somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিজেই তৈরি করুন ই-বুক

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমানে ইন্টারনেটের নানা সুবিধার কল্যাণে সবকিছু যখন হাতের মুঠোয়, তখন ইচ্ছে করলেই পড়ার কাজটিও সেরে নিতে পারেন সহজেই। হাতে থাকা স্মার্টফোন, ট্যাবলেট বা ল্যাপটপ কম্পিউটারে সাবলীলভাবে পড়া যায় ই-বুক। কিন্ডেলের মতো ই-বুক রিডার থাকলে তো আরও ভালো। আঙুলের ছোঁয়ায় ওল্টানো যায় পৃষ্ঠা।শুধু পড়াই নয়, নিজেই তৈরি করতে পারেন ইলেকট্রনিক বই (ই-বুক)। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী অনেকে ই-বুকের সঙ্গে পরিচিত। কাগজে ছাপা বইয়ের বিকল্প ই-বুক নামিয়ে (ডাউনলোড) পড়ার কাজটিও করেন অনেকেই। পাশাপাশি ই-বুক প্রিন্ট করে বাঁধাই করেও রাখা যায় নিজের বইয়ের তাকে। ইংরেজির পাশাপাশি অন্যান্য অনেক ভাষার ই-বুক ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয়। বাংলা ই-বুকও প্রকাশিত হচ্ছে এখন। ই-বুক তৈরিতে বড় সুবিধা হচ্ছে, এ বই সহজে ইন্টারনেটেই প্রকাশ করা যায় এবং পাঠকদের কাছে সহজে পৌঁছানো যায়। আমাদের দেশে বর্তমানে বাংলা ভাষার বিভিন্ন ব্লগসাইটের কল্যাণে নিয়মিতভাবে ই-বুক প্রকাশিত হচ্ছে। ব্লগে প্রকাশিত নানা ধরনের লেখা নিয়ে তৈরি এসব ই-বুকের পাঠক বিশ্বব্যাপী।

যেভাবে তৈরি করবেন ই-বুক
ই-বুক তৈরি ব্যাপারটি তেমন কঠিন নয়। যে বিষয়টি নিয়ে ই-বুক তৈরি করবেন সে বিষয়ের লেখাগুলো তৈরি করে সহজেই করতে পারেন নিজের ই-বুক। সবার আগে শুরুতে ডিজাইন সফটওয়্যার (অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর) দিয়ে নিজের পছন্দ অনুযায়ী তৈরি করুন ডিজাইনের কাজটি। এ কাজটি সহজ করার জন্য ওয়ার্ড ফাইল আকারেও করা যাবে। তবে সুন্দর ও আকর্ষণীয় আকারে দেখতে, ডিজাইন সফটওয়্যার দিয়ে করাই ভালো। ডিজাইন করার পর পোর্টেবল ডকুমেন্ট ফরম্যাট (পিডিএফ) আকারে তৈরি করে নিতে হবে ফাইলটি। তবে এ ক্ষেত্রে যে ফাইলে করা হোক না কেন পিডিএফ করার সময় প্রিন্ট অপশন থেকে পিডিএফ করা ভালো। কারণ, এতে ফাইলের আকার কম হয়, জানালেন ব্লগার (ব্লগ লেখক) সবাক। তিনি নিজেও ব্লগারদের কবিতা সংকলন নিয়ে তৈরি করেছেন ই-বুক। তিনি বলেন, লেখাগুলোকে পিডিএফ আকারে করার পর অ্যাডোবি অ্যাক্রোবেট রাইটার নামের সফটওয়্যার দিয়ে বাকি কাজগুলো করা যায়। অর্থাৎ সূচিপত্র তৈরি, নির্দিষ্ট লেখকের নামে ক্লিক করলেই ওই পাতায় যাওয়া, যেকোনো পাতার নম্বরে ক্লিক করে আবার সূচিপত্রে ফিরে আসাসহ নানা ধরনের কাজ করা যায়। তবে লক্ষ রাখা প্রয়োজন, পিডিএফ আকারে ই-বুক তৈরি করলে বইটি ডাউনলোড করা যাবে অথবা ইচ্ছে করলে ওয়েবসাইটেই পড়া যাবে। তাই ফাইলটিকে যতটা সম্ভব ছোট আকারে করার জন্য পিডিএফ ফাইলটি ছোট করা ভালো। তবে শুধু ওয়ার্ড কিংবা অন্য ফরম্যাটের ফাইলই নয়, লেখাকে ছবি (ইমেজ) আকারে নিয়ে গিয়ে সহজেই তৈরি করতে পারবেন আপনার ই-বুক। এ কাজটি শেষ হওয়ার পর বইটি প্রকাশের জন্য যেকোনো শেয়ারিং সাইটের সহায়তা নিতে হবে। এ ধরনের সাইটের মধ্যে রয়েছে মিডিয়াফায়ার, ফোরশেয়ারড যেখানে বিনা মূল্যে ফাইল রাখা যায়। ফাইল রাখার (আপলোড) পর একটি ওয়েবলিংক পাওয়া যাবে, যে লিংকের মাধ্যমে যে কেউ বইটি ডাউনলোড করতে পারবেন। তবে শুধু ডাউনলোডই নয়, ইচ্ছে করলে এ বইটি নিজের ওয়েবসাইট কিংবা বইটি নিয়েই একটি ওয়েবসাইট করা সম্ভব, যেখান থেকে যে কেউ ইচ্ছে করলে ওয়েবসাইটেই বইটি পড়তে পারবেন, জানালেন ওপেন সলিউশন বিডির প্রধান নির্বাহী ফেরদৌস আহমেদ।

