somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মাহফুজ
আমি হচ্ছি কানা কলসির মতো। যতোই পানি ঢালা হোক পরিপূর্ণ হয় না। জীবনে যা যা চেয়েছি তার সবই পেয়েছি বললে ভুল হবে না কিন্তু কিছুই ধরে রাখতে পারিনি। পেয়ে হারানোর তীব্র যন্ত্রণা আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে।

এক অসহায় প্রেমিকের মানবিক আবেদন ও অসহায় প্রেমিকার গল্প

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৭:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"মানবিক আবেদন"
করুণা নয় সঠিক মূল্যে কিডনি বিক্রী করতে চায় কেউ একজন।
সবসময় স্বার্থপর, লোভী ইত্যাদি নেতিবাচক উদাহরণব্ব নারীসমাজকেই ব্যবহার করি। আমাদের দৃষ্টিতে নারীরা অর্থলোভী, স্বার্থপর। অমুক মেয়ে তার দরিদ্র বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকাপ করে ধনীর দুলালের সাথে সম্পর্ক গড়েছে, অমুক মহিলা অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল স্বামীকে ছেড়ে তমুক বিজনেস ম্যাগনেটকে বিয়ে করেছে ইত্যাদি। এরকম একটা দুইটা দৃষ্টান্ত স্ত্রী, প্রেমিকা, বান্ধবী, সহকর্মী মোটকথা পুরো নারী সমাজের বৈশিষ্ঠ হতে পারেনা। নারীরা মায়ের জাত আর মা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ আপন জন।
আজ তেমন এক অসহায় এবং স্বার্থহীন প্রেমিকার কথা বলবো যাকে আমি দেখিনি শুধু গল্প শুনেছি। গল্প শুনেছি সেই অসহায় প্রেমিকার অযোগ্য এবং দুর্ভাগা প্রেমিকের কাছে। প্রেমিক পুরুষটি আমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়।
আত্মীয়টার খামখেয়ালিপনা এবং মাঝেমধ্যে চরম ব্যক্তিত্বসাদৃস কর্মকাণ্ডের কারণে তার প্রেমে পড়ে যায় মেয়েটি। মনে করি আত্মীয় ব্যক্তির নাম অরিন্দম আর গল্পের প্রেমিকা চরিত্রটির নাম অবন্তি। অরিন্দমের স্পষ্টবাদিতা, সত্যবাদিতা, বিশেষক্ষেত্রে বিচক্ষনতা ইত্যাদি অবন্তিকে আকৃষ্ট করে। যদিও শারিরীক সৌন্দর্যের কথা কিংবা আর্থিক অবস্থার কথা বিবেচনায় আনলে আরিন্দম বানর আর অবন্তি মুক্তোর মালা। কথায় আছে প্রেম ভালোবাসা স্থানকাল কিংবা জাতপাত ভেবে হয়না। তেমনি অরুন্দম আর অবন্তির প্রেম হয়ে যায়। একটা কথা উল্লেখ্য অরিন্দম সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। আর্থিক ভাবে ততোটা স্বচ্ছল না হলেও সমাজে তাদের পরিবারের স্থান উঁচু পর্যায়েই।
যাই হোক সম্পর্কের শুরুতে
অরিন্দম বিভিন্ন ব্যবসাবাণিজ্য এবং টুকটাক কাজ করে বেশ ভালো টাকা ইনকাম শুরু করেছিলো। অরিন্দমের সবচাইতে বাজে গুণ সে টাকা খরচের বেলায় কোনো বাচবিচার করেনা। তাই ইনকামের চাইতে ব্যয় বাড়তে লাগলো দ্বিগুন এবং চূড়ান্ত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলো সে নেশাগ্রস্ত হয়ে। টাকাপয়সার বেসুমার খরচে অরিন্দম দিনের পর দিন ঋণগ্রস্ত হতে থাকলো। খুব কাছে থেকেও নেশার বিষয়টা জানতে পারলোনা অবন্তি কারণ তার চলাফেরায় নেশাগ্রস্ত মানুষের কোনো চিহ্ন ছিলোনা।
ধীরে ধীরে যখন চারিদিকে অরিন্দম ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়লো তখন বাধ্য হয়ে কোনো উপায় না দেখে অবন্তির সাথে শেয়ার করলো টাকাপয়সার সমস্যার কথা। অবন্তি নিজের জীবনের চাইতে তো অবশ্যই এমনকি নিজের মা বাবার চাইতেও বেশী ভালোবাসে অরিন্দমকে। অরিন্দমের বিপদে তাই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে ধারদেনা করে অরুন্দমকে দিয়ে সাহায্য করলো। একবার অরিন্দের চরম বিপদে নিজের কাছে বাবার অনেক কষ্টের গচ্ছিত টাকা দিয়ে অরিন্দমকে বাচালো এবং পরিবারের কাছে বেইমান, আত্মসাৎকারী হিসেবে তিরস্কৃত হলো। অবন্তির তাতে দু:খ নেই কারন সে তার অরিন্দমকে সাহায্য করতে পেরেছে।
