somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একুশের প্রভাতফেরীতে ঢাকাবাসী মনিপুরি

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান একুশে ফেব্রুয়ারী অমর হোক"


মাতৃভাষার স্বীকৃতি ও তাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবীতে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী মাতৃসন্তানদের রক্তদান ও আত্মাহুতির চূড়ান্ত স্বীকৃতি আজকের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কেবল 'বাংলা'ভাষাকে নয়, পৃথিবীর সমস্ত ভাষার অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে। একুশের চেতনা তাই মানুষের অস্তিত্ব ও অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণের মূলমন্ত্র। একুশের এই সংগ্রামে যারা রক্ত ও আত্মাহুতি দিয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করছি। ইউনেস্কো কর্তৃক নভেম্বর ১৭, ১৯৯৯ তারিখ ২১শে ফেব্রুয়ারীকে "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পর ২১শে ফেব্রুয়ারী ২০০০ সাল হতে অদ্যাবধি প্রতিবছর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমার গভীর গভীর শ্রদ্ধার সাথে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে এদিনটিকে পালন করে আসছি।

পৃথিবীর অপরাপর ভাষার ন্যায় মনিপুরি ভাষাও এক প্রাচীন ভাষা। যার প্রাচীন নাম 'মীতেইলোন' বা 'মেইতেই লোন' । এই ভাষার রয়েছে এক সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও সাহিত্য। উৎস বিচারে এই ভাষা মঙ্গোলীয় মহাপরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং এর উৎপত্তি আজ থেকে প্রায় ৩৪০০ বছর আগে। প্রাচীনতার দিক থেকে মনিপুরি সাহিত্যের স্থান ভারতীয় প্রাচীন সাহিত্য কর্ম কৃষ্ণ যজুর্বেদের পরেই। মনিপুরি ভাষা সাহিত্যের সৃষ্টি সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ যেমন: ওগ্রী, খম্বাথোইবী ইত্যাদি।

মনিপুরি জনগোষ্ঠী পৃথিবীর অন্যান্যস্থানে বসতিস্থাপন ছাড়াও ঢাকা শহরের তেজগাও অঞ্চলে বসতি স্থাপন শুরু করে সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দশকে। কিন্তু কালের ক্ষয়িঞ্চু ধারায় এই জনগোষ্ঠী ক্রমে ক্রমে বিলুপ্ত হয়ে আজ কেবল স্মৃতি হয়েই ইতিহাসের নীরব স্বাক্ষী হিসেবে রয়ে গেছে স্থানটুকু।

মনিপুরি ভাষার নিজস্ব বর্ণমালা রয়েছে। ঐতিহাসিকদের মতে মনিপুরি লিপি প্রবর্তিত হয় মহারাজ পাখংবার শাসনামলে (৩৩-৩১৫ খৃ। তখন বর্ণ সংখ্যা ছিল ১৮টি। পরবর্তীতে মহারাজ খাগেম্বার শাসনামলে আরো ৯টি নতুন বর্ণ সংযোজিত হয়। বর্তমানে মোট বর্ণমালার সংখ্যা হচ্ছে ২৭টি। কিন্তু অষ্টাদশ শতাব্দীতে রাজা পামহৈবার শাসনামলে (১৭০৯-১৭৪৮ খৃ শ্রী শ্রী চৈতন্য প্রবর্তিত 'বৈষ্ণব' ধর্ম তৎকালীন মনিপুর রাজ্যের রাষ্ট্রীয় ধর্মরুপে গৃহীত হওয়ার পর বাংলালিপি দখল করে নেয় মনিপুরি লিপির স্থান। সেই থেকে মনিপুরি ভাষা বাংলা হরফেই লিখিত হয়ে আসছে। সম্প্রতি বিলুপ্ত মনিপুরি লিপির পুন:ব্যবহার ও প্রচলন শুরু হয়েছে।


প্রভাতফেরীতে অংশগ্রহন:

ঘড়ির কাটা যখন ঠিক ৭:০০ ছুই ছুই তখন পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী পলাশীর মোড়-এ জড়ো হতে থাকে ঢাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মনিপুরিরা। হালকা হালকা শীত করছিল। জনলোকারণ্যে একে একে ছেয়ে যায় পলাশী মোড়। শিশু কিশোরদের কপালে, গালে বিভিন্ন লেখা শোভা পাচ্ছিল। কেউবা মাথায় অমর একুশের শহীদ মিনার সম্বলিত বেল্ট কেউবা জাতীয় পতাকা কেউবা স্টিকার লাগিয়ে দাড়িয়ে আছে। অন্যরকম অনুভূতি, অন্যরকম এক আনন্দ ছেয়ে যায় মন ও মননে।

তারপর একে একে যখন আমাদের পরিচিত সবাই এসে গেলো তখন আমরা মহান একুশে ফেব্রুয়ারীর সারিবদ্ধ প্রভাতফেরীর লাইনে। আমাদের উঁচু ঝান্ডায় লেখা বড় বড় করে লেখা 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান একুশে ফেব্রুয়ারী অমর হোক', সৌজন্যে 'ঢাকাবাসী মনিপুরি'। আর এই উঁচু ঝান্ডা বহন করে নিয়ে যাচ্ছিল আমারই দুই সহপাঠী বন্ধু।

আমরা যখন শহীদ মিনারের খুব কাছে চলে এলাম তখন সত্যি অন্যরকম এক শীতলতা বিরাজ করছিল মনে। সামনেই স্তুপাকারে (নিবেদিত/অর্পিত)বিশাল ফুলের সমাহার। তারপর আমাদের দুই বন্ধু পুষ্পস্তবক অর্পন করল, আমাদের প্রত্যেকের হাতে এক একটি করে ফুলের তোড়া ছিল, কারো কারো দুটো.. একে একে আমরা সবাই শ্রদ্ধা নিবেদন করলাম..

তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে আমরা সোহরাওর্য়াদি উদ্যানে মিলিত হয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্বের আয়োজন করি। সেখানে অনেক অজানা তথ্যও বেরিয়ে আসে, জানা হয় সবার..




আমার পেনড্রাই ভাইরাসাক্রান্ত হওয়ায় প্রভাতফেরীর ছবিগুলো লেখাটির (এই লেখাটি লেখার সময় পর্যন্ত) সাথো পোস্ট করতে পারলাম না। সমস্যার সমাধান হওয়ামাত্র লেখাটির সাথে ছবিগুলো পোস্ট করে আপডেট করা হবে। আশা করি খুব শীঘ্রই সমাধান হয়ে যাবে..

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:১৬
৫টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×