somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কর্মক্ষেত্রে আমি যা দেখেছি (প্রথম পর্ব)

০৮ ই জুন, ২০০৯ রাত ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার কর্ম জীবন শুরু হয়েছে প্রায় আট বছর হয়ে গেছে। এই আট বছরে বেশ কয়েকটি সেক্টরে কাজ করার সৌভাগ্য(!) হয়েছে যদিও তার প্রায় সবগুলুই আইটি বিলেটেড। এর মধ্যে প্রায় পাঁচটি বছরই আমার মেডিকেল বা স্বাস্থ্য সেবায় সার্ভিস করেছি। আমার লাইফের প্রথম চাকুরী ছিল এলিফ্যান্ট রোডস্থ একটি স্বনামধন্য কম্পিউটার ফার্ম এ। এটাকে আসলে চাকুরী না বলে প্রেকটিস বলাই যুক্তিযুক্ত কারণ আমি তখন সবেমাত্র কোর্স কমপ্লিট করে এক বন্ধুর রিকোয়েস্টে সেখানে পার্টটাইম সময় দিতাম। ইচ্ছা হলে যেতাম না হলে যেতামনা। আমার প্রকৃত অর্থে চাকুরী জীবন শুরু হয় ঢাকার একটি স্বনামধন্য প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরীর মধ্য দিয়ে। ইন্টারভিউ দিয়ে যখন চাকুরিটা হয়েই গেল ভাবলাম বেশ হয়েছে। আর কিছু না হোক কিছু লোককেতো সেবা দেয়া যাবে। মানুষকে সেবা করার চেয়ে বেশী আনন্দের আর কি আছে? কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই টের পেলাম আমার চিন্তাধারা এক অথচ বাস্তবতা ভিন্ন। কোথায় সেবা? এতো রুগী ধরে ধরে এনে জবাই করার সমতূল্য। যে কাজকে সেবা ভেবেছিলাম তাই এখন কাঁটার মতো মনের কোথায় যেন খুঁচাতে থাকে। ডাক্তারদের সেবার নামের মুখূশের আড়ালে যে বিভতস রূপ আমি দেখেছি তা মনে হলে চাকুরী ছাড়ার কয়েক বছর পরও শিউরে উঠি। নিজের ঘনিষ্টকিছু আত্বীয়-স্বজন, বন্ধু এ পেশায় থাকার পরও তাদেরকে কেন জানি মন থেকে মেনে নিতে পারিনা। বাবা-মা বিরাট আশা করে সন্তানকে ডাক্তার বানান, সরকারীতে না পারলে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে প্রাইভেট মেডিকেলে পড়ান। সেই সন্তান দিনে দিনে মানুষ থেকে কসাই এ পরিণত হয়। মাঝে-মধ্যে ভাবি বাজারের কসাই আর ডাক্তার এর মধ্যে কি আসেলেই কোন পার্থক্য আছে? এই ইনভেস্ট কি মানুষের সেবা করার জন্য নাকি নিরুপায় কিছু লোকের গলা কাটার জন্য? বেশ কয়েকদিনই রোগীর সাথে ডাক্তার কিংবা কর্তৃপক্ষের ব্যাবহার দেখে আড়ালে চোখের পানি ফেলেছি। প্রতিবাদ করার ভাষা খুঁজে পাইনি কারণ আমিওতো সেই কর্তৃপক্ষেরই (!) একজন। এই সময়ের কয়েক ডজন ঘটনার মধ্যে যে ঘটনাগুলো দেথে আমি আমার বিবেকের দংশনে জ্বলেছি তার কয়েকটি নীচে উল্লেখ করছি।

১। আমি যখন যোগদান করি প্রতিষ্টানটি তখন বড় ধরনের এক্সটেনশন খরচ সহ নানা কারণে ধার-দেনায় জর্জরীত। সারা দিনের কালেকশন যদি হয় ৫ লাখ পাওনাদার এসে বসে থাকে ২০ লাখের। স্বভাবিক কারণেই নানা অপ্রিতিকর ঘটনার সৃষ্টি হয়। যেদিন এই পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে সেদিনগুলিতে আরেকটি জটিল ট্রিক্স করা হয়। যে সকল ডাক্তাররা চেম্বারে বসেন তাদের মেসেজ দিয়ে দেয়া হয় যে, আজ ক্যাশ সর্টেজ আছে রোগীর প্যাথলজি পরীক্ষা একটু বেশী দেবেন। ব্যাস কাজ হয়ে গেল, কয়েকঘন্টার মধ্যে ক্যাশে পর্যাপ্ত পরিমান টাকা জমা হয়ে যায়। আর ডাক্তাররা লেখবেই বা না কেন? তাদের তো যত বেশী পরীক্ষা ততবেশী পার্সেন্টেজ। আর রোগীর কাছেতো ডাক্তার মানে দেবতা, তিনি যা বলবেন তাই সই। প্রয়োজনে গরু, ছাগল, গহণা, ঘটি-বাটি বিক্রি করে ধার দেনা করে সেই ডাক্তারের রাক্ষুসে ক্ষুধা মেটাতে হয়।

২। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হওয়ার কারণে সরকারী বিধি মোতাবেক সম্ভবত ৫% বেড সম্পূর্ণ ফ্রি থাকার কথা কিন্তু কোন রোগীকে সেই ৫% এর আওতায় ফ্রি চিকিতসা দেয়া হয়েছে বলে মনে পড়েনা। তবে এমডি, চেয়ারম্যান, ডিরেক্টরদের আত্বীয়-স্বজন কেউ ভর্তি হলে অবশ্য সেটা সেই ৫% এ দেখানো হয়।

(উল্যেখিত লেখাটি সম্পূর্ণ নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও মতামত, কারো কারো ক্ষেত্রে দ্বিমত থাকাটাই স্বাভাবিক)
চলবে............
২৩টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×