দেখে ফেললাম, ঢাকা অ্যাটাক!
প্রথমেই বলে রাখি, আমি মুভির দোষ ধরতে হলে যাই নি, মুভিটা কেমন বানিয়েছে সেটা দেখতে গিয়েছিলাম !
আমরা সবসময়ই বাংলা সিনেমায় পুলিশকে ঘুষখোর হিসেবে দেখে থাকি, ২/১টা ভালো অফিসার থাকলেও সে মুভির শেষে এসে বলে, 'হ্যান্ডস অাপ, আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না'....
কিন্তু এই ধারনা ঢাকা এটাক দেখার পর, হল থেকে বের হয়ে মুছে গেছে!
গল্পের শুরুতে, কিছু সন্ত্রাসী একটি ল্যাবে হামলা চালিয়ে বেশ কিছু রাসায়নিক দ্রব্য চুরি করে নিয়ে যায়, যেগুলো দিয়ে বিস্ফোরক বোমা বানিয়ে সেগুলো দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা! আর এই সন্ত্রাসী দল কে ধরতে গিয়ে একের পর এক কাহিনী রচিত হয়! পুলিশ সদর দপ্তরে একের পর এক মিটিং, সোয়াট দলের অপারেশন, বোম্ব স্কোয়াড সদস্যদের ছোটাছুটি, তবে শেষ পর্যন্ত কি হয়, তা না হয় হলে গিয়েই জানবেন !
আমাদের দেশে পুলিশের একশন নিয়ে, তাদের দায়িত্ব নিয়ে পুলিশকে পজিটিভ ভাবে উপস্থাপন এই প্রথমবার ! অনেকেই হয়তো সমালোচনা করবেন যে, কিছু ডায়ালগ বেশি খামখেয়ালিপনার সাথে করা হয়েছে, এডিটিং আরেকটু ভালো হতে পারতো, নায়িকাকে মানায় নি.......
কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে, আরেফিন শুভর কাছে first and furious মুভির নায়কের মতো অভিনয় আশা করাটা বোকামি ! তবে আমরাও হলিউডের মতো হতে চেষ্টা করছি, যার শুরুটা হলো ঢাকা এ্যাটাক! ভুলভ্রান্তি থাকবেই, পরেরবার যখন এরকম এ্যাকশন ধর্মী সিনেমা আরো তৈরি হবে তখন সংশ্লিষ্টরা হয়তো এই ভুলগুলো শুধরে নিবেন, একটা সময় দেখা যাবে, আমাদের বাংলা সিনেমাও হলিউডের এ্যাকশন সিনেমার চেয়ে কম কিছু নয়! ভালো কিছুর জন্য একটু সময় তো লাগবেই, তাই না?
তবে মুভিটির দুই নারী চরিত্রই যথেষ্ট বিরক্তিকর! টানটান মুহুর্তের সময় এমন এমন আবদার! হলে গিয়ে মনে হল দর্শকরাই চেঁচিয়ে তাদের সেই আবদার ফিরিয়ে দিচ্ছে! কিন্তু কি আর করা বলুন, ভালোবাসা তো এমনই! পুরো দেশের নিরাপত্তার বোঝা আপনার মাথায়, সেই কঠিন মুহুর্তে আপনি যেনো ভালো থাকেন, সেই চিন্তা তো আপনার আপনজনের থাকবেই ! আমরা কেউই চাই না, আমাদের আপনজনদের কোনরকম ক্ষতি হোক! তাহলে মাহী চাইলে দোষ কি!
স্ত্রীর সন্তান হবার মুহুর্তেও তার পাশে থাকতে না পারার অাকুতিটাও যে একজন সোয়াট সদস্যের জন্য কতোটা মর্মান্তিক, সেটা কি সিজার অপারেশনের টেবিলে শুয়ে স্ত্রী টের পান?
কিন্তু ডাকটা যখন আসে দেশের প্রয়োজনে, সেখানে হাজার বাধা আসলেও দেশের ডাকে সাড়া দেওয়াটাই তো সত্যিকারের দেশপ্রেমিকের কাজ!
কিন্তু আপনার প্রিয়জনের কথা হলো 'আপনাকেই কেনো যেতে হবে, ডিপার্টমেন্টে কি আর কেউ নেই'!
আমরা সবাই যদি সবাইকে ইনডিভিজুয়াল চিন্তা করি, তাহলে তো সবারই প্রিয়জন আছে! কিন্তু দেশের প্রয়োজনে যেতে যেহেতু হবেই, সেখানে আমি গেলে ক্ষতি কি! বরং এটাই তো তৃপ্তি ! যে আত্বতৃপ্তির আশায় আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা আপনজনের শত বাধা সত্বেও ঝাপিয়ে পড়েছিলেন, একটি পতাকাকে রক্ষার জন্য!
প্রিয় পাঠক, ঢাকা অ্যাটাক মুভিটাও শেষ হয়েছে অামাদের জাতীয় পতাকাটা অর্জনের মাধ্যমেই!
মুভির সাথে জড়িত সকলকে ধন্যবাদ ! এমনকি যারা দোয়েল চত্বরে শুটিংয়ের সময় পাশে দাড়িয়েছিলেন, তাদেরকেও !
এরকম মুভি অামরা অারো দেখতে চাই এবং হলে গিয়েই দেখতে চাই......