলেও চালানো যাবে। চেহারা আর পোশাক আশাকের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তাঁর ধীরস্থির চালচলনও বাহ্যদৃষ্টিতে তাঁকে ফুটবল কোচের চেয়ে অনেক দূরে সরিয়ে রেখেছে।
আরেক সেমিফাইনালিস্ট স্পেনের কোচ দেল বস্কের বেলায় ঘটনা আবার একশো আশি ডিগ্রী মোড় নেয়, প্রথমদিন স্পেনের খেলা দেখতে বসে আমি অনেকক্ষণ স্পেন বেঞ্চে কোচকে খুঁজেছি, কোচ কই, কোচ কই? এই লোককে দেখলে মনে হয় শুঁড়িখানার মালিক, বা বড়জোর মধ্য আমেরিকার রুক্ষ কোন অঞ্চলের পাড়া দাপিয়ে বেড়ানো শেরিফ হিসেবে মেনে নেয়া যায়, তাই বলে কোচ? ভদ্রলোক আবার ডাকসাইটে ফুটবলারও ছিলেন।
আর অতিশয় বৃদ্ধ দুই কোচ মারসেলো লিপ্পি আর ডেনিশ কোচ (নাম মনে নেই), এদের দুজনকে দেখে মনে হয়েছে "ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি", বিশেষ করে ডেনিশ কোচের মনে হয় আসলেই সেই অবস্থা। দশ বছর ধরে জাতীয় দলের কোচ। আর কত? ওদিকে লিপ্পিকে বিড়বিড় করতে দেখলে দেশের নানা-দাদাদের কথা মনে পড়ে যায়, মনে হয়, অবসর সময়ে বসে আছেন, হাতে কাজ নেই, তাই কিছু দোয়া খায়ের করে নেকী বাড়িয়ে নিচ্ছেন।
কেন জানিনা, সেই ৯০/৯৪ থেকেই ব্রাজিলের দুঙ্গাকে দেখলে আমার মনে হতো এই লোকটার চেহারা নাবিক নাবিক, আর দক্ষিণ আফ্রিকার পোর্ট শহরগুলোতে খেলা চলার সময় ক্যাজুয়াল ড্রেসে বেঞ্চে থাকা দুঙ্গা শুধু সেই ইম্প্রেশনের সম্প্রসারণই করেছেন। হলিডে পোশাকের দুঙ্গাকে দেখে যদি বলি এইমাত্র জাহাজ পোর্টে ভিড়েছে, নাবিক মহাশয় একটু ফ্রেশ হয়েই সরাসরি খেলা দেখতে চলে এসেছেন -- আপত্তি করা যায়?
অন্যদিকে ইংল্যান্ডের টেন মিলিয়ন ডলার ম্যান ফ্যাবিও ক্যাপেলোকে কি কোনভাবে কোচ বলে চালানো যায়? ভাবসাব যা! এই লোককে একমাত্র কর্পোরেট সিইও'র চেয়ারেই মানায়। আর আমেরিকান কোচ ব্র্যাডলিকে দেখে তো মনে হয় সাক্ষাৎ ব্যাড বয়, বড়জোর রাগবি খেলোয়াড়। তবে স্লোভেনিয়ার ম্যাচে বেচারার দলের শেষ গোলটা অকারণে বাদ হওয়ার পর যেরকম নিরীহ গোবেচারা চেহারা করে তিনি অভিযোগ করছিলেন, তাতে আবারও মেনে নিতে হয়েছে, "যা দেখি সব ঠিক দেখিনা!"

সবার ওপরে ম্যারাডোনা, তাহার ওপরে ....
