somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লেভ তলস্তয়কে কেন নোবেল দেয়া হলো না? # আন্দ্রেই চেরকাসভ

২২ শে অক্টোবর, ২০০৭ বিকাল ৩:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মনে করার চেষ্টা করুন, রাশিয়ান বড় লেখকদের মধ্যে কারা নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। মিখাইল শলোকভ, ইভান বুনিন, বরিস পাস্তেরনাক এবং তাদের পর জোসেফ ব্রডস্কি। ব্রডস্কির ক্ষেত্রে মজার ঘটনা ঘটেছিল। ব্রডস্কি রাশিয়ায় কবি হিসেবে পরিচিত ছিলেন না। আমি আমার সহকর্মী সাংবাদিকদের চল্লিশজনকে তার কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম। কিন্তু তাদের কেউই ব্রডস্কির একটি লাইন কবিতাও মনে করতে পারেননি।
নোবেল পুরস্কার নিয়ে আদতেই বিস্ময়ের কিছু নেই। সাহিত্যে যিনি প্রথম নোবেল পেয়েছিলেন তার নাম কি কেউ মনে করতে পারে? ১৯০১ সালে পুরস্কারটি দেয়া হয়েছিল ফরাসি কবি সুলি প্রুধোমকে । আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি এ কবি খোদ ফ্রান্সেও পরিচিত নন। এ রকম পুরস্কার বিজয়ী আছেন অনেকেই। যদিও মার্ক টোয়াইন, চেকভ, অস্কার ওয়াইল্ড, লেভ তলস্তয়সহ মহান লেখকরা তখন বেঁচে ছিলেন ও তাদের লেখা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
নোবেল পুরস্কারের লম্বা লিস্টের দিকে তাকান। দেখবেন প্রতি দশজনের মধ্যে এমন চারজন আছেন যাদের নাম আপনি কখনোই শোনেননি। তাদের পুরস্কৃত লেখা বিস্মৃতির আড়ালে চলে গেছে। তার মানে কি এই যে, নোবেল সাহিত্য পুরস্কার সাহিত্য নয়, অন্য অর্জনের জন্য দেয়া হয়? জোসেফ ব্রডস্কির কথা ধরলে মনে হয়, ঘটনা তাই। আমিই প্রথম এ কথা বলছি, তা নয়। নোবেল অ্যাকাডেমির সিদ্ধান্তের পর সুইডেনসহ বিভিন্ন দেশের জনগণ মর্মাহত হয়েছিল।
এই বিতর্কিত পুরস্কারটি চালুর এক মাস পর সুইডিশ লেখক ও শিল্পীদের কাছ থেকে একটি চিঠি পান লেভ তলস্তয়। তারা লেখেন ‘প্রথম নোবেল সাহিত্য পুরস্কারের সূত্রে আমরা আপনাকে আমাদের শ্রদ্ধা জানাই। আমরা আপনাকে শুধু আপনাকে সমকালীন সাহিত্যের একজন সর্বোচ্চ নেতাই ভাবি না, শক্তিশালী লেখকদের মধ্যে আপনাকে অগ্রবর্তী হিসেবে বিবেচনা করি। এই স্বাগত পত্রের মাধ্যমে আপনাকে আমরা এটি জানানোর প্রয়োজন বোধ করছি। কারণ যে ইনস্টিটিউশন পুরস্কার দেয়ার দায়িত্ব পালন করছে তারা জনগণ বা লেখক কারো মতেরই প্রতিনিধিত্ব করে না। সবাইকে এটা জানানো দরকার, স্বাধীনতার ভাবনা ও সৃষ্টিশীলতার ভিত্তিতেই সঠিক সাহিত্য দাঁড়াতে পারে।’ চিঠিটিতে স্বাক্ষর করেছিলেন সুইডেনের চল্লিশজন শিল্পী ও লেখক। পৃথিবীর সবাই জানতো, সর্বোচ্চ পুরস্কার একজন লেখকেরই প্রাপ্য এবং তার নাম লেভ তলস্তয়।
১৯০২ সালে সুইডেনের একটি পত্রিকা নোবেল পুরস্কারের ওপর একটি লেখা ছাপে। লেখক বলেন, ‘অ্যাকাডেমির অধিকাংশ সদস্য অসৎ কসরতবাজ ও শখের সাহিত্যিক। তারা ছড়াকে কবিতা হিসেবে গণ্য করেন।’
