somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামহোয়ার, ইলেকট্রনিক মোল্লা, ভার্চুয়াল মুক্তিযুদ্ধ ও লেখক যশোপ্রার্থীদের তড়পানি

২৮ শে জুলাই, ২০০৭ রাত ৯:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
সামহোয়ারে ব্লগিং শুরু করার আগে আমাদের প্রজন্মের মানুষদের সম্পর্কে আমার ধারণা অস্পষ্ট ছিল। অনেক কিছু জানা বাকি ছিল। সামহোয়ারে যোগদানের পর বাংলাদেশের প্রযুক্তি বিদ্যন, উচ্চ শিক্ষিত, কোনো কোনো ক্ষেত্রে জ্ঞানী তরুণদের জানার একটা সৌভাগ্য লাভ করি। সে সৌভাগ্য, বলাবাহুল্য, অল্পদিনেই দুর্ভাগ্যে পরিণত হয়। এই তথাকথিত উচ্চশিক্ষিতরা ব্লগের মতো সীমিত একটি পরিসরে নিজের নাম ফোটানোর জন্য কি ধরনের নোংরা দলাদলি করতে পারেন, ব্লক, গ্রুপ ও সংঘ তৈরি করে কিভাবে নিজেদের পসার বৃদ্ধির তদবিরে লিপ্ত হতে পারেন তার জুড়ি মেলা ভার। শুরু থেকে এখানে দেখেছি, একজনের পেছনে দশজন, দশজনের পেছনে দশজন লেগে আছে। কোথাও কাউকে তাড়ানোর আয়োজন চলছে। কোথাও কারো সঙ্গে জোট বাধার আয়োজন চলছে। কোথাও কাউকে পচানোর আয়োজন চলছে। আবার কাউকে ওঠানোর জন্য বা বিখ্যাত করার জন্য স্বজনদের মধ্যে তীব্র চেষ্টা চলছে।
কেউ কোনো নতুন কাজ করলেই তার পেছনে লাগো। তাকে বাধা দাও। নতুনদের কণ্ঠস্বর রোধ করো। কচু বনে শেয়াল রাজা হয়ে থাকো। ব্যস। এ নীতি ছিল অনেকের।
প্রথম তিন/চার মাসের মাথায় শুনি পুরাতন ব্লগার তত্ত্ব। এটা শুনে মনে পড়েছিল, দুই দিনের যোগী ভাতরে বলে অন্ন প্রবাদটি।
প্রথম প্রথম মনে হয়েছিল ব্লগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত যোগাযোগও সম্ভব। ভার্চুয়াল জগতের সঙ্গে বাস্তবের মেলবন্ধন হোক, ক্ষতি কী? কিন্তু কালক্রমে দেখা গেল এখান থেকে তৈরি হচ্ছে ছোট ছোট উপদল। ব্লগবহির্ভূত যোগাযোগের আছর পড়ছে ব্লগে। এইসব যোগাযোগ নিয়ে বলার কিছু নাই। যার ইচ্ছা যোগাযোগ করবে, যার ইচ্ছা করবে না। আমার বলার কী থাকতে পারে? আমি শুধু উপদল গঠনের নানা প্রবণতাকে চিহ্নিত করতে প্রসঙ্গটার উল্লেখ করছি।
এই যোগাযোগের আরেকটা রূপ হলো, ব্লগের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ব্লগারদের ব্যক্তিগত যোগাযোগ। অনেক সময় দেখেছি ব্লগ পরিচালনা ও নীতিনির্ধারণে এ প্রভাব পড়েছে। কখনো দেখা গেছে কোনো কোনো ব্লগার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে অন্য ব্লগারদের সমীহ আদায় করছেন। গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছেন। আর এর মাশুল কর্তৃপক্ষকে পুরোটাই গুনতে হয়েছে পরবর্তীকালে। এই সময়ের ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাশুল আবার ভবিষ্যতে গুনতে হবে নতুন করে।
এই প্রাথমিক উপসর্গ থেকে আমার মনে প্রশ্ন জেগেছিল, কী করতে এই ব্লগে সমবেত হয়েছেন আমাদের বন্ধুরা? দলবাজি নাকি লেখালেখি? দলবাজির মাধ্যমে লেখক খ্যাতি অর্জন করতে চাইছেন তারা? বাহ! সেটাও কি সম্ভব?