তবে সবকিছু ছাড়িয়ে গেছেন একজনই, আমাদের "দ্য ডন", হিজ এক্সেলেন্সী, সুলতান-ই-ফুটবল, সেনিওর ডিয়েগো ম্যারাডোনা। হোয়াট আ শো! ম্যারাডোনা যে আসলেই ম্যারাডোনা, আবারও প্রমাণ করলেন। শুধু ভালো খেলে নয়, সব কিছু মিলিয়েই আলোচনার একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতেই ছিলেন তিনি। দুহাতে ঘড়ি, নানারকম তন্ত্র-মন্ত্রে-রুদ্রাক্ষের মালা, কানের দুল, ছাঁটাই করা সাদা-কালো দাড়ি, ঝা-চকচকা স্যুট -- সত্যিকারের মাফিয়ার ডনের আশপাশ থেকেও তো এমন পারফেক্ট অরা বের হবার না। তার ওপর শিশুসুলভ অঙ্গভঙ্গি, বাঁধাভাঙা উল্লাস, কোলাকুলি, কোলে চড়া, ফুটবলের ক্যারিকেচার -- ম্যারাডোনাকে দেখে মনে হয়েছে তিনি আরো শিশুতে পরিণত হয়েছেন।
শুধু আচার আচরণেই নয়, কথাবার্তাতেও তাই। আগের ম্যাচে গ্রীসকে দুই গোলে হারানো কোরিয়াকে নিয়ে খানিকটা টেনশনে ছিলেন, খেলা শেষে তাই ভীষন আনণ্দিত। ফুরফুরে মেজাজে প্রেস কনফারেন্সে এসেছিলেন একটা আপেল হাতে। আপেলে কামড় বসাতে বসাতেই সেরকমই স্বাদযুক্ত উত্তর দিলেন সাংবাদিকদের। যেমন মেসির প্রসঙ্গ আসায় বললেন, মেসির পা থেকে বল কেড়ে নেয়া ক্ষুধার্ত আমার কাছ থেকে এই আপেলটি কেড়ে নেয়ার চেয়েও কঠিন! আবার খেলোয়াড়দের প্রত্যেককে ধরে ধরে চুমু খাওয়ার প্রসঙ্গে হঠাৎই গোল গোল চোখ করে নিজেকে পরিস্কার স্ট্রেইট বলে ঘোষনা দিলেন, এমনকি তাঁর বর্তমান প্রেমিকার চুল যে সোনালী সেটা বলতেও ভুললেননা। তবে এসব মিলিয়ে মনে হয়েছে ম্যারাডোনাকেই আসলে ফুটবল মাঠে মানায়।

কোচ কেন ব্যাজার?
কোন সিনেমার ট্রেইলার না, ঘানার কোচের কাহিনী। ভদ্রলোকের নামের উচ্চারণ সম্ভবতঃ রাজেভাক। যারা ঘানা-সার্বিয়ার ম্যাচটি দেখেছেন তারা নিশ্চয়ই কিছুটা হলেও বিস্মিত হয়েছেন সারাক্ষণ গোমড়ামুখ করে থাকা এই কোচকে দেখে। ঘানা গোল দিলো, তাও গোমড়া মুখ, যেন রামগড়ুড়ের ছানা। পরে অবশ্য দেখা গেছে যে ভদ্রলোক সবসময়েই গোমড়ামুখে থাকেন, কেমন একটা কাঁদো কাঁদো চেহারা। হঠাৎ দেখে কেউ যদি ভেবে বসে যে এইমাত্র তাঁর কোম্পানীটির দেউলিয়া হবার খবরটা ফোনে শুনতে পেয়ে তাঁর এই অবস্থা, আশ্চর্য হবোনা।
তারপরও, সার্বিয়ার সাথে ম্যাচের দিন তাঁর আচরণ ছিলো রীতিমতো অস্বাভাবিক। খেলা শেষ, তাঁর দল ঘানা জিতেছে, সবাই আনন্দ করছে, আর তিনি বিমর্ষ মুখে বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ফিরে যাবার জন্য রওয়ানা দিয়েছেন! যেখানে আর্জেন্টিনার মতো দলের ক্ষেত্রে নাইজেরিয়ার সাথে জিতেও প্রত্যেকটা খেলোয়াড়কে "আদর" করে দিয়েছিলেন কোচ ম্যারাডোনা, সেখানে সার্বিয়ার মতো শক্ত ইউরোপিয়ান প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে জিতেও সন্তুষ্ট নন তিনি!