প্রথম নোবেল পুরস্কারটি তলস্তয়কে দেয়া হয়নি। দেয়া হয়েছিল দ্বিতীয় শ্রেণীর এক চটকদার কবিকে। শ্রেষ্ঠ সুইডিশ লেখকরা এর পরপরই প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। অনেক বক্তৃতা-বিবৃতির পর তলস্তয়ও প্রতিক্রিয়া দেনÑ ‘প্রিয় বন্ধুরা, আমাকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়নি এটি জানতে পেরে আমি খুবই খুশি। প্রথমত, পুরস্কারের টাকা দিয়ে আমি কি করতাম এই বড় সমস্যা থেকে এটি আমাকে রেহাই দিয়েছে। আমি নিশ্চিত, এই টাকা শয়তানকে ডেকে আনতো। সব টাকাই তা করে। দ্বিতীয়ত, এতো লোক আমাকে সমর্থন ও সহানুভূতি জানাবেন তা আমি ভাবতে পারিনি। এতে আমি সম্মানিত বোধ করেছি। আমি সত্যিই আনন্দিত। আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা গ্রহণ করুন। লেভ তলস্তয়।’
কাহিনীর শেষ এখানেই নয়। তলস্তয়ের পরের উপন্যাস ‘গ্রেট সিন’ প্রকাশিত হয় ১৯০৫ সালে। দুঃখজনকভাবে এটির কথা ভুলে যাওয়া হয়েছে। একজন রুশ কৃষকের কঠোর জীবন নিয়ে লেখা এটি। এই কাজটির কথা বলা হয় না, কেননা তলস্তয় এতে ভূমির ওপর ব্যক্তি মালিকানার বিরোধিতা করেছেন। রাশিয়ান অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস নোবেল সাহিত্য পুরস্কারের প্রতিযোগিতার জন্য বইটিকে মনোনীত করে। রাশিয়ার সর্বোচ্চ সাহিত্য সংস্থার দ্বারা এ প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। ১৯০৬ সালে ‘গ্রেট সিন’সহ প্রস্তাবটি সুইডেনে পাঠানো হয়।
এ সম্মানের কথা জানতে পেরে তলস্তয় ফিনল্যান্ডের লেখক বন্ধু আরভিড এরনেফেডকে একটি চিঠি লেখেন। ‘যদি সত্যিই ঘটনাটি ঘটে তবে দুঃখজনকভাবে এটি প্রত্যাখ্যান করবো আমি। সে কারণেই তোমার সহযোগিতা দরকার। যদি সুইডেনে তোমার কোনো যোগাযোগ থাকে (আমার ধারণা, আছে) তবে চেষ্টা করো যেন আমাকে পুরস্কারটি না দেয়া হয়। আমাকে যাতে পুরস্কার না দেয়া হয় সেজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করো।’
প্রতি দশজন নোবেল বিজয়ীর মধ্যে নয়জনই সাধারণ ‘সাহিত্যিক কারিগর’। মনে রাখার মতো শক্তিশালী কিছু করতে পারেন না তারা। এই বিজয়ীদের এক দুইজন সত্যিই প্রতিভাবান। আমার মতে, নোবেল পুরস্কার অনুষ্ঠানে কোনো প্রতিভাবানের উপস্থিতি সে অনুষ্ঠানে বিশ্বাসযোগ্যতার ইলিউশনকে বাড়িয়ে তোলে। সম্ভবত এ প্রক্রিয়ায় নোবেল কমিটি সমাজ ও রাজনীতি এবং মানব জাতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। নোবেল পুরস্কারের আওয়াজ উচ্চ লয়ের। আমাদের এই সত্য মনে রাখা উচিত, আমাদের দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাকারীদেরও এ পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে। মিখাইল গর্বাচেভ ও আলেক্সান্ডার সোলঝেনিসিনও পুরস্কার বিজয়ী। টাকাই পৃথিবীকে ঘোরায়। লেভ তলস্তয় সম্ভবত প্রথম ব্যক্তি যিনি এ সত্য উপলব্ধি করেছিলেন। এ ধরনের ভয়ংকর ধারণার পক্ষে তিনি নিজের নাম ব্যবহার করতে দেননি।
অতএব কেন তলস্তয় নোবেল পুরস্কার পাননি? উত্তর,Ñ তিনি নিতেন না বলে।

প্রাভদা, ৯ সেপ্টেম্বর ২০০২
অনুবাদ : মাহবুব মোর্শেদ
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০০৭ বিকাল ৩:৪১
১৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×