২.
ব্লগে এসে আমাদের প্রজন্মের সম্পর্কে আরেকটি স্পষ্ট ধারণা জন্মালো। নারীদের ব্যাপারে নিপীড়ন মূলক দৃষ্টিভঙ্গি লালন পালনে আমরা পূর্ববর্তী যে কোনো প্রজন্মের চাইতে আমরা বেশ আগানো। এখানে খুব কম নারীই স্বনামে, স্বচিত্রে আবির্ভূত হয়ে লেখা চালাতে পেরেছেন অথবা তাদের মত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পেরেছেন। আমরা সহব্লগাররা হয় তাদের পেছনে ছোক ছোক করেছি নয়তো তাদের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছি। নারীদের জন্য সামহোয়ার খুব বৈরি একটা প্লাটফর্ম। এ পরিস্থিতি তৈরি করতে এখানে ব্লগিংরত দু একজন নারীর কিছু ভুলও দায়ী। বিশেষভাবে দায়ী নারী নিকধারী পুরুষ ব্লগাররা।
৩.
এই ব্লগের আরেকটি গুরুতর সমস্যা অবশ্যই অ্যানোনিমিটি, বেনামী ব্লগার। এখানকার বহু ব্লগার নিক নেমে ভাল লেখা লিখেছেন। তাদের প্রতি অবশ্যই আমার শ্রদ্ধা আছে। কিন্তু নিকগুলো কাজে লেগেছে অন্যকে বিরক্ত করার কাজে। নিজের পোস্টে মন্তব্য বাড়ানোর কাজে। নিজের এবং দলীয় বন্ধুদের পোস্টের রেটিং বাড়ানোর কাজে। কর্তৃপক্ষ নিক সমস্যা সমাধানে খুব বেশি পারদর্শিতা কখনোই দেখাতে পারেননি।
৪.
দলবাজী, গ্রুপবাজী, ব্লকবাজী মহত রূপ পায় যদি তাতে একটি মতাদর্শিক কোটিং থাকে। কোনো একটা মতাদর্শের অধীনে এনে নিজেদের অপকর্মকে জায়েজ করা যায়। শুরু থেকে লক্ষ করছি এখানকার মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের গ্রুপবাজীকে বৈধতা দেয়ার জন্যই মুক্তিযুদ্ধের প্লাটফর্ম ব্যবহার করছেন। কাজের সুবিধার জন্য তারা একের পর একজনকে রাজাকার বানিয়ে ব্লগটিকে একাত্তরের রণাঙ্গনের মতো মহত্ব দেয়ার চেষ্টা করেছেন। অন্যের মতামতের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে তারা ফ্যাসিস্টদের মতো আচরণ করেছেন।
এই যদি হয় মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থা তবে প্রতিক্রিয়াশীলদের অবস্থা কী, তা সহজেই অনুমেয়। এরা নিজেদের দলবাজীর জন্য ইসলামকে ব্যবহার করেছেন। ব্লগে আমদানী করেছেন ইলেকট্রনিক মোল্লাতন্ত্র। ধর্মীয় পুলিশিং করার জন্য তারা হেন কোনো প্রতিক্রিয়াশীল আচরণ নাই যা করেননি।
ব্লগে এই ভার্চুয়াল মুক্তিযোদ্ধা আর ইলেকট্রনিক মোল্লারা এতই সরব যে কখনো কখনো মনে হয় এরাই সব। এরাই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। অধিকাংশ ব্লগার যে এর বাইরে তা নিয়ে কর্তৃপক্ষও অনেক সময় বিভ্রান্তিতে থাকেন। হয়তো, তাদের অনেক নিক আর গুয়ার্তুমিই এজন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কর্তৃপক্ষ কোন মতের তা আমরা কখনোই জানতে চাইনি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ যখন একটি মতের পাশে বা অন্যটির পাশে দাঁড়ায় তখন তা সত্যিই চিন্তার বিষয়। কারণ বহুমত থাকবে, বহুমতের বিকাশ ঘটবে এটাই ব্লগের নীতি হওয়া উচিত। অন্যথায়, কর্তৃপক্ষেরও উচিত তাদের সমমনা ব্লগারদের সঙ্গে নিয়ে সাইবেরিয়া চলে যাওয়া।
৫.