কোন খেলোয়াড়কে তো অভিবাদন জানালেনই না, এমনকি যখন ঘানা দলের একজন আনন্দে লাফাতে লাফাতে তাঁকে আলিঙ্গন করতে এলো, হাত ঝামটা দিয়ে তাকে সরিয়ে দিলেন। পুরো দৃশ্য দেখে তো আমি হতবাক, নানান প্রশ্ন মনে, "এই লোক কয় গোলে জিততে চাইছিলো?" , "ব্যাটা কি বর্ণবাদী নাকি?", "ঘানা সরকার তার বেতন বকেয়া রেখেছে নাকি?" -- প্রশ্নের তো আর শেষ নেই। পরে অবশ্য জানা গেলো ওসব কিছুইনা, ভদ্রলোকের মন খারাপের কারণ হচ্ছে পারজিত পক্ষ সার্বিয়া হচ্ছে তাঁর নিজের দেশ। সেজন্যই নাকি তাঁর মন এতটাই খারাপ হয়েছে যে সেটা লুকোনোর ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছিলেন।
ঘটনা এখানেই শেষ না, এমনকি, খেলা পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনে তা স্বীকারও করেছেন রাজেভাক, বলেছেন, অনুভূতিটা খুব জটিল। জাতীয়তাবাদের কাছে প্রফেশনালিজমের হেরে যাওয়া সম্ভবতঃ এই প্রথম দেখলাম ফুটবল খেলায়।

জোড়ায় জোড়ায়
এবারের বিশ্বকাপে বাবা কোচ ছেলে খেলোয়াড় এমন জোড়া এসেছেন দুটি দলে -- যুক্তরাষ্ট্র আর স্লোভাকিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যাডলি বাবার মান রেখেছেন, শুধু মাঝমাঠে দুর্দান্ত খেলাই খেলেননি, যে অসামান্য গোলটির কারণে তাঁর দল পরের রাউন্ডে উঠেছে, সেটি তিনিই করেছেন। অন্যদিকে স্লোভাকিয়ার কোচের নাবালক পুত্রটির খেলা এবার অত চোখে পড়েনি, মাঝখানে এক খেলায় বসিয়েছেনও সম্ভবতঃ। জানিনা এখন দেশে ফিরে গিয়ে বাপ-বেটা কোনো রকম তোপের মুখে পড়েছে কিনা।
পুত্র পিতার মুখ রক্ষা করলেও, হবু শ্বশুরের মুখ রক্ষা করতে পারেননি কুন আগুয়েরো, অবশ্য জার্মানীর সাথে ম্যাচে সম্ভবতঃ তিন গোল খাওয়ার পর শ্বশুরমাশইয়ের জামাইর কথা মনে পড়েছে, তাই ঐ সময়ে নেমে কিছু করতে না পারার জন্য বেচারাকে তেমন দোষও দেয়া যায়না। নিদেনপক্ষে কোরিয়ার বিরুদ্ধে তো একটা এ্যাসিস্ট তার আছে।

কোচদের বেতন
আমরা সবাই জানি এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশী বেতন কে পাচ্ছেন। ফ্যাবিও ক্যাপেলো, চেহারা সুরতেও বলে দেয়, কেমন কর্পোরেট সিইও সিইও ভাব! বছরে এক কোটি ডলার তাঁর পারিশ্রমিক!!!!!!! এই "!"গুলোর গুরুত্ব বুঝতে হলে যে তথ্যটা জানতে হবে তা হলো বেতনের র্যাংকিংয়ে তাঁর পরেই আছেন যিনি, মেক্সিকোর কোচ, তিনি পান ত্রিশ লাখ ডলারের ঘরে। তিন গুণেরও বেশী হয়তো গুনছেন ক্যাপেলো। ইংলিশ ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন অবশ্য এরকম জুয়ার দান খেলে এখন ফেঁসে গেছে। প্রায় কোন অর্জন ছাড়াই ফিরে এসেছেন কোটি-ডলার ম্যান ক্যাপেলো এবং তাঁর কোটি-ডলার ম্যানদের নিয়ে গড়া ইংল্যান্ড দল। কিন্তু দু'বছরের চুক্তির পুরো টাকাই দিতে হবে বলে অমন বিশাল টাকা গচ্চা দেবার চেয়ে ক্যাপেলোকে বহাল রাখারই সিদ্ধান্ত এ্যাসিসিয়েশন নিয়েছে। চাল্লু একটা ম্যানেজার বাগানোর কৃতিত্বটা যে অন্ততঃ ক্যাপেলোর প্রাপ্য সেটা অস্বীকার করার জো নেই।
