somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"নুহাশপল্লী সমাচার"

০২ রা মে, ২০১৮ রাত ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নুহাশ পল্লী ঘুরে অাসলাম !
গাজীপুরের এক গহীন বনের ভেতর এই পল্লীর অবস্থান ! বাইকে করে যাওয়ার সময় ভাবছিলাম, এই জঙ্গলের ভিতর হুমায়ুন অাহমেদকে জমির সন্ধান দিয়েছিলো কে ! এবড়োথেবড়ো ভাঙ্গা রাস্তাটা প্রচুর স্পিড ব্রেকারে পূর্ণ ! বাইকে গতি তোলা যাচ্ছিল না ! একসময় পৌছালাম নুহাশ পল্লীর দরজায় ! চলুন ভিতরে ঢুকি !
সামনের মাঠটা চমৎকার ! গলফ খেলার ফিল্ড যেমন হয় অনেকটা তেমন ! মাঝখানে একটা লিচু গাছ ! সেই গাছের সাথে একটা উচু ঘর ! এখানে কেউ বাস করে ভেবে ভুল করবেন না, ওটা শুধু ছবি তোলার জন্য ! সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে ছবি তুলুন তারপর সিড়ি দিয়ে না নেমে একটা লাফ দিন ! লাফ দেওয়া শেষ হলে জুতোর ফিতাটা অাবার বেধে নিন !
এবার মাঠটা পার হলে, অনেক রকমের গাছ চোখে পড়বে ! বেশীরভাগ গাছেরই নাম জানবেন না বা জানলেও চিনবেন না এমন ব্যাপার ! পাশ দিয়ে রাস্তা ! সেই রাস্তায় এই মুহুর্তে একটা ছেলে হলুদ কালারের পোলো টিশার্ট পরে সুমধুর সুরে বাশি বাজাতে বাজাতে হেটে যাচ্ছে ! পায়ে কোনো সেন্ডেল না থাকায় পায়ে বেশ কাদা লেগে অাছে(ইনার গল্প অারেকদিন হবে) !
অারেকটু ভিতরে ঢুকলে একটা ভূত টাইপের বড় ভাষ্কর্য দেখতে পাবেন ! মেয়েরা এটার সামনে দাড়িয়ে ছবি তুলুন অার ছেলেরা এই ভাষ্কর্যের মাথায় উঠে নিজেকে কিছুক্ষনের জন্য দরবেশ বা সন্ন্যাসী বাবা ভাবুন ! উপর থেকে দেখবেন সামনে একটা নারী ভাষ্কর্য ! দেখতে বেশ লাগছে ! কিছুক্ষন তাকায় থাকুন, চোখের অারাম লাগবে ! তবে সাথে যদি মেয়ে থাকে তাহলে এই ভাষ্কর্যটা ইগনোর করার ভান করুন ! এটা দেখা শেষ হলে অাপনার সামনে বেশ বড় পুকুর দেখা যাবে ! পুকুরের মাঝখান দিয়ে একটা কাঠের ব্রীজ অর্ধেক পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়ে গেছে ! মাঝখানে তিনটা বেঞ্চি রাখা ! এতোটা পথ হেটে এসে অাপনার ক্লান্তি লাগতে পারে, এবার এখানে বসতে পারেন !
এবার চারপাশে তাকান ! অাপনার সামনে একটা বাড়ি ! ডান বাম এবং পিছন তিনদিকেই পানি ! তবে পুকুরের চারপাশ দিয়ে হাটা যায় ! এবার সেখান থেকে উঠে পড়া যাক ! পুকুরের পিছনটায় একটা গাছ অাছে ! সেই গাছে খোদাই করে ছেলেরা তার নামের প্রথম অক্ষরের সাথে তার প্রিয়তমার নামের প্রথম অক্ষর লিখে রেখেছে ! জগতে এতো প্রেম দেখলেই মন ভরে যায় ! গাছটার পাশে অারেকটা ফুলের গাছ ! মে বি কাঠালি ফুলের গাছ এটা ! পাশে একটা উচু জায়গাও অাছে ! সেখানে দুটো দোলনা অাছে ! তার একটা দোলনায় চড়বেন না কারন সেটি ভাঙা ! পাশের দোলনাটায় অারাম করে বসে পুকুরের দিকে তাকান অার প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে দোল খান !
দোল খেয়ে তৃপ্তি চলে অাসলে অাবার পুকুরের পাড় ধরে হাটতে থাকুন ! এটাই জমির শেষ সীমানা ! তবে হাটার সময় এই কর্নারে এক জোড়া ভালোবাসার মানুষ দেখতে পাবেন যারা একে অপরের সাথে নিরিবিলিতে বসে অনাগত ভবিষ্যতের গল্প করছে ! অাপনার এটা ইগনোর করা উচিত হবে কারন অাপনার এরকম গল্প করার কেউ নেই ! দুপাশে গাছের সারি মাঝখান দিয়ে হেটে যাওয়ার রাস্তা ! সময়টা যদি বিকেল হয়ে থাকে তাহলে দেখবেন পুকুর পাড়ের এই দিকটা অসম্ভব সুন্দর লাগছে !
সামনের দিকে হাটার সময় দেখবেন, দুটো লোক করাত দিয়ে একটা গাছ কাটছে ! অাপনি তাদের ছবি তুলতে চাইবেন, তারা তরমুজের বিচির মতো দাত বের করে অাপনার ছবিতে পোজ দিবে ! ছবি তোলা শেষ হলে দেখবেন, এখানে একসময় বেশ বড় বড় কয়েকটা বরইয়ের গাছ ছিল যেগুলা এখন মাথা ছাড়া দাড়িয়ে অাছে ! অাপনি একটু অাপাইড়া টাইপের তাই এই মাথাবিহীন বরই গাছে উঠে কয়েকটা ছবি তুলেলে সেখান থেকে লাফ দিবেন ! তারপর সেটা এক বন্ধুকে ক্যামেরাবন্দী করতে বলুন ! লাফ দেওয়া শেষ হলে দেখবেন বরইয়ের কাটা লেগে অাপনার হাতটা একটু ছিলে গেছে ! ছেলেদের এসব ছোটোখাটো কাটাছেড়া ইগনোর করতে হয় ! তারপর একটু রেস্ট নিয়ে বাইরে বের হয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকের কবরটা একবার জিয়ারত করে চলে অাসুন ! কবরের উপরে কাচের দেয়ালটিতে তার 'কাঠপেন্সিল' বইয়ের একটা লাইন লেখা অাছে,
''কল্পনায় দেখছি নুহাশ পল্লীর সবুজের মধ্যে ধবধবে শ্বেতপাথরের কবর তার গায়ে লেখা,
চরন ধরিতে দিও গো অামারে
নিয়ো না, নিয়ো না সরায়ে"

যারা দূর দূরান্ত থেকে নুহাশ পল্লীতে হুমায়ুনের এই অমর সৃষ্টি নুহাশ পল্লী দেখতে যান, তাদের প্রবেশের জন্য ২০০টাকা দিয়ে টিকেট কিনতে হয় !
টাকার অঙ্কটা দেখে মনে হলো, মৃত্যুর পরেও মানুষটাকে নিয়ে ব্যাবসা চালানোর কমতি নেই !
তবুও ভালো থাকুক হুমায়ুন অাহমেদ !
ভালো থাকুক তার পাগল ভক্তরা !
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৮ রাত ১০:৫২
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×