somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছবিতে পূর্বাচল নামের আবাসন হুজুগ আর অনেক অনেক কান্নার গল্প।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের রাজধানী ঢাকা শহর সময়ের তালে তার পরিধি বাড়াচ্ছে। একসময়ের রাজধানী ঢাকা সীমাবদ্ব ছিলো সুরিটোলা, মালিটোলা, ওয়ারী। তারপর বাড়তে বাড়তে এখন উত্তরে টন্গী, পশ্চিমে গাবতলী, দক্ষিনে শ্যামপুর আর পূর্বে মাদারটেক বনশ্রী অথবা বসুন্ধরার কথাও বলা যেতে পারে। অন্য সব দিকের তুলানায় পূর্বের অংশে তুলনামুলক কমই বেড়েছে। এলাকার যেই সব গ্রাম সেগুলা হলো ইছাপুরা, কান্চন, বেরাইদ, পূর্বগ্রাম, টানমুশুরি, রুপগন্জ। পূর্বের এই অংশটা বেশ নিচু জমি। হালকা জনবসতি বাদ দিলে পুরো এলাকাটাই ফসলী জমি। বর্ষার সময়টাতে এই এলাকার নিচু জমি পানিতে ডুবে যায়। বর্ষা শেষে দুই সিজনে শীতকালীন সব্জি আর ধান ফলানো হয়। এবং এই এলাকায় ব্যাপক ফসল ফলে। স্ফীত ধান ধন্যে এই এলাকার মানুষ সুখেই ছিলো বলা যায়।

কয়েকবছর আগে রাজউক "পূর্বাচল" নামে একটা প্রকল্প হাতে নেয় এই এলাকার ইছাপুর এলাকায় যা খিলক্ষেত ৭ কিলোমিটার দুরে। এবং এই প্রকল্পটি ঢাকার সাথে কানেক্ট করার জন্য ৩০০ ফিট একটা নতুন রাস্তা বানানোর কাজে হাত দেয়। তারপর থেকে রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পের ১৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে নানান রকমের পূর্বাচল প্রকল্পের জন্ম। নামের সে কি বাহার। যত নামে পূর্বাচল প্রকল্প আছে তার সমপরিমান নোকিয়ার মডেলও নাই। যে যে প্রকল্প যেভাবে পারছে এই এলাকায় ৫ কাঠা ১০ কাঠা ১ বিঘা, ২ বিঘা জমি কিনে একটা করে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়ে পূর্বাচল প্রকল্প দাড় করিয়ে দিলো। এই সব প্রকল্প এখন উত্তরে কালিগন্জ, পূর্বে মাধবদি আর দক্ষিনে আড়াইহাজার পর্যন্ত স্পর্শ করছে

সময়ের চাহিদায় নতুন নতুন বাসস্হান উঠা স্বাভাবিক। তবে এই হুজুগে যা হচ্ছে, তা কোনমতেই স্বাভাবিক না। এই এলাকার প্রায় সবাই নিম্নমধ্যবিত্ব কৃষক। দুই সিজন কৃষিকাজ করে তাদের জীবনধারন করে থাকেন। পূর্বাচল ধামাকায় তারা তাদের সেই জমি হারাচ্ছে কিন্তু দাম পাচ্ছে না। এলাকার উঠতি প্রভাবশালী মেম্বার চেয়ারম্যান ও মাস্তান দিয়ে ভয় দেখিয়ে গরীব কৃষকের জমি কিনে অথবা দখল করে তা অনেক অনেক বেশীদামে পূর্বাচল কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এই জমি ঘিরেই জন্ম হয়েছে ভয়াবহ মাস্তান শ্রেনী যাদের হাতে প্রচুর কাচা টাকা। অত্যন্ত উর্বর সোনাফলা ফসলী জমি ভরে ফেলা হচ্ছে বালু দিয়ে। জমির মালিককে তার বসতভিটা ও কৃষি জমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এককালীন কিছু টাকা হয়তো জমির মালিকের কাছে আসছে, তবে তা শীঘ্রই হারিয়ে তারা এলাকা ছাড়া হবে এতে কোন সন্দেহ নাই।




কুড়িল বিশ্বরোড থেকে একটা ৩০০ ফিট রাস্তার কথা আগেই উল্লেখ করেছি, এবং এই ৩০০ ফিট রাস্তা দেখিয়ে ক্রেতাদেরকে প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করা হচ্ছে এইসব এলাকায় প্লট কিনতে। যেই ৩০০ ফিট রাস্তার কথা সব পূর্বাচল প্রকল্পের পোষ্টারে বলা থাকে তার দৈর্য আসলে ৭ কিলোমিটার এবং সেটা আরো ৫ কিলোমিটার এক্সটেনশন হয়ে কান্চন ব্রিজ পর্যন্ত যাবে। কিন্তু খিলখেত থেকে অনেকগুলা প্রকল্পের এয়ার ডিসটেন্সই ১৫ কিলোমিটারের ও বেশী এবং এই ৩০০ ফিট রাস্তার সাথে ঐসব প্রকল্পের মূলসড়ক কোথায় হবে কিভাবে হবে তার কোন প্লান কারো কাছে নেই। আপনি কখনো এই এলাকা গুলাতে আসলে দেখতে পাবেন শুধু সাইনবোর্ড আর সাইনবোর্ড।

