somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা কম কেনো ?

১৪ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বঙ্গবন্ধু বিমান থেকে নেমেই জিজ্ঞেস করলেন, ওরা আমার চোখের ডাক্তারকেও কি মেরে ফেলেছে ?
সেই ডাক্তারের দুটো মেয়ে ছিল ! দুজনের বয়সের মধ্যে পার্থক্য মাত্র এক বছর ! বড় মেয়েটা অসুস্থ থাকার কারনে তার মা, ছোট মেয়েটাকে খুব বেশি সময় দিতে পারতেন না ! সারাদিনের ব্যাস্ততা শেষ করে সেই ডাক্তার যখন বাসায় আসতেন, তখন তার ছোট মেয়েটাকে তিনি বুকের উপর রেখে ঘুমাতেন ! মেয়ে বুকে থাকার কারনে ডাক্তার সাহেব পাশ ফিরতে পারতেন না, কাঁত হয়ে ঘুমাতে পারতেন না ! এই ডাক্তার লোকটাকে তারা ধরে নিয়ে গেল ১৫ডিসেম্বর বিকেলবেলা ! তারপর তাকে বাংলার আরো অনেক সূর্যসন্তানদের সাথে ময়মনসিংহ ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইন্সটিউটে রেখেছিল !
ডাক্তার সাহেবের লাশ তার পরিবার পেয়েছিল ১৮ তারিখে ! তারা দেখলো তার বুকটা ঝাঁজরা করে দেওয়া হয়েছে, কপালে বেয়নেট ঠুকিয়ে কপালটা ক্ষতবিক্ষত করে দেওয়া হয়েছে !
কথাগুলো বলছিলেন, ডাঃ নুজহাত চৌধুরী, সেই ডাক্তারের গর্বিত সন্তান ! কথাগুলো শেষ করে প্রশ্ন করলেন, আমাদের বাবারা কেনো হাসিমুখে জীবন দিয়েছিলেন জানেন ? তাদের আশা ছিল, আপনাদের হাতে দেশটা দিয়ে গেলে আমার দেশটা আরো ভালো থাকবে ! শুধু এই আশায়, শুধু এই আশায় তারা তাদের জীবনটা দিয়ে গিয়েছেন, কিন্তু বাস্তবে কি তাদের স্বপ্ন পুরন হয়েছে ?
পরবর্তীতে স্বাধীন দেশেও সেই সব মানুষগুলোই যারা স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল, যারা নিজ হাতে এইসব সূর্যসন্তানদের খুন করেছিল বা ধরিয়ে দিয়েছিল তারাই দীর্ঘদিন দেশের মূল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল ! ওদেরকে কারা বসিয়েছিল ক্ষমতার আসনে ?
আচ্ছা, ওই ডাক্তারের সম্পর্কে সবই তো প্রায় বলে দিলাম, ওই ডাক্তারের নামটা কি বলতে পারবেন এখন ?
মার্চের প্রথমের দিকে যখন আপনাদের সামনে এইসব ইতিহাস জানানোর ক্ষুদ্র চেস্টা শুরু করেছিলাম, তখন থেকেই দেখি, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের বয়সীদের আগ্রহ কম ! যেখানে ৮০-৯০ লাইনের লুতুপুতু গল্প হাজার হাজার ছেলে মেয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়ে, তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধর উপরে লিখা ২৫-৩০ লাইনের পোস্ট পড়তে চায় না ! সেদিন জিজ্ঞেস করলাম, মুক্তিযুদ্ধের সময় যদি আমরা তরুন থাকতাম তবে কি আমরা দেশের জন্য এতোটা করতে পারতাম ?
একজন মজা করে বললেন, সেই সময়ে আমাদের জন্মগ্রহন না করে সৃষ্টিকর্তা খুব বড় ভালো কাজ করেছেন !
আসলেই তাই ! আমরা যদি আমাদের অতীত ইতিহাস না জানি, আমাদের প্রজন্মকে না জানাই, তাহলে আবারো হয়তো আরেকবার দেশকে স্বাধীন করতে হবে, সেদিন আর কেউ যুদ্ধে যাবে না ! ঘরে বসে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিবে, "বাইরে খুব গোলাগুলি হচ্ছে, আমার খুব ভয় করছে, প্লিজ সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন" সবাই সেখানে কমেন্ট করবে, 'আল্লাহ আপনার সহায় হোন, আমীন' ! আর কিছু মানুষ খাকী পোশাক ওয়ালাদের সাথে অন্তরঙ্গ সেলফি তুলে ফেসবুকে আপলোড দিবে, ক্যাপশন হবে...... থাক আর না বলি !
এখনো আমরা একেবারে হারিয়ে যাই নি বলেই, এখনো শাহবাগে গনজাগরন মঞ্চ তৈরি হয়, তবে কথাগুলো খুব অভিমান নিয়ে বলা, কেউ ব্যাক্তিগত ভাবে নিয়েন না প্লিজ ! আমি যুদ্ধ দেখি নি, কিন্তু আমি "ওরা ১১জন", "আমার বন্ধু রাশেদ"...... মুভি দেখেছি, আনিসুল হকের লিখা "মা"...... পড়েছি ! যদিও সেখানে তাদের অত্যাচারের বর্ণনা খুব কমই উঠে এসেছে !
রাত জেগে যখন আপনাদের জন্য এইসব পোস্ট লিখি তখন আমার রুমে থাকা ছেলেটা তার প্রেমিকার সাথে গল্প করা থামিয়ে বলে, পিয়াস তোর এতো ধৈর্য আসে কই থেকে ভাই ? তখন তার উত্তরে একটা ছোট্ট হাসি দেওয়া ছাড়া আর কিছুই বলার থাকে না ! কেননা সে হয়তো ভেবেই নিয়েছে, তার পুরো পৃথিবী ফোনের ওপ্রান্তে, সেটাই সব ! বাইরে সব পাগলেরা থাকে !
এই পাগল হয়ে থাকার যে কতটা আনন্দ, আমার রুমে থাকা ছেলেটা যদি জানতো.........
আসুন আমরা সচেতন হই, নিজের অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তা করি, পরের প্রজন্মকে চিন্তা করতে শেখাই, তবেই হয়তো সেই ডাক্তারদের আত্মারা শান্তি পাবে !
শুভকামনা নিরন্তর !
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৪৮
১২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×