মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সামান্য এদিক সেদিক কোনো কথা বলা মাত্রই মামলা, হামলা, বিক্ষোভ, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি কতকিছুই না করি আমরা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত আমাদের এমন করাটাই স্বাভাবিক। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অস্তিত্ব, আমাদের গৌরব। লাখো লাখো শহীদের ত্যাগে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা নামল অমূল্য রত্ন। স্বাধীনতা অর্জনের সিংহভাগ কৃতিত্ব কি আমাদের নয়?
২৬ শে মার্চের ভয়াল রাত্রির পর হায়েনাদের জবাব দিতে শুরু করা, প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং সর্বশেষে শত্রুশিবিরকে নাস্তানাবুদ করে স্বাধীনতা, লাল সবুজের পতাকাটা ছিনিয়ে এনেছে কারা? বাঙ্গালি জাতি নাকি অন্য কেউ? প্রশ্নটা হাস্যকর শুনালেও এটিই মিলিয়ন ডলার কুশ্চেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য প্রদানকারী প্রতিবেশী ভারত তাদের বিভিন্ন চলচিত্রে, ডকুমেন্টারিতে স্পষ্ট করে বলে ১৯৭১ সালে ভারত পাকিস্তানের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে নাকি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছি। সবচাইতে অবাক লেগেছে এরকম বক্তব্য যখন আমাদের বিজয় দিবসের দিন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ফেইসবুক পেজে পোস্ট করা হয়।
এমন গুরুতর ঘটনা ঘটলেও আমরা বাংলাদেশিরা নীরব। কেন? তাহলে কি মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা প্রাপ্তি আমাদের প্রতি কোনো দয়াদাক্ষিণ্য? যদি না হয় তাহলে কেন সরকারি, বেসকারি দলের রাজনীতিবিদরা নীরব ভূমিকা পালন করছেন? কোথায় আজ শাহবাগিরা, তাদের চোখে কি পড়েনা এসব? মিডিয়া কি দেখেনা ভারতের এমন অযৌক্তিক দাবী? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ও কি নজরে পড়েনি কখনো ভারতের এই মিথ্যাচার? তিনি কি ভুলেই গেলেন প্রধানমন্ত্রীত্বটা এসেছেই মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আন্তরিকতার প্রকাশ ঘটিয়ে। তার সরকার ক্ষমতায় এসেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত জনসংখ্যার হাত ধরে। তাহলে তিনি কিভাবে ভারতের এই মিথ্যাচার নীরবে সহ্য করেন।
আমি বলবো বাংলাদেশের প্রতিটা রাজনৈতিক দল এই মুহূর্তে মেরুদণ্ডহীন। দেশের প্রতি, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সামান্যতম শ্রদ্ধাবোধ থাকলে অবশ্যই ভারতের এমন মিথ্যাচারের প্রতিবাদে বাংলার আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়ে উঠতো।
শুনতে খারাপ লাগলেও বলতে হয় মুক্তিযুদ্ধকে রাজনীতি ব্যবসার পুঁজি করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নামক ভুয়া লেবাস পরিধান করে সবাই শুধু ক্ষমতাটাকেই পেতে চায়। প্রকৃত মুক্তিচেতনায় বলীয়ান আসলে কেউই না। লজ্জা লাগে, ঘৃণাও লাগে কিন্তু এই লজ্জাও নিজেদের জন্য, ঘৃণাটাও নিজেদের জন্য কারণ আমরা মুক্তিযুদ্ধের মতো মহান অর্জনেও অন্যের অন্যায় দাবী নীরবে হজম করে যাই। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম জানবে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে ভারতের দয়ায়। আমরা বসে বসে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ দেখেছি আর ভারত ভারত বলে গলা ফাটিয়েছি। ভারতকে সাপোর্ট দিয়ে গেছি কারণ তারা পাকবাহিনীকে পরাজিত করে বাংলাদেশ দান করে যাবে। তাই নয় কি? ঠিক যেরকমটি স্টেডিয়ামে ক্রিকেট ম্যাচে হয় তেমনি।
ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ হয়েছে, বাংলাদেশিরা ছিলো দুই ভাগে বিভক্ত দর্শক। এক ভাগে ভারতকে সমর্থন প্রদানকারী আরেক ভাগে পাকিস্তান। যারা পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়েছে তারাই রাজাকার আর ভারত সমর্থনকারী মুক্তিযোদ্ধা। এমন ইতিহাসই কি রেখে যাবো পরবর্তী প্রজন্মের জন্য?
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:২২