মৃত্যু যখন প্রিয়জনকে দূরদেশে নিয়ে যায় মানুষ সেই শোকও সহ্য করে খুব সহজেই। মৃত মানুষটার অনুপস্থিতি খুব বেশীদিন মানুষ উপলব্ধি করেনা। সময়ের প্রয়োজনে বাস্তবতার ছুটে চলায় সেই প্রিয় মানুষটার শারীরিক অনুপস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু কখনো কখনো একজন জীবিত মানুষই সীমাহীন কষ্টের হয়ে দাঁড়ায় আমাদের জন্য। বলতে পারবেন কেন? কারণ তার অফুরন্ত স্মৃতি আপনার জীবনের সাথে মিশে আছে। এই স্মৃতির পরিমাণ এবং আপনার সাথে সেইসব স্মৃতির জড়িয়ে থাকার গভীরতার উপর নির্ভর করে সে মানুষটিকে ভুলে যাওয়া/না যাওয়া কিংবা তার অনুপস্থিতিতে আপনি কতটা যন্ত্রণা উপলব্ধি করবেন বা করবেননা। অর্থাৎ স্মৃতির পরিমাণ যতো বেশী হবে, যতো গভীর হবে ততোটাই দীর্ঘ হবে আপনার জন্য তার অনুপস্থিতি বা দূরে চলে যাওয়ার যন্ত্রণাকর মুহূর্ত। এমনকি আমৃত্যু আপনি সে মানুষটার শূন্যতা উপল্পব্ধি করতে পারেন যদি আপনি খুব আবেগপ্রবণ মানুষ হয়ে থাকেন।
একজন আবেগপ্রবণ মানুষ এক পলক স্থায়ী হওয়া সুখের স্মৃতিকেও আজীবন যত্ন করে ধরে রাখতে পারে হৃদয়ের গভীরে আবার অসহনীয় যন্ত্রণাদায়ক স্মৃতিও সে আমৃত্যু লালন করে যায় নিজের মাঝে। পৃথিবীতে যে মানুষ যতো বেশী আবেগী তার ততোই কষ্টের ভাণ্ডার ততোটাই সমৃদ্ধ আর হালকা কিংবা আবেগহীন মানুষ অথবা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারা মানুষগুলি পৃথিবীর সুখী মানুষদের দল ভারী করতে পরিপক্ব। তাদের সুখী হতে পারা কিংবা দু:খ পাওয়া একান্তই নিজের উপর নির্ভর করে। অন্যদিকে দেখবেন আবেগপ্রবণ একজন মানুষের সামান্য হাসির পেছনেও লুকিয়ে থাকে অন্যকারো অবদান। তার প্রতিফোটা চোখের জলে লেখা থাকে অন্যকোনো মানুষের নিষ্ঠুরতা বা তিরস্কার।
জানিনা কার কি অভিমত তবে নিজের জীবনের জটিলতা আর কঠিন বাস্তবতা থেকে মর্মেমর্মে আমার উপলব্ধি হচ্ছে যদি আবেগটাকে পোষা প্রাণী কিংবা দাসদাসীর মতো নিয়ন্ত্রণে আনার ক্ষমতা অর্জন করা যায় তবে জীবনের গল্পগুলো বিষাদময় হয়না।
আমার কাছে মনে হয় এই আবেগ এবং স্মৃতি কঠিন ব্যধির মতোই নীরব ঘাতক! যে ঘাতক তিলে তিলে নিঃশেষ করে দেয় জীবনিশক্তিকে এবং এদের জীবাণু চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যবহৃত বিশ্বের অত্যাধুনিক কোনো যন্ত্রও ধরতে পারেনা। শুধু অসহায় উপলব্ধি করতে পারে সেই মানুষটি যার শরীরে আর মনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে জীবাণুরা। প্রতিকার কিংবা প্রতিরোধে পুরোপুরি ব্যর্থ তাই আত্মসমর্পণ করা ছাড়া কিছুই করার থাকেনা তখন। চোখের সামনে চোরাবালির গভীরে নিজেকে তলিয়ে যাবার দৃশ্যটাই ভয়ানক ভাবে বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠে শুধু।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:৫৬