ই-বুক তৈরিতে কিছু কৌশল
ই-বুক তৈরির ক্ষেত্রে মাথায় রাখা উচিত, যেহেতু বইটিতে ডাউনলোড এবং ওয়েবসাইটে পড়া, দুটি সুবিধাই থাকতে হবে, তাই তৈরির সময় ফাইলের সাইজটি যতটা কম করা যায়। এ ক্ষেত্রে ই-বুকের ব্যবহূত রঙিন ছবি আরজিবি ফরম্যাটে এবং পিডিএফে ব্যবহূত ছবিগুলো সেইভ ফর ওয়েব হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে। এতে করে যেমন ই-বুকের আকার কমে যাবে, তেমনি ছবি কিংবা লেখা, দুটিই ভালো দেখাবে। সাধারণভাবে ২০০ থেকে ৩০০ পৃষ্ঠার বই ৮ থেকে ১০ মেগাবাইটের মধ্যে হলে ভালো হয়, বললেন ব্লগার সবাক। ই-বুক তৈরির পর বইটির লিংক নিজের যেকোনো ওয়েবসাইটে কিংবা বইয়ের জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করা সম্ভব। এখানে মূল ব্যাপারটি হচ্ছে, যিনি ই-বুক তৈরি করছেন, তিনি কীভাবে করতে চান। যদি শুধু ই-বুক নিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান, তাহলে তাও সম্ভব। এ ছাড়া যদি নিজের ই-বুকটি নিজের ওয়েবসাইটে দিতে চান তাও সম্ভব, বললেন ফেরদৌস আহমেদ।

বাংলায় প্রকাশিত ই-বুক
বাংলা ব্লগের কল্যাণে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ই-বুক তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রকাশিত ই-বুক ফিরে দেখা ’৭১, মা দিবস উপলক্ষে ই-বুক, ঈদ উপলক্ষে কবিতা নিয়ে প্রকাশিত ই-বুক, গল্প, ছবি, ফুটবল, পয়লা বৈশাখ, স্বপ্নের বাংলাদেশ নিয়ে ই-বুক ইত্যাদি। শুধু এসবই নয়, লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বইটি নিয়ে তৈরি হয়েছে ই-বুক। বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায় বইটি www.liberationwarbd.org ওয়েবসাইট থেকে ৭১ হাজার ১৬৬ বার সংগ্রহ করা হয়েছে (১ ডিসেম্বর পর্যন্ত)! নানা দিবস উপলক্ষে বর্তমানে এসব ই-বুক প্রকাশিত হচ্ছে, যা দেশের পাশাপাশি বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে পড়তে পারবেন পাঠকেরা।

প্রথম বাংলা ই-বুক মেলা
গত বছর ই-বইয়ের উদ্যোগকে আরও বেশি করে তুলে ধরতে প্রথম আলো ব্লগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ‘প্রথম বাংলা ই-বুক মেলা ২০০৯’। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে ২১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে তিন দিনের এ মেলা শেষ হয় ২৩ ফেব্রুয়ারি। ই-বুকের ক্ষেত্রে তেমন কোনো স্থানের প্রয়োজন নেই, বরং একটি ওয়েবসাইট প্রয়োজন। প্রথম আলো ব্লগই সে সময়ে প্রথম বাংলা ই-বুক মেলার স্থান হয়। অনলাইনে বিশ্ব ই-বই মেলা (http://www.worldebookfair.org) হয়ে আসছে প্রায় তিন বছর ধরে। আগামী বছর এ মেলা অনুষ্ঠিত হবে ৭ এপ্রিল।

গুটেনবার্গের কথা
সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবী একদল মানুষের সামাজিক কাজ হিসেবে মুদ্রিত বইকে ডিজিটাল মাধ্যমে রূপান্তর করার উদ্দেশ্যে ১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে প্রাচীন গুটেনবার্গ নামের ডিজিটালগ্রন্থাগার।মিকাইল এস হার্টের হাত ধরে যাত্রা শুরু করা প্রজেক্ট গুটেনবার্গ (পিজি) নামের এ প্রকল্পের আওতায় এর ওয়েবসাইটে (http://www.gutenberg.org) পাবলিক ডোমেইন অনুমোদিত প্রায় ৩৫ হাজার ই-বুক রয়েছে। ইংরেজির পাশাপাশি নানা ধরনের বই রয়েছে এ সাইটে, যা নানা ধরনের ফরম্যাট দিয়ে তৈরি। ২০০৩ সাল থেকে এ ওয়েবসাইটের সেরা সব বই নিয়ে সিডি কিংবা ডিভিডি আকারে প্রকাশ করছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাবলিক ডোমেইনে আসা বইগুলোকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ই-বুক তৈরির কাজটি প্রজেক্ট গুটেনবার্গ করে যাচ্ছে। কোনো ধরনের নিবন্ধন ছাড়াই সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে এ ওয়েবসাইট থেকে বই ডাউনলোড করা যাবে, যা কম্পিউটারের পাশাপাশি আইপ্যাড, গ্যালাক্সি প্যাড, কিন্ডল, সনি রিডার, আইফোনসহ বিভিন্ন স্মার্টফোনে সহজেই পড়া যাবে। পছন্দ অনুযায়ী বই খোঁজার সুবিধাসহ এ সাইটে রয়েছে মোবাইল ফোন উপযোগী আলাদা ওয়েবসাইট। সব মিলিয়ে ই-বুকের জন্য জনপ্রিয় সমৃদ্ধ এ ওয়েবসাইটটি বেশ উন্নত।
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×