শীতের শুরুতে গ্রামে যাওয়ার মজায় আলাদা।আর এই অল্প অল্প শীতের মধ্যে ঈদ হওয়ায় বেড়ানোর সুযোগটা আর হাতছাড়া করিনি।ঈদের দিনটা খুব পানসে ভাবে কাটলেও পরের দিন থেকে বেড়ানো শুরু হওয়ায় ধুলো খেতে খেতে সব দুঃখ ভুলে গিয়েছিলাম।রাস্তার অবস্থা আর কি বলব!মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল এই বুঝি মাজার হাড্ডি নড়েটড়ে গেল।বড় আপুর বাসা নওগাঁ জেলার সাপাহার থানায়।ধুমসে ক'দিন বেড়ালাম আর ছবি তুললাম।প্রথমেই দিবর দিঘী।
এই বিশাল দিঘী যাওয়ার পথে
অনেক ছোট খাটো দিঘীও চোখে পড়ে।আর গা ছমছম করা বন।চারপাশে শুধু সবুজ আর সবুজ
পাল রাজাদের হাতে তৈরী এ দিঘী নিয়ে অনেক লোককথা শোনা যায়।
দিঘীর একদম মাঝখানে এই স্তম্ভটি দাঁড়িয়ে আছে
স্তম্ভ থেকে চতুর্দিকে সমান জায়গা নিয়ে দিঘীটি।প্রচলিত আছে স্তম্ভের মাথায় এমন কিছু একটা লাগানো ছিলো যা দিনরাত সবসময় জ্বলতো।পরে কেউ সেটি ভেঙ্গে নিয়ে গেছে।
সাপাহার বাসস্ট্যান্ড থেকে মাত্র চারকিলো দূরে এই দিঘী।ইজি বাইকে চড়েই যাওয়া যায়।বাস যায় অহরহ।দু'টাকা জনপ্রতি।পত্নীতলা থানার মধ্যে পড়ে এই দিঘী।
তখন সূর্য্য ডুবুডুবু প্রায়।নৌকায় চড়ে মধ্যখানের পাথরের স্তম্ভ ছুঁয়ে এলাম।কত শত বছরের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কে জানে!
পাড় ঘেঁষে এই লজ্জাবতীর ফুল
দীঘির পাড় এখন পিকনিক স্পট হিসেবে সুপরিচিত।বিভিন্ন নদী যেমন পদ্মা মেঘনা যমুনা নামে বসার জায়গা রয়েছে।একটি বাংলোও রয়েছে ।ইচ্ছে করলেই রাত কাটানো যাবে।আপনিও কোনো এক জোছনা রাতে একটা রাত কাটিয়ে আসতে পারেন এই সুবিশাল প্রাচীন দিঘীটির ধারে।
দীঘি দেখা হল।পরের দিন দেখতে গেলাম কুমোর পাড়া।সারি সারি কুমোরের বাড়ি।উঁচু করে রাখা মাটির হাঁড়ি পাতিল।অদ্ভুত দক্ষতায় নিমেষের মধ্যে মাটির খোলা তৈরী করে ফেলল।ঝটপট তুলে ফেললাম ছবি।
এই বুড়ো চাচা তৈরি করছিলেন মাটির কলস
তারপর জবাই বিলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।নিশ্চিন্তপুরের বাঁক পেরুতেই সারি সারি পাকা ধানের ক্ষেত।ধান কাটার মৌসুম শুরু হয়েছে।মন পাগল করা পাকা ধানের গন্ধ।আহ!
আমাকে তাঁরাই ডিরেকশান দিল।ধান উঁচু করে মাথার উপর তুলবে।তখন আমি ছবি তুলবো।আমিও লক্ষি মেয়ের মত তাই করলাম।
পথে যেতে যেতে কত কিছু দেখলাম
গ্রামের টি-স্টল।অবশ্য বসে চা খাওয়া হয়নি।কে জানে সেখানেই হয়ত সেরা চা টা বানায়।আফসোস!
মাটির দোতলা বাড়ি
এই পুরোনো মন্দিরটা কবেকার তার কোনো হদিশ মেলেনা।তবে চমৎকার তাতে সন্দেহ নেই।কিছুক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়।
দেখুন কেমন গাছের শিকড় আপন খেয়ালে নকশা করেছে!
তারপর পথের মধ্যে সাঁকো।দু ধারে সবুজ পানি।
শুধু সৌন্দর্য আর নির্মলতা
অবশেষে বিলের দেখা পেলাম।
মাঝে রাস্তা দুধারে পানি।একশত ছিয়াত্তর মিটার লম্বা একটি ব্রিজ।এমন বিলের উপর ব্রীজ বোধহয় বাংলাদেশে খুব একটা নেই।
বর্ষার পরে এখন ধীরে ধীরে পানি কমছে।কদিন পরেই ধান লাগানো হবে বিলের মধ্যে।
জল থইথই
তারপর ফিরে আসা।
পথে মহিষের গাড়ি।ধান বোঝায় করে বিকেল হলে এ পথ ধরেই ফিরে যাবে নিশ্চয়ই।
আবার ধূলো মাখা লাল মাটির পথে কবে আসব!তাই জমিয়ে নিয়ে এলাম স্মৃতি মুঠো মুঠো।সময় পেলে বেড়িয়ে আসুন আপনিও।