আমার দাদার বাড়ী রুপগন্জে এবং গত কয়েকমাসে এই এলাকায় কয়েকবার গিয়েছিলাম এই আবাসন কোম্পানীর ক্যাচালে পড়ে। যাওয়া আসার পথে কিছু ছবি তুলেছিলাম এই সব ভুংভাং পূর্বাচল প্রকল্পের। সেখান থেকে ছবি শেয়ার করলাম। ছবির কোয়ালিটি খুব একটা ভালো না কারন আমি যখন ঐ এলাকা দিয়ে আসা যাওয়া করেছি, তখন হয় সকাল নতুবা বিকাল ধুলা আর কুয়াশায় ঢাকা। সবগুলা ছবিই কষ্টের, কান্নার আর হতাশার।


১> ক্যামেরা ফ্রেমে আটকা বক, যে কিনা শিকারে জন্য ধ্যন করছে। হয়তো আগামীতে সে আর এখানে বসার সুযোগ পাবে না।


২>ভয়াবহ দূষনের কবলে বালু নদী। ব্রীজের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় পানির থেকে পচা গন্ধ পাওয়া যায়।


৩> ড্রেজার দিয়ে ফসলী জমি ভরাট করে ফেলা হচ্ছে



৪>অনেকটা অংশ বালু ফেলে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। নামটা বুঝা যাচ্ছে না।


৫> কৃষি জমিতে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রকল্পের সাইনবোর্ড।


৬> কৃষক স্বামী কাজ করছে জমিতে আর স্ত্রী তার কাছে কিছু বলছে। হয়তো এটাই বলছে, এইবারই শেষ তোমার।


৭> পানি নিষ্কশানের রাস্তা হয়তো কেউ ভরাট করে ফেলেছে তাই চারা ধানগাছ গুলা ডুবে যাচ্ছে।


৮> আবার আরেক যায়গায় পানির অভাবে ধানক্ষেত শুকিয়ে চৌচির।



৯> কয়েকটা জমিতে ঘাস না পেয়ে ছাগলেও হতাশ



১০> শুকিয়ে যাওয়া মাঠে দাড়িয়ে আছে নামবিহীন প্রকল্প।


১১> শোভা পাচ্ছে লেকভিউর বোর্ড, আর একটু পিছনেই আনন্দ হাউজিং


১২> পিকজেল সিটির ভিতর রাজভ্যালী নাকি রাজভ্যালির ভিতর পিকজেল বুঝতে পারলাম না



১৩> সামনে আইকন, একটু দুরেই বসুকুন্জ


১৪> সামনে রাজভ্যালীর বোর্ড, পিছনে আইকনের চমৎকার ডুপ্লেক্স হাউজ


১৫> বসুমতির দুইটি চমৎকার হোম



১৬> আইকনের রাজকীয় মাটির ঘর


১৭> রাজভ্যালির একটি প্রাসাদ


১৮> রুপগন্জের সেনাবাহিনীর কথা মনে আছে আপনাদের ? এই সেই ক্যাম্প এবং তার কিছু দুরেই আশিয়ান শীতলছায়ার সাইনবোর্ড



১৯> লেকভিউর বোর্ড মুছে দেওয়া হয়েছে মাটি দিয়ে, মালিকানা চেন্জ হয়েছে নাকি !!


২০> পাশাপাশি দাড়ানো আইকনের দুটি বোর্ড, একটা মাটি দিয়ে মুছে দেওয়া হয়েছে। ঘটনা কি !!!


২২> ধানক্ষেতে সেচ দিচ্ছেন দুইজন। হয়তো খুব বেশী দিন এই কষ্ট করতে হবে না, বালু দিয়ে ভরাট করে খদ্দেরের সামনে তুলে ধরা হবে


২৩> একইভাবে ধানক্ষেতে নিড়ানি দিচ্ছেন দুই কৃষক। হয়তো তারাও কয়েকবছর পরে রিক্সা চালক হবেন অথবা মোড়ে চায়ের দোকান দিবেন


২৪> এবার সবুজের মাঠে দাড়িয়ে আছে নামবিহীন প্রকল্প।


২৫> মসজিদের জন্য টাকা তুলছে কিছু শিশু। বললো ছবি তুলে দিতে। হাসিমুখে থাকলেও তাদের ভবিষ্যত পুরাই অন্ধকার। বাপদাদার হাজারো বছরের সম্পত্তি চলে যাবে পুজিপাতি দের পেটে। হয়তো অলরেডি চলেই গিয়েছে।


২৬> এভাবেই পুরা দিগন্তটাই ইট কংক্রীটের খাচায় ভরে যাবে।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:০৭
৪৯টি মন্তব্য ৪৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×