শামীম সাহেব ছোট বয়সেই তার মা বাবাকে হারিয়েছেন, তাই তাদের কথা খুব একটা মনে নেই।
বড় হয়েছেন এক চাচার কাছে। চাচার কাছে তিনি প্রায় সবকিছুর জন্যই ঋণী। মা বাবার শূন্যতাকে পূরণের চেষ্টায় কোন কার্পণ্য করেননি এই চাচা, চাচীও ব্যতিক্রম নন। মায়ের দায়িত্ব পালনে সদা সচেষ্ট ছিলেন তিনিও।
সিদ্ধান্ত নেয়ার বয়সে পৌছলে শামীম সাহেব মনস্থির করেন প্রোকৌশন বিদ্যায় পারদর্শী হওয়ার জন্য। চাচা চাচী দুজনের অনুপ্রেরণা এবং সায়, দুটিই কাজ করছিল এতে।
কিন্তু একটি দু:সংবাদে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বাধ্য হন। দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত চাচীর কথা মাথায় রেখে ডাক্তারি পড়াতে মনোনিবেশন করেন।
বহু বছর পর আমেরিকাতে ডাক্তারী বিদ্যায় উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করে দেশা ফেরা হয় শামীম সাহেবের। ডাক্তার হিসাবে সারা দুনিয়া জুড়ে তার খ্যাতি।
ততদিনে চাচা চাচী দুজনাই এই দুনিয়ে ছেড়ে বিদায় নিয়েছেন। মাঝখানে তাদের দেখতে দেশে ফিরেছিলেন তিনি।
দেশে ফিরেই গ্রামের বাড়ির দিকে রওয়ানা দেন শামীম সাহেব। চাচা চাচীকে কবর দেয়া হয়েছে পারিবারিক গোরস্থানে, যেখানে মা বাবাও শায়িত আছেন।
সবার কবর জিয়ারত শেষে এক নিকট আত্মিয়ের বাড়িতে আতিথেয়তা গ্রহন করেন, সম্পর্কে তিনি ফুপা হন।
জ্যোৎস্নালোকিত রাতে বাড়ির দাওয়ায় বসে তারায় ভরা রাতের আকাশে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন শামীম সাহেব।
কিরে মার কথা কিছু মনে পড়ে - ফুফুর কথায় ধ্যান ভাংগে তার।
দীর্ঘস্বাস ফেলেন তিনি।
তোর মা তোকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখতেন। আকাশের সবচাইতে বড় তারাটি দেখিয়ে সবাইকে বলতেন আমার ছেলে ঐ তারার সারা দুনিয়ায় আলো ছড়াবে।
কিছুক্ষণ নিরব থাকেন, শামীম সাহেব। তারপর আস্তে করে ফুফুকে শুধান, মা আমাকে নিয়ে কি স্বপ্ন দেখতেন।
তোর মা মারা যাওয়ার কয়েক বছর আগে, ভয়ানক এক রোগে তার আক্রান্ত হওয়ার কথা জানতে পারি আমরা।
আমরা তোর মাকে তার আশু মৃ্ত্যুর কথা জানাতে চায়নি, কেননা তুই তখন খুবই ছোট। শুধুই আকার ইংগিতে বলতাম তোমার রোগ হয়েছে, সারাবার জন্য বড় ডাক্তার প্রয়োজন।
ফুফু চোখ মুছতে মুছতে বলেন, তোর মা সবাইকে বলে বেড়াত আমার ছেলে দুনিয়ার সবচাইতে বড় ডাক্তার হবে। আমায় সারিয়ে তুলবে।
শামীম সাহেবের দুচোখ বেয়ে অঝোরে পানি বইতে থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৭ রাত ৯:৪৬