somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্রি ই-বুকে সমস্যা কী?

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে একটা মেইল পেলাম। আমার জিমেইল ঠিকানায় মেইলটা পাঠাইছেন শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী আহমেদুর রশীদ চৌধুরী (টুটুল)। মেইলের ধরন কিছুটা প্রচারমূলক। আমার ধারণা শুধু আমাকে না, আরও নানাজনকে মেইলটা পাঠানো হইতে পারে। মেইলের কথা নিম্নরূপ :





টুটুল ভাই আমার পছন্দের ব্যক্তি। নানা দ্বিমত ও রেষারেষি সত্ত্বেও তাকে আমি পছন্দ করি। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের বাইরে গত কয়েক বছর ধইরা শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর মাধ্যমে বই প্রকাশের যে বৃহৎ উদ্যোগ নিয়েছেন সেইটা খুব প্রশংসনীয়। তরুণদের বই প্রকাশের ক্ষেত্রে শুদ্ধস্বর বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। বুঝতে পারি, বিপুল পরিমাণ লোকসান গুনেও তিনি তার উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছেন। ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করি।

জি-মেইলে পাঠানো টুটুল ভাইয়ের চিঠির উদ্দিষ্ট আমি, পরিষ্কারভাবে বললে আমাদের বইয়ের দোকান। ২০১১ সালের নভেম্বরে আমরা www.boierdokan.com নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করেছি। এই সাইটের উদ্দেশ্য ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বৃহত্তর পাঠকের জন্য বাংলা বই সহজলভ্য করা। একই নামে এ ধরনের একটি উদ্যোগ বছর দুই আগে আমি শুরু করেছিলাম। কিন্তু সাইট ডেভেলপারের অসহযোগিতায় সেটা আর কন্টিনিউ করা হয়নি। এবার নিজে কাজ শিখে শিখে সাইট উন্নয়নের কাজ চালাচ্ছি। ফলে, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। খুঁড়িয়ে চলার এই উদ্যোগে বন্ধু এমনকি শত্রু স্থানীয় লেখকরা যেভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তা আমাকে অভিভূত করেছে। ব্রাত্য রাইসু ছাড়া আর কেউ বই দিতে অস্বীকার করেননি। বই আপলোডের ক্ষেত্রে, সাইটের প্রচারণার ক্ষেত্রে লেখকরা দারুণ সহযোগিতা করেছেন। ফলে অত্যন্ত দ্রুত সাইটে ৮০টি বই আপলোড করা সম্ভব হয়েছে। আমার মতে, এক দেড় মাসের জন্য এই অগ্রগতি বিশাল। আমার জানা মতে, বৈধ প্রক্রিয়ার সংগৃহিত বাংলা ই-বুক প্রচারের আর কোনো সংগঠিত উদ্যোগ নাই। ফলে, টুটুল ভাই সম্ভবত বইয়ের দোকানের দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন। তার মতো প্রতিষ্ঠিত, বড় অর্থলগ্নিকারী প্রকাশকের অঙ্গুলি নির্দেশে আমি বেজায় খুশী। সবচেয়ে খুশী এই জেনে যে, ই-বুক প্রতিরোধের সঙ্গে তিনি লেখক-প্রকাশক ঐক্যেরও ডাক দিয়েছেন। তার নেতৃত্বের লেখক ও প্রকাশকের অধিকার নিশ্চিত করার আন্দোলনে যোগ দেব। আর যোগ দিয়ে আমি খুশী থাকবো।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, ই-বুক কেন লেখক-প্রকাশকের অধিকার রক্ষার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ালো?

শুধু টুটুল ভাই নয়, আমার আরেক প্রকাশক বন্ধুও দেখলাম সম্প্রতি ই-বুকের উপর বিলা হয়ে আছে। ফোনে প্রলাপের মতো করে বললো, ই-বুক বন্ধ করো। এতে বই বিক্রির বিশাল ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। আরও দু'একজন প্রকাশকের মুখেও উষ্মা লক্ষ্য করলাম।

এখন দ্বিতীয় প্রশ্ন, লেখকরা ই-বুক বিষয়ে উৎসাহী হলেও, প্রকাশকরা ই-বুকের উপর বিলা কেন?

