somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গতকালের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ আর আমাদের নিয়ে কিছু কথা।

০৩ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গ্যালারির নিচের অংশটা ফাঁকা রেখেই শুরু হলো ম্যাচ। এবং সেটা ফাঁকাই থাকল শেষ পর্যন্ত। আর সেই অর্ধফাঁকা গ্যালারি ফাঁকতালে আমাদের একটা মর্যাদার ছবিও হয়ে গেল!এশিয়া কাপ শুরুর পর থেকেই একটা কৌতূহল ছিল। অন্য কোনো ম্যাচে সে ভয় নেই, কিন্তু ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে আগ্রহটা যদি বাংলাদেশের কোনো ম্যাচের চেয়ে বেশি হয় তাহলে সেটা আমাদের ক্রিকেট অহমের জন্য লজ্জার ব্যাপার হবে। হয়নি। গ্যালারি ফাঁকা রেখে, উৎসাহটা একটা গণ্ডির মধ্যে রেখে মানুষ মর্যাদাটা রেখেছে।

কিন্তু কিছু মানুষ যেমন মর্যাদাটা রেখেছে তেমনি কিছু ‘অমানুষ’ সেটা ডুবিয়েছেও। ওরা গ্যালারিতে এসেছে, ভালো কথা। পাকিস্তানকে সমর্থন করছে, সেটাও না হয় কষ্টেসৃষ্টে মেনে নেওয়া গেল। কিন্তু পতাকা থাকবে কেন? কেন মুখ আঁকবে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার রঙে? কাল ছিল বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা দিবস, ১৯৭১ সালের ২ মার্চ পাকিস্তানি পতাকাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে উত্তোলিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা, তার ৪৩তম বার্ষিকীতে পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে এই উল্লাসনৃত্য দেখতে আর লিখতে বড় লজ্জা লাগছে! পাকিস্তানি পতাকার মতো আবেগকে অত আক্রান্ত হয়তো করে না, তবু ভারতের পতাকা নিয়ে নাচানাচিও নিশ্চয় গ্রহণযোগ্য নয়। আর এখন তো অবশ্যই নয়, যখন ভারতীয় বোর্ডের ‘বিগ থ্রি’ জাতীয় একটা অদ্ভুত ফর্মুলায় বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাসই যেতে বসেছিল! সত্যি বললে, চিরকালীন রাজনৈতিক অঙ্ক আর সমকালীন ক্রিকেট রাজনীতির অঙ্কে এটা এমন একটা ম্যাচ, যাতে দুই দলের কাউকেই সমর্থন করা বাংলাদেশের জন্য কঠিন। এক সাংবাদিক ভারতীয় ইনিংসের মাঝখানে সমীকরণটা ধরিয়ে বলছিলেন, ‘ম্যাচে দুই দল হারলেই ভালো হতো!’ কিন্তু ক্রিকেট ম্যাচ বা কোনো ম্যাচে দুই দল হারার সুযোগ নেই। এক দল জিতবে। সেই দলটা কাল শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান। এবং তার আগের নাটক, অনিশ্চয়তা, উত্তেজনা, রং বদল মিলিয়ে একেবারে ক্লাসিক্যাল ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট। নানা সমীকরণে গত কয়েক বছর সেটাই হারিয়ে গিয়েছিল, কাল যে এভাবে ফিরেছে এর পেছনেও বোধ হয় একটা শক্তি কাজ করেছে। মাঠের ক্রিকেটের বাইরেরই শক্তি।

