বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইন্স ডে থেকে শুরু করে যত ধরণের বিদেশি ডে এন্ড নাইট আছে, তা পালন করা শুরু হয় ইন্টারনেট এর ব্যাপকতা বৃদ্ধির প্রাক্কালে। খুব বেশি বছর আগের কথা নয় কিন্তু। মানুষ দিন দিন যতই উৎসবমুখর এবং বিনোদনপ্রিয় হওয়া শুরু করেছে, ততই তাদের মাঝে নৈতিকতা,মূল্যবোধের অভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। ধর্মীয় বিশ্বাস এবং এর নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন তো অধিকাংশ মানুষের কাছে গৌণ বিষয় হিসেবে তাকের উপর তুলে রাখার মত সমাদৃত। জীবনযাপন পদ্ধতিতে এসেছে পাশ্চাত্যের ছায়া। মিডিয়ার ব্যাপকতার প্রভাব মানুষ প্রতিমুহূর্তে গিলে খাইছে। এর ই হাত ধরে- এই ডে, ঐ ডে থেকে শুরু করে উয়ান নাইট স্ট্যান্ড এর মত সংস্কৃতি ও কিন্তু অনুপ্রবেশ এর বেশি দেরি নেই। হয়তোবা চলছেই ইতিমধ্যে।
ভালোবাসার সংজ্ঞায়ন এ আমি যাবো না। সামাজিকভাবে বিয়ে কে কঠিন করে ফেলার ফলে এবং অবাধ যৌনাচার কে প্রেম- ভালোবাসার চাদর মুড়িয়ে দেয়ার কারণে আজ তা কোন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, তা কারোরই অদেখা বা অজানা নয়। দিন শেষে নারী এবং পুরুষের মাঝে সম্পর্কের বেড়াজাল কে ঘিরে ভালোবাসা আসলেই কি তা না বুঝতে পারার দায়ভার একে অন্যের উপর চাপিয়ে পরমুহুর্তে অন্যের গলায় ঝুলে পড়ার মাঝেই সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে। লিটনের ফ্ল্যাট এর জনপ্রিয়তা এবং পাশাপাশি প্রত্যেক টা ডে কে কোনভাবে টেনেটুনে ভ্যালেন্টাইন্স ডে বানানো এখন যেনো জাতিগত স্বভাবে পরিণত হচ্ছে- হোক তা একুশে ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর অথবা কিস, হাগ এর মত আজাইরা ডে নামক কলঙ্কিত দিবসগুলো। যাই হোক এর পক্ষে বা বিপক্ষে আমি কিছু বলছিনা।
যেই পাশ্চাত্যের প্রভাবে আমরা এতোশত সংস্কৃতি অনুকরণ করছি তার সুবাদে ইতিমধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক সমলিঙ্গের পর্যায়ে চলে এসেছে এবং তা অপরাধ বা মস্তিষ্কবিকৃতি না ধরে অতি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আমাদের মাঝে আন্দোলনের মাধ্যমে বৈধতা প্রমাণের চেষ্টা ও কম চালানো হচ্ছেনা। পাশাপাশি সেক্যুলারিজম এর নামে নাস্তিকতার আদর্শ তো জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চার বেশ ধরিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের মাঝে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছেই। তখন আর কোন কিছুতেই বাঁধা নেই, সব অপকর্ম তখন চাহিদার মাপকাঠি তে বিবেচ্য মাত্র! এমনকি নাস্তিকতার নামে শেখানো হচ্ছে ইসলাম বিদ্বেষ। সাময়িক আনন্দের মোহে পড়ে মানুষ কোন কিছুর প্রকৃত সুদুরপ্রসারী ফলাফল নিয়ে ভাবতে ইচ্ছুক ও নয়।
একটু লক্ষ্য করি, গত কয়েকবছরে আমাদের মাঝে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি যেই পরিমাণে প্রবেশ করেছে এবং তাতে কয়েক দশক পর আমাদের পরবর্তী জেনারেশন এর মাঝে কি কি দিবস এবং পাশ্চাত্য জীবন অনুকরণপ্রিয়তা আসতে পারে, চলুন একটু ঘুরে আসা যাক ফিউচার থেকে-
- মা কি যে ব্যাকডেটেড না তুমি! আজ “নো প্যান্টি ডে”! আমি আজ প্যান্টি না পড়েই বাইরে যাবো। ইটস অ্যা ক্ল্যাসি ট্রেন্ড, আমার বান্ধবীরাও তাই করবে!
- ড্যাড আজ বিচ এ উলঙ্গ হয়ে ঘুরবো। আজ “উয়ার্ল্ড নিউড ডে” প্লিজ আজ কোন কথা শুনবো না।
- আরে ইয়ার, পর্ণস্টার হইসি তো কি হইসে, এখন এই যুগে পর্ণস্টারের চেয়ে কার দাম বেশী বল!
- আজকে উয়ার্ল্ড ফাকিং ডে! আজকে না করলে হয় নাকি মাম্মা!
ছি ছি এইসব আমি কি বলছি! অনেক উদ্ভট এবং বাজে লাগছে তো, আজ থেকে কয়েক দশক আগেও বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতির চিত্র মানুষ জানলে তাদের কাছেও এমন ই বাজে এবং উদ্ভট মনে হতো, যা এখন আপনার কাছে মনে হচ্ছে। হয়তোবা উপরোক্ত ব্যাপারগুলো আপনারই ছেলেমেয়ের মুখে শুনতে হতে পারে। কারণ এগুলো পাশ্চাত্য সমাজের বর্তমান কমন ট্রেন্ড! আরও এমন হাজার হাজার বা লাখো উদাহরণ দেয়া সম্ভব, যা উল্লেখ করলে হয়তো আপনার পক্ষে সহ্য করাও সম্ভব না! ভাব্বেন, কিভাবে কি! এও সম্ভব! আপনার কাছে যদি এইসব ব্যাপারগুলো নরমাল মনে হয় এবং যুগের সাথে তাল মেলানোকে আধুনিকতা মনে হয়, তবে প্রস্তুত থাকুন আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তোবা দারূণ দারূণ সব দিবস পালনের মহড়া নিয়ে ইতিমধ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। সেই আধুনিক ভবিষ্যতের পথে আপনাকে সুস্বাগতম।
আজ থেকে ২ দশক পর আপনার ছেলেমেয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে ভালোবাসা নামক অনুভূতি এবং এর কার্যক্রম কে আপনি ঠিক যেভাবে দেখতে চান, আপনার ভালোবাসা ও যেনো ঠিক তেমন ই হয়।
অনুকরণ এর জগতে অথবা সত্য বুঝে উপলব্ধির জগতে আপনাকে আবারো স্বাগতম।
অনেকের ই মনে হতে পারে, প্রেম করে সাধু সাজো ব্যাটা! তুই জঙ্গি, তুই জঙ্গি! তাদের প্রতি অকৃত্তিম ভালোবাসা রইলো। শুধু এক ছাইপাঁশ দিবস উপলক্ষে নয়, বছরের প্রতিটি দিন ই থাকুক এই অকৃত্তিম ভালুবাসা।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৪৪