somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসো, কথা বলো! শুধু মাত্র অস্ত্রটা বাসায় রেখে এসো ;) - জাফর ইকবাল

১৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৩:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি সবার কথা শুনে ভাবছিলাম যে, সারা পৃথিবীতে আমিই একমাত্র মানুষ যে কিনা জীবিত অবস্থায়ই তার মৃত্যুর পর মানুষ যা বলে তা শুনে ফেলেছি। যা আমি জীবনেও ভাবতে পারি নাই। মানুষ মারা গেলে যা যা বলা হবে তা শুনে ফেলেছি।

প্রথমেই আমি বলি, যখন আমি বেঁচে ফিরি তখন আমার বারবার অভিজিত, নীলয়, আমার ছাত্র অনন্ত, ওয়াসিফ, হুমায়ুন আজাদের কথা মনে পড়েছে। এদের সবাই আস্তে আস্তে স্মৃতি হয়ে গিয়েছে। আমার নামটাও এদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারত। আমি বেঁচে গিয়েছি। আমার এদের সবার পরিবারের কথা মনে পড়েছে। আমি তাদের সম্মান জানাই।

আমি ছাত্রছাত্রীদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য এসেছি। এর আগে বলতে চাই আমি এই মুক্তমঞ্চে যখন বসে ছিলাম তখন আমার পেছন থেকে আঘাত করা হয়। তবে আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম আমাকে হয়তো কোনো কিছু দিয়ে বাড়ি দিয়েছে। পরে আমার সামনের এক ছাত্রীর চিৎকার শুনে দাঁড়িয়ে যখন মাথায় হাত দিই তখন আমি রক্ত দেখে বিষয়টা বুঝতে পারি। পরবর্তীতে মিনিটখানেকের মধ্যে গাড়ি দিয়ে যখন আমাকে হাসপাতালের পথে নিয়ে যায় তখন আমি মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করলাম। এ সময় আমি আমার স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলাম। জ্ঞান না হারানোর চেষ্টা করছিলাম ও বিভিন্ন জিনিস মনে রাখার চেষ্টা করতেছিলাম। এ সময় আশপাশের শিক্ষার্থীদের আমি রক্তের গ্রুপও বলে দিয়েছিলাম।

ওসমানী মেডিকেলের ডাক্তাররা খুবই অসাধারণ চিকিৎসা দিয়েছেন। খুব প্রেসারের মাঝে তারা ঠাণ্ডা মাথায় চিকিৎসা দিয়েছেন। তারা শুধু ঠিকমতো ন্যাড়া করতে পারেননি যার ফলে সিএমএইচ এর চিকিৎসকদের আবার আলাদা করে করতে হয়েছে। এ সময় তিনি ক্যাপ খুলে তার ন্যাড়া মাথা সবাইকে দেখান।

২০১৫ সালের ৩০ আগস্ট যখন শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায় তখন আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। যার ফলে আমি সব সময় ভাবতাম কবে এই ক্যাম্পাস থেকে চলে যাব। আমি ভাবতাম যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছাত্রদের গায়ে হাত তুলে তাদের এখানে থেকে কি হবে। এ জন্য আমি সব সংগঠন থেকেও দূরে সরে গিয়েছিলাম। ছাত্ররা অনেক মিনতি করত আবার আসার জন্য। কিন্তু আমি তাদের মিনতি শুনি নাই। আমি নিষ্ঠুরের মতো সংগঠনগুলোকে বলেছিলাম, তোমাদের সঙ্গে থাকব না। আমি এলে অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। আমি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু এই ঘটনা ঘটার পর তাদের ভালোবাসার কাছে আমি হেরে গিয়েছি। আমি তাদের বলতে চাই আমি তোমাদের সঙ্গে থাকতে চাই। আমি তোমাদের কাছে আগের সেই ব্যবহারের জন্য দুঃখিত। ক্ষমা চাইতেই আমি তোমাদের এখানে এসেছি। তোমরা যখন নাটক-গান করবে আমাদের ডেকো আমরা তখন যাব। কিন্তু তোমরা দেখিয়েছো মানুষ কিভাবে ‘ম্যাচুর্ইয়ড’ ব্যবহার করে।

আমি এই মুক্তমঞ্চেই বসেছিলাম। ওই ছেলেটির জন্য আমার বিন্দুমাত্র প্রতিহিংসা বা রাগ নেই। বরং তার জন্য আমার মায়া আছে, করুণা আছে। সে কেন এটা করেছে? বেহেশত যাওয়ার জন্য। আমাকে মারতে পারলে সে বেহেশত যাবে যেভাবে হোক তাকে কেউ এটা বুঝিয়েছে। একটা মানুষ কত দুঃখী হলে সে চিন্তা করে আরেকজন মানুষকে হত্যা করে সে বেহেশত যাবে। এ সুন্দর পৃথিবীর কিছুই সে জানে না, বুঝে না অথচ সে ধারণা করে রেখেছে আরেকজনকে হত্যা করলেই সে বেহেশত যাবে। তার মনে কত কষ্ট থাকলে সে এই ধারণা পোষণ করতে পারে।

এখানেই হয়তো হতে পারে এ রকম কোনো ছেলে আছে যে হয়তো ভাবছে যে একবার মারতে পারেনি। আবার চেষ্টা করব। তার উদ্দেশে আমি বলতে চাই, কোনো বিভ্রান্তি থাকলে আমার সামনে আস। শুধুমাত্র অস্ত্রটা বাসায় রেখে আসে। মানুষ মারা কোনো ধরনের সমাধান নয়। তুমি যদি আমার সঙ্গে কথা বলো তাহলে হয়তো তোমার ধারণা পাল্টে যাবে। আমি তোমাকে আমন্ত্রণ জানাই। তুমি আস, আমার সঙ্গে কথা বল।

তোমরা আমাকে নাস্তিক বল, আমি পবিত্র কোরআন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুবই ভালোভাবে পড়েছি। কোরআনের একটি সূরা (৫/৩২) তোমরা বাসায় গিয়ে পড়িয়ো, সেখানে লেখা আছে, ‘আল্লাহ বলেছেন, যে লোক অপর একজনকে হত্যা করে সে যেন পুরো মানবজাতিকেই হত্যা করল।’ আমাকে হত্যা করে তোমরা কীভাবে বেহেশত যাবে তাহলে? অন্যদিকে যে একজনকে রক্ষা করে সে যেন পুরো মানবজাতিকে রক্ষা করল। এ সময় তাকে বাঁচানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান। তোমরা যে জীবনকে বেছে নিয়েছো সেটা কোনো জীবন নয়। তোমরা আস, আমার সঙ্গে কথা বল। আমি শুনতে চাই তোমার কিসে এত বিভ্রান্তি।

এ সময় শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের জন্য ধন্যবাদ জানান। ন্যাড়া মাথা দেখে না হাসার জন্য সিএমএইচের ডাক্তারদের ধন্যবাদ জানান, শুধু তাই নয় ন্যাড়া মাথার ছবি তুলে তা পাবলিশ করার জন্যও ধন্যবাদ জানান। হাসপাতালে সৈনিক থেকে শুরু করে মেজর জেনারেলদের ভালোবাসার কথা আমি কখনো ভুলব না। পরের বার যখন আসব তখন ওসমানী মেডিকেলের কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তারদের সঙ্গে গিয়ে দেখা করে আসব। পুলিশ বাহিনীর কারণে এক বছর আগে মারতে পারেনি সেই ছেলেটি। আমি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানাই। আমার পরিবারের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।


সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৪৬
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×