ক্রিকেটের বা খেলার সঙ্গে রাজনীতি মেলানো উচিত নয়। কেউ কেউ বলবেন। শুধু জানিয়ে রাখি, দেশ একটা রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং দেশে-দেশে খেলা হলে রাজনীতি-ইতিহাস এসব আসবেই। এই যে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে এত উত্তেজনা হয়, সেটা কি শুধু এ জন্য যে এই দুই দল ভালো ক্রিকেট খেলে! তাদের চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলা দলের চেয়েও তাদের ম্যাচ নিয়ে এই রোমাঞ্চের কারণও রাজনীতির ইতিহাসের বৈরিতা। রাজনীতির সেই বৈরিতা ক্রিকেটে বন্ধুত্বে রূপ পেয়ে গিয়েছিল মাঝখানে। ভারত ক্রিকেটের প্রধানতম বাজার, তার কাছে পাকিস্তান ও পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা আত্মসমর্পণ করে বন্ধুত্ব করে নিয়েছিলেন একরকম। ওয়াসিম আকরাম-রমিজ রাজারা এই টিভি যুগের চাহিদা মেটাতে পাকিস্তানের চেয়ে ভারতীয় ক্রিকেট নিয়েই বেশি মাথা ঘামান, আইপিএল খেলার জন্য পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা হা-পিত্যেশ করে প্রকাশ্যে। তাতে আর আগুনে লড়াইয়ের আঁচ থাকে কী করে! বহুকাল পর তবু এবার টিমটিম করে ফিরে এলো শত্রুতার হাওয়া। ‘বিগ থ্রি’ ইস্যুতে যে একটা দেশ শেষ পর্যন্ত ভারতের বিরুদ্ধে তারা তো পাকিস্তান। অর্থ আর বাজারসর্বস্ব টেবিলের সেই খেলায় তাদের পারার প্রশ্ন নেই, কিন্তু মাঠে তো টাকা আর বাজারের জায়গায় ব্যাট-বল। টেবিলের হারের ক্ষতটাই কি হাফিজ-আজমলদের ক্ষুরধার করে দিল! নইলে তো এশিয়া কাপ আর বাংলাদেশ- এই দুই ক্ষেত্রে ভারতই ফেভারিট থাকে বরাবর। সেই চোটেই ফিরে এলো পুরনো আকর্ষণীয় পাকিস্তান আর ফিরে এলো ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের সেই পুরনো জৌলুসও, যেখানে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ম্যাচ থাকে দোলনায়, উত্তেজনা থাকে চরমে, নিঃশ্বাস থাকে বন্ধ হয়ে।

এশিয়া কাপের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় স্মারক হচ্ছে বাংলাদেশের ব্যর্থতা, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে বেরিয়ে একটু বড় করে দেখলে এটা আসলে ক্রিকেটীয় অক্ষমতার প্রদর্শনীরও টুর্নামেন্ট। সব দল এমন গণ্ডায় গণ্ডায় ক্যাচ ফেলছে যে দেখে মাঝেমধ্যে মনে হচ্ছে টুর্নামেন্ট বাদ দিয়ে সবাইকে ক্যাচিং স্কুলে পাঠানো উচিত। ক্যাচ ধরতে গিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা বছরে এক-আধবার দেখা যায়, এই টুর্নামেন্টে এরই মধ্যে বারকয়েক দেখা হয়ে গেল। নিষ্প্রাণ উইকেটে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যাটিং হচ্ছে এত সাধারণ মানের যে এখন পর্যন্ত তিন শ ছাড়ানো স্কোরই হয়নি কোনো। ক্রিকেটাররা যখন এমন ব্যর্থতা দেখাচ্ছে তখন আম্পায়াররাই বা এর থেকে দূরে থাকেন কী করে? এই আম্পায়ারিং ব্যর্থতা-ক্রিকেটীয় অদক্ষতার মিশেলেই আবার ইনিংসগুলোর রান লড়াইয়ের জায়গায় যাচ্ছে। কাল ভারতেরটা যেমন গেল। ৭ রানে আম্পায়ার বাঁচিয়ে দিলেন নিশ্চিত আউট থেকে, ১২ রানে হাফিজ নিজের বলে ছাড়লেন জাদেজার আকাশে উঠে যাওয়া ক্যাচ আর সেই রবীন্দ্র জাদেজাই ৪৯ বলে ৫২ রান করে ভারতের স্কোর নিয়ে গেলেন লড়ার জায়গায়। ভূমিকা আছে রাইডুর ৫৮ ও রোহিতের ৫৬-র। কিন্তু অধুনা ভারতীয় দলের শক্তির যে বিন্যাস তাতে রাইডু-রোহিতরা লড়াইয়ের জায়গায় নিতে পারেন, জেতার জায়গায় নিতে লাগবে তাঁর ব্যাটের ঝড়। তিনি বিরাট কোহলি, কাল কিন্তু উমর গুলের সামনে ‘সামান্য’ হয়ে গেলেন। যেভাবে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলেন তারপর বাকি সতীর্থদের আর খুব কিছু বলার থাকে না। ও হ্যাঁ, ভারতীয় ব্যাটিংয়ের কাজটা কঠিন করার মিশনে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা যে সাইদ আজমলের তিনি নিজের চেহারাতেই ছিলেন। ১০ ওভারে ৪০ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন কিন্তু তার চেয়েও উল্লেখযোগ্য ব্যাপার, ৪৯তম ওভারে ১ রান দিয়ে ২ উইকেট! ভারত তখন মোটামুটি রানের একটা স্রোত তৈরি করেছিল, তখন ওভাবে তিনি বাঁধ না দিলে রানটা আরো অনেক দূর যেতেই পারত।