সত্যি কথা বলতে, এই ভার্চুয়াল মুক্তিযোদ্ধা আর ইলেকট্রনিক মোল্লা কারো জন্য কোনো সহানুভূতি আমার মনে কাজ করে না। এরা নিজেদের উগ্র, অসহনশীল ও ফ্যাসিস্ট অনুভূতি প্রকাশের জন্য কখনো মুক্তিযুদ্ধ কখনো ইসলাম, গালিগালাজ কখনো ব্যক্তিগত আক্রমণকে ব্যবহার করে। এবং এদের জ্বালায়, এদের তড়পানিতে ব্লগিং করা অসুবিধাজনক হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় দলবাজদের দ্বারা অনেক ভাল ব্লগারও প্রভাবিত হচ্ছেন। সার্বিকভাবে চরম হতাশাজনক হয়ে পড়ছে ব্লগের ফ্রন্টপেজ। কয়দিন আগে হঠাত ব্লগটাকে মনে হলো, দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ওয়াজের ময়দান। এই না হলে তরুণ সমাজের অগ্রসর চিন্তাভাবনার নেটওয়ার্ক!
৬.
সামহোয়ার কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান অনেক সাধ্য সাধনার পরও এই ব্লগ সাইটটি এখন ব্যবহারের প্রায় অনুপযুক্ত হয়ে পড়ছে। কিন্তু তারপরও বাংলা ব্লগ সাইটগুলোর মধ্যে এটা সবচেয়ে অগ্রসর। প্রযুক্তিগতভাবে সামহোয়ারকে অস্বীকার করার কোনো যুক্তিসংগত কারণ এখনও ঘটেনি। এটা ব্যবহারে আমি অভ্যস্ত বোধ করি। এখানে কোনো লেখা শেয়ার করার মধ্যে কিছুটা আনন্দ এখনও অবশিষ্ট আছে। আর আছে আশা। হয়তো পরস্পরের প্রতি অসস্মান ও কাদাছোড়াছুড়ি বাদ দিয়ে ব্লগিং করবেন এখানকার সহকর্মীরা। নিজেদের জিঘাংসা আর অচরিতার্থতা তৃপ্ত করার রাস্তা ভেবে এটাকে কোপাতে থাকবেন না।
৭.
কর্তৃপক্ষ বিশাল নিয়ম-কানুনের ফিরিস্তি তৈরি করেছেন। নিয়ম তৈরি করা আর প্রয়োগ করার মধ্যে বিশাল ফারাক আমাদের দেশের সব ক্ষেত্রেই আছে। আর যথাযথভাবে নিয়ম প্রয়োগের উদাহরণ তো এ দেশে কোথাও দেখা যায় না। ফলে কানুনের ফিরিস্তি দেখে আশা জাগেনি আমার। আমার ধারণা, এইসব নিয়ম দিয়ে কিছু হবে না। যা কিছু ব্লগের জন্য পজিটিভ তার পক্ষে যদি কর্তৃপক্ষ দাঁড়াতে পারে তবে সেটাই হয়তো এই অবস্থা থেকে বের হওয়ার একটা রাস্তা তৈরি করতে পারে।
কথায় কথায় ব্লগারদের ব্যান না করে কিভাবে সহনশীল ও মৌলিক চিন্তা, ভাবনা, আইডিয়া ও মতগুলোকে প্রমোট করা যায় সে চিন্তা এখন কর্তৃপক্ষকে করতে হবে।
৮.
হয়তো এই লেখাটা অরণ্যে রোদন। কিন্তু তারপরও লিখলাম। এন্ট্রি থাকলো।
১১১টি মন্তব্য ৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×