মানুষ হিসাবে নারী-পুরুষকে আল্লাহ সমান মর্যাদা দান করেছেন । আবার মা হিসাবে নারীর মর্যাদা নির্ধারণ করেছেন পুরুষের অনেক উপরে। তবে জীবনের অঙ্গণে উভয়ের দায়িত্ব ও কর্মক্ষেত্র ভিন্ন বলে উভয়কে তিনি সৃষ্টি করেছেন পৃথক গুণ ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে। এটা মর্যাদা ও অধিকারের বৈষম্য নয়, বরং কর্ম ও দায়িত্বের পার্থক্য এবং স্বভাব ও প্রকৃতির পৃথকতা। সুতরাং উভয়ের মাঝে অধিকার ও মর্যাদাগত বৈষম্য সৃষ্টি করা, কিংবা সমতার নামে দায়িত্বগত পার্থক্য ও প্রকৃতিগত পৃতকতা অস্বিকার করা, দু'টোই মানবজাতির জন্য হবে মহাবিপর্যয়ের কারণ।
আল্লাহর নির্ধারণ এই যে, পুরুষের দায়িত্ব হলো জীবন পরিচালনা করা, আর নারীর দায়িত্ব হলো জীবনকে সৃষ্টি করা, মানবশিশুকে ধারণ, পালন ও প্রতিপালনের মাধ্যমে। এটা নারীর একক প্রাকৃতিক দায়িত্ব। এ দায়িত্ব যেমন মর্যাদাপূর্ণ তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং অতিরিক্ত আরো দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া বা টেনে নেয়া যেমন নারিত্বের অবমাননা, তেমনি তা মানবজাতির উপর অবিচার।
ইসলাম নারীর যে অধিকার ও মর্যাদা দান করেছে পৃথিবীর আর কোন ধর্ম, সমাজ, সভ্যতা ও শাসনব্যবস্থাই তা দেয়নি। এমনকি আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতাও নারী স্বাধীনতার নামে নারীকে নিছক ভোগের খেলনা বানিয়েছে। বাইরের জৌলুস ও চাকচিক্যে পাশ্চাত্যের নারীসমাজ একসময় বিভ্রান্ত হলেও এখন মুক্তির জন্য আর্তনাদ করছে, কিন্তু "শৃঙ্খল গ্রহণ করা যত সহজ, মুক্তি অর্জন করা তত কঠিন।"
ইসলাম নারীর সম্পদ অর্জনের অধিকার স্বীকার করে দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা দিয়েছে, কোন পরিচয়েই পুরুষের অধিকার নেই তার সম্পত্তিতে হস্তক্ষেপ করার। ইসলাম নারীকে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে অংশ প্রদানের পাশাপাশি বিবাহের ক্ষেত্রে মোহর ও নাফাকার মাধ্যমে তার অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। তবে অধিক দায়দায়িত্বগত কারণে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের তারতম্য করা হয়েছে। এটাই আল্লাহর বিধান এবং তা সর্বোত্তম সুবিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বাস করুন, এ বিধান লঙ্ঘনের নূন্যতম কুফল হবে নারীনির্যাতনের নতুন পথ খুলে যাওয়া।
দুঃখজনক বাস্তবতা এই যে, ইসলামের শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাওয়ার ফলে মুসলিম সমাজে নারী আজ তার প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত এবং বহুমুখী নির্যাতনের শিকার, এমনকি ইসলামপ্রদত্ত উত্তরাধিকার সম্পত্তির ন্যায্য অধিকারও তার হাতছাড়া।
নারীনির্যাতন রোধ করা এবং নারীর অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেশের সরকারের। এ জন্য শরীয়তসম্মত যে কোন কঠোর আইন প্রয়োগের অধিকার সরকারের রয়েছে। তা না করে সরকার যদি সমতার নামে কোরআনের উত্তরাধিকার বিধানে হস্থক্ষেপের দুঃসাহস প্রদর্শন করে তাহলে সেটা হবে আগুন নিয়ে খেলা করার শামিল। আর আগুন-খেলার পরিণতি হয় ভয়াবহ।
আবু তাহের মিসবাহ