দুনিয়ার সব কিছুতেই টুইস্ট বা পেঁচগী খোঁজা আমার একটা বদঅভ্যাস। এই বেলা ইংল্যান্ডের পরাজয় বিষয়ে একটা টুইস্ট খুঁজে পেলাম। উরুগুয়ের রেফারীর ভুল ডিসিশনে সেদিন জার্মানীর সাথে খেলায় ল্যাম্পার্ডের গোলটি বাতিল হওয়ার সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারী কে? এই প্রশ্ন নিয়ে ভাবতে গিয়ে দেখলাম, মহান ফ্যাবিও ক্যাপেলোই এর সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারী। সেদিন ইংল্যান্ড এমনেও হারতো, আর তখন প্রি-কোয়ার্টারে বিদায় নেয়ায় সব দোষ গিয়ে পড়তো ক্যাপেলোর ঘাড়েই। ভাগ্য শালার বড়লোকদের পক্ষেই কাজ করে, এখন সব দোষ সামলাচ্ছেন বেচারা উরুগুইয়ান গরীব রেফারীটি, আর ক্যাপেলো তাঁর আলীশান ড্রয়িংরুমে দুষ্প্রাপ্য কোন পাখির সুস্বাদু মাংস চিবোতে চিবোতে ঠিক করছেন এরপর হাঙ্গেরী ম্যাচে কাকে বাদ দিয়ে কাকে দলে নিলে মিডিয়ার কাছ থেকে চোস্ত ধরনের একটা হাততালি কপালে জুটবে।
পশ্চিম ইউরোপের সব দলের কোচরাই কয়েক মিলিয়ন ডলার করে বেতন পাচ্ছেন, হল্যান্ড, জার্মানী, স্পেন, পর্তুগাল সবাই। এর মধ্যে ব্যাতিক্রম বেচারা রেমন্ড ডমেনেখ, তিনি পাচ্ছেন পাঁচ লাখ ডলারের ঘরে, ক্যাপেলোর বিশ ভাগের একভাগ! অথচ পাশাপাশি দেশ ইংল্যান্ড আর ফ্রান্স, লোকজনের আয়ও মোটামুটি কাছাকাছি। এক ব্লগে দেখলাম "ডমেনেখের এই বেতনে এর বেশী আশা করা উচিত না ফ্রান্সের" বা "ডমেনেখের উচিত ম্যানেজার বদলানো" এরকম মন্তব্য এসেছে। সেসব পরে নিজে যা ভাবছিলাম, দেখা গেলো পাশাপাশি সে মন্তব্যটাও ব্লগার করে ফেলেছেন, তিনি বলেছেন, "হয়তো খুব ভালো ম্যানেজার আছে বলেই এখনও ডমেনেখের মতো ভুয়া কোচ "এত বেতনে" এখনও টিকে আছে"।
কিছু ইন্টারেস্টিং তথ্য পেয়েছি কোচদের বেতনে চোখ বুলাতে গিয়ে। আমেরিকা, জাপান, ডেনমার্কের মতো উচ্চ আয়ের দেশেও কোচদের বেতন ইউরোপিয়ান কোচদের ধারেকাছেও না! জাপানী কোচ ওকাদা, দুঙ্গা, ম্যারাডোনা -- এঁরা সবাই পাচ্ছেন বছরে আট লাখ ডলার করে। এতে অবশ্য ওকাদা মশায়ের খুশীই হবার কথা, ম্যারাডোনা আর দুঙ্গার মতো জগৎজয়ী কোচ তাঁর চেয়ে বেশী পায়না। তবে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী আয়ের দেশ আমেরিকার কোচ পাচ্ছেন মাত্র তিন লাখ ডলারের কাছাকাছি, ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকে চাকুরী করা আমাদের বয়েসী অনেক পোলাপানও নাকি আমেরিকায় এর চেয়ে বেশী আয় করে! সর্বনাশ! ডেনিশ কোচও দুই আড়াই লাখের ঘরে পান, তার থেকে নিশ্চয়ই আবার অর্ধেকের বেশী ট্যাক্স কেটে নেয়! অথচ এই দেশের গড় আয় চোখ ধাঁধানো। সাধে তো আর দশ বছরে ধরে বেচারা কোচকে আটকে রাখেনি!
তবে আরো সর্বনাশা অবস্থা হচ্ছে বেচারা নিউজিল্যান্ডের কোচের। নিউজিল্যান্ড সরকার তাঁকে বেতন দিচ্ছে পার্ট-টাইমার হিসেবে, যেহেতু সারাবছর জাতীয় দলের দেখভাল করতে হয়না। আর এ বাবদ তাঁর পারিশ্রমিক নাকি মাত্র পঞ্চাশ হাজার ডলার!

ব্লগারদের অনেকেও হয়তো এর চেয়ে বেশী আয় করেন বা অদূর ভবিষ্যতেই করবেন। বিশ্বকাপ দলের কোচ, তাও আবার নিউজিল্যান;ডের মতো মোটামুটি উন্নত দেশের, সেই কোচের চেয়েও বেশী কামাই করছি বা অচিরেই করবো -- এই অনুভূতি নিশ্চয়ই বেশ স্বস্তিদায়ক?
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১০ রাত ৮:২৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×