somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উন্নয়নের মহাসড়কে আমার পরীক্ষা !

০১ লা জুন, ২০১৮ রাত ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাঙলা কলেজে পরীক্ষা ছিল সকাল ৯টায় !

শ্যাওড়াপাড়া থেকে সকাল ৭টায় বাসে উঠলাম, যাতে সময়মতো পৌছাতে পারি ! বাইরে 'টিপটাপ বারসা পানি' গানের তালে তালে পানি পড়ছে...

কাজীপাড়া মসজিদের সামনে গিয়েই বাসটা থেমে গেলো! উন্নয়নের মহাসড়কে মাত্র হাটু পানি, গলা পর্যন্ত যেহেতু হয় নাই সুতরাং এটা উন্নয়নই বলতে হবে ! সামনে অনেকগুলা গাড়ি নষ্ট হয়ে পড়ে অাছে, কেউ কাওকে অতিক্রম করতে পারছে না !
বাসের দরজার সামনে কোথা থেকে এক নৌকাওয়ালা নৌকা নিয়ে এসে বললো, ১০নাম্বার পর্যন্ত মাত্র ১০০টাকা, অাসন সংখ্যা সীমিত, তাড়াতাড়ি উঠে অাসুন !
মনে মনে খুশি হলাম, যাক, দেশ থেকে এখোনো মানবতা হারিয়ে যায় নি ! ৭১ এ শুনেছিলাম, যার যা কিছু অাছে তাই নিয়ে শত্রুর মুকাবিলা করতে হবে, অাজও সবার মাঝে সেই ৭১এর চেতনা বিদ্যমান ! যার বাসায় নৌকা অাছে, সে নৌকা নিয়েই মহাসড়কে ওঠা পানির মোকাবিলা করতে চলে এসেছে ! সেদিন নাকি এই নৌকাটাতেই ভরসা করে ২৩জন ঠেলাঠেলি করে উঠেছিলো, তারপর সবাই মোটামুটি রাস্তাতেই অাধগোসল করে বাড়ি ফিরেছে...
নৌকাটা ভরসা দিতে পারলো না, প্যান্টটা ৫ ভাজ দিয়ে হাটু পর্যন্ত উঠিয়ে বাস থেকে নেমে পড়লাম ! দেখি, এক চাচা লুঙি পরে পানির মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ! পানি যত বাড়ছে চাচা তত লুঙি উচা করতেসে অাবার যেখানে পানি কমছে সেখানে লুঙি নামিয়ে দিচ্ছে ! ডিজিটাল দেশে ডিজিটাল সিস্টেম ! খুব অাফসোস লাগলো, ক্যান যে লুঙি পরে পরীক্ষা দিতে বের হলাম না !
হুট করে দেখি, চাচা গায়েব ! সামনে পেছনে কোথাও সে নাই, যাকে অনুসরন করে পথ চলছিলাম, তাকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়লাম !
হঠাৎ চাচা লুঙিতে গিট্টু দিতে দিতে পানির মধ্যে থেকে উঠে দাড়াচ্ছে ! উঠেই বললেন, অালহামদুলিল্লাহ, ম্যানহোলের ঢাকনাটা খোলা ছিল বলেই অাজ ম্যানহোলটার মধ্যে থেকে বাইর হতে পারলাম, নইলে.... !
তিনি এক খোলা ঢাকনা দিয়ে ভেতরে পড়ে অারেক খোলা ঢাকনা দিয়ে বের হয়ে যেতে পেরেছেন জেনে শান্তি লাগলো ! অামি খুব সাবধানে অাগাচ্ছি, যাতে অামার ওরকম কিছু না হয় ! ততোক্ষনে হাতিলের অপোজিটে চলে এসেছি, ঘড়িতে সময় সকাল ৮টা ৬ মিনিট !
কোমরটাতে কেমন জানি ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভূতি অাঘাত করতে শুরু করলো ! রোজা অাছি তাই হয়তো এই শীতল অনুভূতিটা মনের মধ্যে অন্যরকম ভালো লাগা এনে দিচ্ছে ! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে হাটতে গিয়ে সামনের পা'টা গর্তে নেমে যাওয়ায় কোমর পর্যন্ত ভিজে গেছে, উপহারস্বরূপ এই শীতল অনুভূতি !
সৃষ্টিকর্তার প্রতি অশেষ কৃতঙ্গতা যে, এডমিট কার্ডটা অক্ষত অাছে ! পানির মধ্যে অাবার এক পা এক পা করে এগিয়ে ১০ নাম্বারে পৌছালাম ! পথে কতো ইতিহাস রচিত হলো, থাক সে কথা !!
১০ নাম্বারে দেখি, এই রাস্তাটা মোটামুটি ফাকা ! দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর মিরপুর লিংকের দেখা পেলাম, কাছে অাসতেই বুঝলাম ভিতরে পিপড়া ঢোকারও জায়গা নাই ! অামার সামনে দিয়েই প্যা পু করতে করতে চলে গেলো ! কবিগুরুর সোনার তরী কবিতাটা খুব মনে পড়লো ! ভাগ্যিস কবিগুরু মিরপুরে কখোনো অাসেন নি, তাহলে তার অার সোনার তরী রচনা না হয়ে মিরপুর লিংক রচিত হয়ে যেতো !!