নেশার তীব্রতা থেকে অরিন্দম এক পর্যায়ে দুরে সরে এলেও ঋণের জালে সে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে অন্যদিকে অরিন্দমকে পাগলের মতো ভালোবাসা অবন্তি বারবার অরিন্দমকে সাহায্য করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হারিয়ে বসেছে প্রায়। শুধু তাই নয়, অবন্তি আত্মীয় অনাত্মীয়, বন্ধুবান্ধব, পরিচিতজনের কাছ থেকে অরিন্দমের জন্য টাকা ধার করে নিজেও হয়ে পড়েছে ঋণগ্রস্ত কারণ অরিন্দম টাকা ফেরত দিতে পারেনা। অরিন্দম ইচ্ছে করে দেয়না আসলে তা না সে চাইলেও দিতে পারেনা, বলাযায় অরিন্দম পরিস্থিতির নির্মম স্বীকার। অরিন্দমের কাছে আরো যা জানলাম, অবন্তি এখন এতটাই অসহায় অবস্থায় দিনানিপাত করছে যে ঠিকমতো দুবেলা খেতে পারছেনা। অরিন্দমকে সাহায্য করতে গিয়ে সবার কাছে হাত পেতেছে কিন্তু নিজের এই দৈন্যদশায় সে কারো সাহায্য পাচ্ছেনা।
এদিকে আমার বন্ধু অরিন্দম, অবন্তির এমন দুর্দশাতে কোনো সাহায্য করতে না পেরে তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে। কারণ পৃথিবীর কেউ জানুক না জানুক অরিন্দম জানে আর সৃষ্টিকর্তা জানেন যে, অবন্তির ফুলের মতো সুন্দর জীবনটাকে ছিঁড়ে ছিন্নভিন্ন করেছে অরিন্দম নিজেই। অরিন্দম এখন তার ভালোবাসার মানুষটিকে অর্থাৎ অবন্তিকে সাহায্য করতে প্রচণ্ড মরিয়া হয়ে উঠেছে। যে অবন্তি তার নিষ্পাপ ভালোবাসার জন্য অরিন্দমকে সকল বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করে নিজেই অসহায়, নিরুপায়, মানবেতর জীবনযাপন করছে সেই অবন্তিকে অরিন্দম স্বাভাবিক জীবনে আনতে চায়। অরিন্দম আর সহ্য করতে পারছেনা সে অবন্তির জীবনে হাসি ফিরিয়ে দিতে চায়, প্রায়শ্চিত্ত করতে চায়।
অরিন্দম আমার কাছে এবং আরো অনেকের কাছেই অদ্ভুত এক অনুরোধ করে বসেছে। সে তার একটি কিডনি বিক্রি করে দিতে চায়। এমনিতে বিপদে পড়ে কিডনি বিক্রি করতে গেলে নাকি নামমাত্র মূল্য পাওয়া যায় তাই সে কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্টানের সন্ধান চায় যেখানে তার অসহায়ত্বের কথা উপলব্দি করে তাকে সঠিক মূল্য প্রদান করা হবে। কিডনি বিক্রির টাকা দিয়ে তার পৃথীবির সর্বশ্রেষ্ঠ এবং নি:স্বার্থ ভালোবাসার মানুষ অবন্তিকে সাহায্য করতে চায় অরিন্দম। যে অবন্তি আজ তার কারনে এক অন্ধকার আর অনিশ্চিত জীবনের স্থায়ী বাসিন্দা হতে চলেছে সেই অবন্তিকে সে সুস্থ,স্বাভাবিক এবং সুন্দর জীবনে আবার ফিরিয়ে আনতে চায়।
অবন্তির প্রতি যে অবিচার সে করেছে তার প্রায়শ্চিত্ত করতে চায় অরিন্দম।
এবার
আপনারাই বলুন, অরিন্দমকে কি আমি কিডনি বিক্রির জন্য সাহায্য করবো? কিংবা
আপনাদের কাছে কিডনি প্রয়োজন এমন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সন্ধান আছে যে বা যারা অরিন্দমকে যথেষ্ট টাকা দিয়ে তার কিডনি কিনবে।
বেচারী অবন্তির কথা শুনে নিজের কাছে নিজেই খুব বেশী অপরাধবোধে ভুগছি। আর্থিক কোনো সাহায্য করতে পারছিনা বলে খুব কষ্ট লাগছে যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। অবন্তির ভালোবাসার কথা শুনে আমি বিস্মিত। অরিন্দমের জন্য চরম আফসোস হচ্ছে এতো ভালো মানুষের মূল্যায়ন সে করতে পারলোনা আর খারাপ লাগছে অরিন্দমের আর্থিক অবস্থার কথা জেনে।
আল্লাহ এই দুটি মানুষকে সুস্থ সুন্দর স্বাভাবিক জীবন দান করুন। অরিন্দমকেকে যেন অবন্তি প্রাণভরে ভালবাসতে পারে আর অরিন্দম যেন অবন্তিকে চরম যত্নে, মায়া, মমতায় অবন্তিকে আগলে রাখতে পারে।
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×