তিনি, শহীদ আফ্রিদি শুধু এই টুর্নামেন্টে নয়, বহুকাল ধরেই অক্ষমতার ছবি। শেষ কবে ব্যাট হাতে উল্লেখযোগ্য কীর্তি করেছেন, প্রেসবক্সে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরা খুব চেষ্টা করেও মনে করতে পারলেন না। এই টুর্নামেন্টের আগের দুই ম্যাচে যথারীতি ৪ এবং ৬। তা নেমেই যখন সেট ব্যাটসম্যান মাকসুদকে রান আউট করালেন এবং একটু পরে নিজেও প্রায় রান আউট হতে যাচ্ছিলেন তখন মনে হচ্ছিল পতনের পথ তৈরি করতেই এসেছেন তিনি। কিন্তু বহুকাল পর এই অক্ষমতার টুর্নামেন্টে যেন তাঁর নিজেকে চেনানোর ইচ্ছা জাগল। রান তখন খুব বেশি দরকার ছিল না, আফ্রিদিসুলভ দুটো-তিনটা বল ব্যাটে ঠিকঠাক লাগতেই অঙ্কটা তাই হয়ে গেল পানির মতো সহজ। কিন্তু কাজটা আসলে করে দিয়ে গিয়েছেন মোহাম্মদ হাফিজ এবং হাফিজ-মাকসুদের ৮৭ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি। ৭১ রানের দারুণ একটা শুরুর পর ১১৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান যখন বিপথগামী তখন দুজন মিলে ট্রেনটাকে এনেছেন ঠিক পথে। ৭৫ রান করে হাফিজ ফেরার পর মাকসুদের রান আউটে আবার পথচ্যুতির আশঙ্কা। এরপর ৭ বলের মধ্যে ৩ রানে গুল, তালহা ও আজমল ফিরে যাওয়াতে পাকিস্তানের স্কোর ৯ উইকেটে ২৩৬। ভারতই তখন ফেভারিট। কিন্তু আফ্রিদি যে বহুদিন পর অক্ষম থেকে সক্ষম হয়েছেন। অন্যপ্রান্তে দাঁড়িয়ে এই আসা-যাওয়া দেখার পর যখন স্ট্রাইক পেলেন তখন ৪ বলে চাই ৯ রান। কিন্তু চারটা বল লাগল না। লাগল দুটো। আসুরিক শক্তির দুই ছক্কায় বল মাঠের বাইরে একা গেল না, গেল পুরো ভারতের হাহাকার নিয়ে। আর পাকিস্তান তখন...। বহুকাল পর যেন সেই পাকিস্তান, যারা যত নাটকই হোক শেষ পর্যন্ত ভারতকে হারায়। বন্ধুত্ব ভুলিয়ে সদ্য ফেরা বৈরিতা যেন ফিরিয়ে আনল সেই পাকিস্তানকে। এবং সেই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচকেও, যেখানে ম্যাচ দোলে দোলনার মতো, থরে থরে সাজানো থাকে নাটক, শেষ মুহূর্তের আগে তৈরি হয় না শেষের গল্প।

বলছিলাম এশিয়া কাপ অক্ষমতা আর অক্ষমদের টুর্নামেন্ট। কিন্তু আফ্রিদির ১৮ বলে অপরাজিত ৩৪ রানের কীর্তিতে তাতে নতুন প্রাণ। নতুন পরিচয়ও। এটা বোধ হয় অক্ষমদের সক্ষম হওয়ার টুর্নামেন্ট এখন।

আচ্ছা অক্ষমরা যখন সক্ষম হয়ে যাচ্ছে তখন প্রথম দুই ম্যাচের অক্ষম বাংলাদেশ কি পরের দুই ম্যাচে সক্ষম হতে পারবে! সেটার খুব দরকার। আর দলের এই অক্ষমতা দূর হওয়ার মতোই দরকার ওই অসভ্যতাটা দূর হওয়াও।

পাকিস্তান,ভারত বা অন্য দেশের পতাকা নিয়ে নাচানাচির অসভ্যতা!
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×