হাটতে হাটতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে চলে এলাম !
দেখি প্রজাপতি বাস অামার জন্য অপেক্ষা করছে ! বাসে উঠে ভাবছি, বাঙলা কলেজ, তুমি অার কতোদূর !
ঘড়িতে সময় ৯টা ২১ ! প্রজাপতি এসে থামলো মিরপুর ১এর প্রিন্স বাজারের সামনে ! সামনের গাড়িগুলা একটুও নড়ে না, অাবার নেমে পড়লাম ! কাজীপাড়ার মতো অতো অশ্লীল রাস্তা এটা নয়, এখানে মাত্র হাটু পানি ! সাবধানে এক পা এক পা করে পানির মধ্যে দিয়ে হাটছি ! একবার যদি ম্যানহোলের খোলা ঢাকনায় পড়ি, জীবনে অার বের হতে পারবো কি না সন্দেহ ! ম্যানহোলের শেষ প্রান্ত বুড়িগঙায় যাওয়ার কথা, সেখানে গেলেও একটা ভরসা থাকতো, কিন্তু এসব ম্যানহোলের কোনো মা-বাপ নেই ! ঢাকনাহীন একেকটা গর্ত একেকটা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল ! ভিতরে একবার পড়লে বঙবন্ধু স্যটেলাইটও সন্ধান দিতে পারবে না !
পরীক্ষা ভালো করে দিবো, সে চিন্তা অনেক অাগেই দূর হয়ে গেছে ! অাল্লাহকে ডাকতেছি, শুধু পরীক্ষাটা শেষ হওয়ার অাধা ঘন্টা অাগে হলে পৌছিয়ে অন্তত ৪৫/৫০নাম্বারের উত্তর দিতে পারলেও ইংলিশে পাশ করে যাবো ইন শা অাল্লাহ !
এক রিকশা ওয়ালাকে বললাম, মামা বাংলা কলেজ যাবা ! উনি বললেন, মাথা ঠিক অাছে মিয়া, নৌকা চলাচলের রাস্তায় এসে রিকশা খুজেন ! কোন গাড়ি কোন পথে চলে এইডাও জানেন না.... !
ভয়ে অার কোনো রিকশা ডাকার সাহস পাই নি !
প্যান্ট পুরা ভেজা, পকেটে হাত দিয়ে ভিতর চুলকাইতে চুলকাইতে হাটছি ! মনে মনে ভাবছি, কোন জায়গা বাদ দিয়ে কোন জায়গা চুলকাইবো, সব জায়গার সমান ইম্পর্টেন্স দেওয়া অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে কিন্তু এক হাতে ছাতা অার এডমিট কার্ডের ফাইল, অারেক হাত পকেটে, এভাবে ওলাপালি করে হাত পকেটে দিচ্ছি ! পচা পানির চুলকানি রোজা রমজান মাসেও একটু ছাড় দিচ্ছে না ! অন্য সময় হইলে চুলকায়ে মজা নেওয়া যাইতো, এখন....!
এক সময় বাংলা কলেজে পৌছালাম ! ঘড়িটা বললো, বস পরীক্ষা শেষ হতে অার মাত্র ১ ঘন্টা বাকী অাছে ! অাইডিয়ার অাগেই হলে পৌছাতে পারছি জেনে কি খুশি অামি !
কলেজের ভিতরে ঢুকে দেখি অামার মতো অারো প্রায় জনা ষাটেক পরীক্ষার্থী তার অাসন খুজতেছে ! "অাসন বিন্যাস" লেখা জায়গাগুলা পানিতে ধুয়ে গেছে, একজন লোক সবার রোল জিঞ্জেস করে করে অালাদাভাবে সবাইকে বলতেসে, অাপনি ৫নং ভবনের ৪০৫ নং রুমে যান, অাপনি ৪নং ভবনের ৪০২ নং রুমে যান....!
অামার সিরিয়াল বলে রুম নাম্বার জেনে নিয়ে রুমের দিকে দৌড়াতে থাকলাম ! রুমে ঢুকতেই ম্যাম বললেন, এতো দেরী কেনো নবাবের ব্যাটা ? চোখ লাল টকটক করছে, দেখে তো মনে হচ্ছে, ঘুম থেকে উঠে সরাসরি হলে চলে অাসছে ! একদিন একটু কম ঘুমালে চলে না? অার ৪৫মিনিট বাকী অাছে, তুমি অার কি পরীক্ষা দিবা ! নেও, খাতায় অাগে নাম রোল ঠিক করে লেখো....
প্রশ্নটা হাতে নিয়েই অমনি চোখ পড়লো, increase এর এন্টোনিম লিখে সেটা দিয়ে একটা সেনটেন্স মেকিং করতে হবে ! পুরা ৮মিনিট ধরে শুধু এটাই ভেবে পেলাম না যে, increase এর এন্টোনিম কি হতে পারে !!
......!.......!.......!......!.........!........!........!......!......!
জয় বাংলা, লুঙি সামলা বা না সামলা, অাগে পরীক্ষা সামলা !!
জয়তু মাই ইংলিশ কম্পোলসারি পরীক্ষা !!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৮ রাত ১:১৬
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×