এই পোস্টটি আসছে বোরো মওসুম: শুরু হবে পানি সংকট লেখা থেকে অনুপ্রানিত।
আমি পানির অপচয় রোধে আমার শহুরে জীবনে কিছু নিয়ম অনুসরন করি, পরিবারের সদস্যদের বাধ্য করি এবং বন্ধু-সহকর্মীদের আড্ডায় বিষয়টা উপস্থাপন করি, নামাজের পর মুক্তাদিদের বলি (আমি আমার অফিসের নামাজের জামাতে মাঝে মধ্যে ইমামতি করি)।
আমার গ্রামের বাড়ি যেখানে, সাতক্ষীরার বর্ডার এলাকায়, সেখানে সুপেয় পানির ব্যবস্থা মোটামুটি নাজুকই বলা যায়, আরো দক্ষিনে আরো খারাপ অবস্থা বিশেষ করে শীতকালে আর গ্রীষ্ম কালে। একটা উদাহরন দেই, সুন্দরবন এলাকায় একজন মহিলার মোটামুটি আধাবেলা যায় সারাদিনের প্রয়োজনীয় খাবার পানি যোগাড় করতে।
আমার অনুসৃত নিয়ম গুলো
১। অজু করা - বাসায় মগে পানি নিয়ে অজু করি। দেড় লিটারে ভালো মতই হয়ে যায়। মসজিদে যেহেতু ব্যবস্থা নেই তাই ট্যাপটা ছেড়ে হাতের তালুকে কাপ বানিয়ে পরিমান মত পানি নিয়ে ট্যাপ বন্ধ করে দেই, এইভাবে বারবার ট্যাপ অফ/অন করে অজু শেষ করি। লোকজন আমার দিকে হা কইরা তাকাইয়া থাকে। মনে করে আমি ট্যাপটা নষ্ট করে ফেলতেছি। এটুকু বোঝে না, একটা ট্যাপের দাম এক কাপ পানির তুলনায় নস্যি।
২। ব্রাশ করা - ব্রাশ করা শেষ হলে মগের পানি দিয়ে ব্রাশ ধুয়ে ফেলি। ব্রাশে পেস্ট নিয়ে একটু ভিজিয়ে ব্রাশ করা শেষ করে ব্রাশ ধোয়া অব্দি পানির ট্যাপ চালু রাখাকে আমি মোটামুটি ফৌজদারি অপরাধ সমান মনে করি।
৩। গোসল করা- বালতিতে পানি নিয়ে । লাইট গোসল ৫-৬ লিটার পানিতে শেষ করতে পারি, অনেক সময় প্রায় ২০ লিটার ব্যবহার করি। গোসলের সময় পরিধেয় বস্ত্র ছোটতর হওয়াই ভালো, যদি প্রাইভেসি ভালো থাকে, এতে পানি কম খরচ হয়।
৪। বাসন ধোয়া - বাসন গুলো আগে মেজে ঘষে পরিষ্কার করি তারপর ট্যাপ ছেড়ে সেগুলো একটা একটা করে ধুয়ে ফেলি। আপনার বাসার কাজের লোকটা দেখবেন কাজটা অন্যভাবে করে - ঘষামাজা টু ধোয়া - পুরো সময় ট্যাপ চালু। বারন করবেন, পদ্ধতি শিখিয়ে দিবেন, ধমক দিবেন না কারন তারা আপনার মত শিক্ষিত নয়।
৫। সবজি ধোয়া- কাটার আগে হাত, সবজি, বটি বা ছুরি আগে ধুয়ে নেই ভালো ভাবে। এটা পানি খরচ বাচায় একই সাথে নিরাপদও। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য।
৬। কাপড় ধোয়া - কাপড়ে সাবান ঘষার দরকার হলে ঐ সময়টাতে ট্যাপ বন্ধ। তবে নিজের সেন্স ব্যবহার করে এখানে পানি ব্যবহার ভালোভাবে অপটিমাইজ করা যায়।
৭। হোটেলে খাওয়া - গ্লাসে ততটুকুই পানি ঢালি যতটুকু খেতে পারি, পানির অর্ডার ততটুকুই করি যতটা খেতে পারি।
জায়গামত আরো অনেক কিছুই করি যার জন্য দরকার নিজের সেন্সিবল মাইন্ড। দয়া করে আমাকে কেউ মহাজ্ঞ্যানি বা ঋষি পর্যায়ের কেউ ভাববেন না, এগুলো মানা দরকার, আমি মানি তাই আপনাদের মানতে বললাম, এটা যেমন আপনার সন্তানের ভবিষ্যত ভালো করবে তেমনি আপনারও।
সৃষ্টিকর্তা আপনার নিয়ামত কমিয়ে দিবেন যদি আপনি অপচয় করেন।
আসুন পানির ব্যবহারে নিজে অপচয় না করি আর অন্যকে করতে বাধা দেই।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৮