"মানবিক আবেদন"
করুণা নয় সঠিক মূল্যে কিডনি বিক্রী করতে চায় কেউ একজন।
সবসময় স্বার্থপর, লোভী ইত্যাদি নেতিবাচক উদাহরণব্ব নারীসমাজকেই ব্যবহার করি। আমাদের দৃষ্টিতে নারীরা অর্থলোভী, স্বার্থপর। অমুক মেয়ে তার দরিদ্র বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকাপ করে ধনীর দুলালের সাথে সম্পর্ক গড়েছে, অমুক মহিলা অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল স্বামীকে ছেড়ে তমুক বিজনেস ম্যাগনেটকে বিয়ে করেছে ইত্যাদি। এরকম একটা দুইটা দৃষ্টান্ত স্ত্রী, প্রেমিকা, বান্ধবী, সহকর্মী মোটকথা পুরো নারী সমাজের বৈশিষ্ঠ হতে পারেনা। নারীরা মায়ের জাত আর মা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ আপন জন।
আজ তেমন এক অসহায় এবং স্বার্থহীন প্রেমিকার কথা বলবো যাকে আমি দেখিনি শুধু গল্প শুনেছি। গল্প শুনেছি সেই অসহায় প্রেমিকার অযোগ্য এবং দুর্ভাগা প্রেমিকের কাছে। প্রেমিক পুরুষটি আমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়।
আত্মীয়টার খামখেয়ালিপনা এবং মাঝেমধ্যে চরম ব্যক্তিত্বসাদৃস কর্মকাণ্ডের কারণে তার প্রেমে পড়ে যায় মেয়েটি। মনে করি আত্মীয় ব্যক্তির নাম অরিন্দম আর গল্পের প্রেমিকা চরিত্রটির নাম অবন্তি। অরিন্দমের স্পষ্টবাদিতা, সত্যবাদিতা, বিশেষক্ষেত্রে বিচক্ষনতা ইত্যাদি অবন্তিকে আকৃষ্ট করে। যদিও শারিরীক সৌন্দর্যের কথা কিংবা আর্থিক অবস্থার কথা বিবেচনায় আনলে আরিন্দম বানর আর অবন্তি মুক্তোর মালা। কথায় আছে প্রেম ভালোবাসা স্থানকাল কিংবা জাতপাত ভেবে হয়না। তেমনি অরুন্দম আর অবন্তির প্রেম হয়ে যায়। একটা কথা উল্লেখ্য অরিন্দম সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। আর্থিক ভাবে ততোটা স্বচ্ছল না হলেও সমাজে তাদের পরিবারের স্থান উঁচু পর্যায়েই।
যাই হোক সম্পর্কের শুরুতে
অরিন্দম বিভিন্ন ব্যবসাবাণিজ্য এবং টুকটাক কাজ করে বেশ ভালো টাকা ইনকাম শুরু করেছিলো। অরিন্দমের সবচাইতে বাজে গুণ সে টাকা খরচের বেলায় কোনো বাচবিচার করেনা। তাই ইনকামের চাইতে ব্যয় বাড়তে লাগলো দ্বিগুন এবং চূড়ান্ত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলো সে নেশাগ্রস্ত হয়ে। টাকাপয়সার বেসুমার খরচে অরিন্দম দিনের পর দিন ঋণগ্রস্ত হতে থাকলো। খুব কাছে থেকেও নেশার বিষয়টা জানতে পারলোনা অবন্তি কারণ তার চলাফেরায় নেশাগ্রস্ত মানুষের কোনো চিহ্ন ছিলোনা।
ধীরে ধীরে যখন চারিদিকে অরিন্দম ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়লো তখন বাধ্য হয়ে কোনো উপায় না দেখে অবন্তির সাথে শেয়ার করলো টাকাপয়সার সমস্যার কথা। অবন্তি নিজের জীবনের চাইতে তো অবশ্যই এমনকি নিজের মা বাবার চাইতেও বেশী ভালোবাসে অরিন্দমকে। অরিন্দমের বিপদে তাই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে ধারদেনা করে অরুন্দমকে দিয়ে সাহায্য করলো। একবার অরিন্দের চরম বিপদে নিজের কাছে বাবার অনেক কষ্টের গচ্ছিত টাকা দিয়ে অরিন্দমকে বাচালো এবং পরিবারের কাছে বেইমান, আত্মসাৎকারী হিসেবে তিরস্কৃত হলো। অবন্তির তাতে দু:খ নেই কারন সে তার অরিন্দমকে সাহায্য করতে পেরেছে।