এসব প্রশ্নে উত্তর খোঁজার আগে কিছু তথ্য শেয়ার করি। বাংলাদেশে ই-বুক মোটেও নতুন ধারণা নয়। হুমায়ুন আহমদ, ইমদাদুল হক মিলন, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আনিসুল হক সহ বিভিন্ন জনপ্রিয় লেখকের বই বইমেলায় প্রকাশিত হওয়ার পরপরই স্ক্যান হয়ে অনলাইনে এভেইলএবল হয়ে যায়। বলতে গেলে, এই লেখকদের অধিকাংশ বই-ই অনলাইনে পাওয়া যায়। এগুলোতে লেখকদের অনুমতি থাকে না। মুফতে পাওয়া যায়। মজার ব্যাপার হলো, জনপ্রিয় যে কয়জন লেখকের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আমার কথা হইছে সবাই বলছেন, এই অবৈধ আপলোডের কথা জানেন। তবে কারও মধ্যে এই নিয়া উষ্মা লক্ষ্য করি নাই। এইভাবে বই আপলোড হওয়া বিপুল জনপ্রিয়তার লক্ষণ। এমনকি তারা এও মনে করেন না, এতে বইয়ের বিক্রি কমে। বরং এতে বইয়ের বিক্রি বাড়ে। বই ইন্টারনেট নির্ভর নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছাইতে পারে। এইটা যে লেখকরাই শুধু জানেন তা নয়, প্রকাশকরাও জানেন। ফলে, প্রকাশকরা কিছু বইয়ের ই-ভার্সন নিজেদের উদ্যোগে অনলাইনে ছেড়েছেন।

লেখক-প্রকাশকদের এই প্লেফুল মানসিকতাটি আমার খুব পছন্দ হইছে। আইন করে ই-বুক বন্ধ করার পথে না গিয়ে তারা যে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছেন তা প্রশংসনীয়। টুটুল ভাই বা সোহেলদের মতো নতুন প্রকাশকরা এই তথ্যগুলো সম্পর্কে জানেন না বলেই ই-বুক বন্ধ করার মতো হাস্যকর ডাক দিতে পারছেন।

এখন কথা হলো, জনপ্রিয় লেখকদের বই তো এমনেও বিক্রি হয়, অমনেও বিক্রি হয়। কিন্তু জনপ্রিয়তাহীন লেখকদের ক্ষেত্রে ই-বুকের প্রভাব কী হইতে পারে। এই নিয়া সেদিন কথা হচ্ছিল একজন লেখকের সঙ্গে। উনি বললেন,

বিনা পয়সায় বই দেওয়া ঠিক না, মাহবুব। বই যেহেতু তুমি ফ্রি দিতেছো সেহেতু তোমার বইয়ের সামাজিক মূল্য তৈয়ার হইতেছে না।

আমি বললাম,

ধরেন, ফ্রি দিলাম না। টাকা চাইলাম বইয়ের বিনিময়ে। এখন আমি টাকা নিবো কেমনে? সে ব্যবস্থা তো এদেশে নাই।

উনি কইলেন,

সেটা তো ঠিকই।

আমার পরিচিত বন্ধু-বড়ভাইদের মধ্যে অনেক শক্তিমান লেখক আছেন। তারা নিয়মিত বই প্রকাশও করেন। কিন্তু বাজারে এই প্রকাশের খুব গুরুত্ব দেখা যায় না। এইটা আমার কাছে বিস্ময়কর। সমাজে একজন লেখক গুরুত্ব ধারণ করেন, লেখক হিসেবে পরিচয় আছে, কিন্তু বই চলে না এইটা বিস্ময়কর তথ্য। অনেককেই দেখি এই নিয়া চিন্তিত নন। কারও বই হয়তো ৬০ কপি চলে কারও ৩০০ কপি। কিন্তু এর বেশি উঠতে পারে না অনেক বইই। কেন?

আমি এ প্রশ্নের একটা উত্তর বের করছি।

আমাদের বন্ধু-বড়ভাই লেখক সার্কেলের সীমাবদ্ধতা হইলো, বৃহত্তর সমাজে তাদের লেখক পরিচয় সেইভাবে প্রচার পায় নাই। একটা ছোট লেখক-বুদ্ধিজীবী সার্কেলে তাদের পরিচয় জানা থাকে। বই বাইর হইলে সে খবরও জানতে পায় অল্প লোক। এই অল্প লোকের মধ্যেই বেচাবিক্রির ঘটনা ঘটে। আর এই সার্কেলটা বই খুব হিসাব কইরা কিনে। ফলে বইয়ের বিক্রি কম। লেখকদের বই বিক্রি না হওয়ার দায় অবশ্যই লেখকের না। প্রকাশকের দায় আছে। বই প্রকাশ কইরা তারা উপযুক্ত প্রচার করেন না। প্রকাশকরা এক্ষেত্রে আর্থিক সীমাবদ্ধতার কথা বলেন। তবে সবচেয়ে বড় দায় সংবাদমাধ্যমের।