নেশার তীব্রতা থেকে অরিন্দম এক পর্যায়ে দুরে সরে এলেও ঋণের জালে সে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে অন্যদিকে অরিন্দমকে পাগলের মতো ভালোবাসা অবন্তি বারবার অরিন্দমকে সাহায্য করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হারিয়ে বসেছে প্রায়। শুধু তাই নয়, অবন্তি আত্মীয় অনাত্মীয়, বন্ধুবান্ধব, পরিচিতজনের কাছ থেকে অরিন্দমের জন্য টাকা ধার করে নিজেও হয়ে পড়েছে ঋণগ্রস্ত কারণ অরিন্দম টাকা ফেরত দিতে পারেনা। অরিন্দম ইচ্ছে করে দেয়না আসলে তা না সে চাইলেও দিতে পারেনা, বলাযায় অরিন্দম পরিস্থিতির নির্মম স্বীকার। অরিন্দমের কাছে আরো যা জানলাম, অবন্তি এখন এতটাই অসহায় অবস্থায় দিনানিপাত করছে যে ঠিকমতো দুবেলা খেতে পারছেনা। অরিন্দমকে সাহায্য করতে গিয়ে সবার কাছে হাত পেতেছে কিন্তু নিজের এই দৈন্যদশায় সে কারো সাহায্য পাচ্ছেনা।
এদিকে আমার বন্ধু অরিন্দম, অবন্তির এমন দুর্দশাতে কোনো সাহায্য করতে না পেরে তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে। কারণ পৃথিবীর কেউ জানুক না জানুক অরিন্দম জানে আর সৃষ্টিকর্তা জানেন যে, অবন্তির ফুলের মতো সুন্দর জীবনটাকে ছিঁড়ে ছিন্নভিন্ন করেছে অরিন্দম নিজেই। অরিন্দম এখন তার ভালোবাসার মানুষটিকে অর্থাৎ অবন্তিকে সাহায্য করতে প্রচণ্ড মরিয়া হয়ে উঠেছে। যে অবন্তি তার নিষ্পাপ ভালোবাসার জন্য অরিন্দমকে সকল বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করে নিজেই অসহায়, নিরুপায়, মানবেতর জীবনযাপন করছে সেই অবন্তিকে অরিন্দম স্বাভাবিক জীবনে আনতে চায়। অরিন্দম আর সহ্য করতে পারছেনা সে অবন্তির জীবনে হাসি ফিরিয়ে দিতে চায়, প্রায়শ্চিত্ত করতে চায়।
অরিন্দম আমার কাছে এবং আরো অনেকের কাছেই অদ্ভুত এক অনুরোধ করে বসেছে। সে তার একটি কিডনি বিক্রি করে দিতে চায়। এমনিতে বিপদে পড়ে কিডনি বিক্রি করতে গেলে নাকি নামমাত্র মূল্য পাওয়া যায় তাই সে কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্টানের সন্ধান চায় যেখানে তার অসহায়ত্বের কথা উপলব্দি করে তাকে সঠিক মূল্য প্রদান করা হবে। কিডনি বিক্রির টাকা দিয়ে তার পৃথীবির সর্বশ্রেষ্ঠ এবং নি:স্বার্থ ভালোবাসার মানুষ অবন্তিকে সাহায্য করতে চায় অরিন্দম। যে অবন্তি আজ তার কারনে এক অন্ধকার আর অনিশ্চিত জীবনের স্থায়ী বাসিন্দা হতে চলেছে সেই অবন্তিকে সে সুস্থ,স্বাভাবিক এবং সুন্দর জীবনে আবার ফিরিয়ে আনতে চায়।
অবন্তির প্রতি যে অবিচার সে করেছে তার প্রায়শ্চিত্ত করতে চায় অরিন্দম।
এবার
আপনারাই বলুন, অরিন্দমকে কি আমি কিডনি বিক্রির জন্য সাহায্য করবো? কিংবা
আপনাদের কাছে কিডনি প্রয়োজন এমন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সন্ধান আছে যে বা যারা অরিন্দমকে যথেষ্ট টাকা দিয়ে তার কিডনি কিনবে।
বেচারী অবন্তির কথা শুনে নিজের কাছে নিজেই খুব বেশী অপরাধবোধে ভুগছি। আর্থিক কোনো সাহায্য করতে পারছিনা বলে খুব কষ্ট লাগছে যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। অবন্তির ভালোবাসার কথা শুনে আমি বিস্মিত। অরিন্দমের জন্য চরম আফসোস হচ্ছে এতো ভালো মানুষের মূল্যায়ন সে করতে পারলোনা আর খারাপ লাগছে অরিন্দমের আর্থিক অবস্থার কথা জেনে।
আল্লাহ এই দুটি মানুষকে সুস্থ সুন্দর স্বাভাবিক জীবন দান করুন। অরিন্দমকেকে যেন অবন্তি প্রাণভরে ভালবাসতে পারে আর অরিন্দম যেন অবন্তিকে চরম যত্নে, মায়া, মমতায় অবন্তিকে আগলে রাখতে পারে।