আমাদের কোনো দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিকই লেখকদের সঙ্গে পাঠকের নিয়মিত যোগাযোগ ঘটানোর দায়িত্ব পালন করে না। দেখা যাবে, মাহবুবের কোনো লেখাই কোনো পত্রিকায় ছাপা হইলো না। অথচ তার বই ছাপা হইলো তিনটা। প্রশ্ন হইলো, তার বই পাঠক কিনবে কি মনে কইরা? পাঠক তো তারে চিনে না। এক হইতে পারে, বইয়ের নাম দেইখা কিনলো। কিন্তু তেমন বোকা পাঠক খুব কম। এইসবের বাইরে মুখে মুখে ছড়ায় কিছু। কিন্তু তাতে খুব সুবিধা হয় না।

আমার মতে, লেখকদের এই অপ্রকাশের ভার কিছুটা ইন্টারনেটের উপর চাপায়ে দেওয়ার সময় আসছে। ইন্টারনেট মাধ্যমে লেখকের সঙ্গে বই কেনা পাঠকের দেখা হইতে পারে। ব্লগ, ওয়েবসাইট ফেসবুক এক্ষেত্রে ভাল মাধ্যম। বইয়ের দোকানের কাজ একটু স্লো। পুরা বই থাকবে এতে। কেউ একজন লেখকের বই ডাউনলোড করে পছন্দ করলে তিনি ওই লেখকের আরও বই খুঁজবেন। পাঠকের সঙ্গে লেখকের দেখা হবে। বইয়ের দোকান ইতিমধ্যে অনেক পাঠকের কাছে পৌঁছাচ্ছে। ডাউনলোডের যে হার দেখি তাতে আমি আশাবাদী। এখন লেখক-প্রকাশকদের আন্তরিক সহযোগিতা দরকার।

প্রকাশকদের জন্য বলি, আমাদের অনেক প্রকাশক লেখকদের সঙ্গে চুক্তি করেন না। কিন্তু বইয়ের দোকানে প্রকাশের আগে আমি অনেক লেখককে বলছি ভাই, বই মার্কেটে থাকলে দেওয়ার দরকার নাই। অনেক লেখক প্রকাশককে জিজ্ঞেস করে বই দিছেন। অনেকে প্রকাশকের কাছ থেকে সফট কপি নিয়া দিছেন। আগামীতে নিশ্চয়, এক্ষেত্রে আরও সুন্দর ব্যবস্থা আমরা করতে পারবো।

যেসব বই জরুরি ও অবশ্যপাঠ্য হওয়া সত্ত্বেও বাজারে নাই, চলবে না বা স্লো চলবে বইলা যে বইগুলা প্রকাশকরা বাইর করতে চান না। সেই বইগুলা প্রচারের ব্যাপারে আমাদের বেশি আগ্রহ। আশার কথা এই ধরনের কিছু বই আমরা পাইছি। ভবিষ্যতে আরও পাবো বইলা আশা করি। প্রকাশের ক্ষেত্রে আমাদের নীতিও ঠিক থাকবে। বইয়ের স্বত্ত্ব যার সেই লেখক সরাসরি না পাঠাইলে বা অনুমতি না দিলে বই উঠাবো না।



এই নোটের মাধ্যমে আবারও লেখকদের বই পাঠানোর অনুরোধ জানায়ে রাখছি।

বই পাঠানোর ঠিকানা

[email protected]

বইয়ের সফট কপি পিডিএফ বা ডকুমেন্ট আকারে পাঠানো যাবে, সঙ্গে প্রচ্ছদের ছবি দিতে ভুলবেন না।
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিরিতের সংস্কৃতিওয়ালা তুমি মুলা’র দিনে আইলা না

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৬


---- আমাদের দেশে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক সমুন্নয়ন তলানিতে। তেমন কোন সংস্কৃতিবান নেই, শিরদাঁড়া সোজা তেমন মানুষ নেই। সংস্কৃতির বড় দান হলো ভয়শূন্য ও বিশুদ্ধ আত্মা। যিনি মানবের স্খলনে, যেকোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×