গত দুই বছর আগে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সরকারি মদদে ভারতে মুসলিমদের ওপর নির্যাতন নিপীড়নের মাত্রা ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্ষমতাসীনদের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন নিয়মিতভাবে মুসলিমদের তুচ্ছ ঘটনায় হত্যা পর্যন্ত করছে। এছাড়াও নানাভাবে নিপীড়নের পাশাপাশি অব্যাবহতভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়ে চলেছে হিন্দুত্ববাদীরা। সরকার ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করায় অনেক এলাকায় নির্যাতনের মাত্রা স্থানীয় মুসলিমদের সহ্যের বাইরে চলে গেছে।
সম্প্রতি দিল্লীতে এমনি কয়েকটি ঘটনা ঘটে। দিল্লী পুলিশ কোনো প্রমাণ ছাড়াই স্থানীয় আরএসএস কর্মীদের উস্কানিতে ১৩জন মুসলিম তরুণকে ‘বোমা হামলা’র পরিকল্পনার অভিযোগ তুলে গ্রেফতার করে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।
প্রকৃতপক্ষে, ওই তরুণরা খুবই সাধারণ পরিবারের ছেলে। তাদের বিরুদ্ধে ছোট খাটো কোনো অপরাধেরও অভিযোগ কখনো ছিল না।
গ্রেফতার হওয়ার পর আটকদের পরিবার যোগাযোগ করেন ভারতের মুসলিম নেতাদের সঙ্গে। তারপর তাদের হস্তক্ষেপে ১১ জন মুক্তি পান। কিন্তু এখনো ২জন আটক রয়েছেন।
আটক ছেলেদের একজনের মা দেখা করেন ভারতে বিখ্যাত বেরলভি পরিবারের সদস্য মাওলানা তৌকির রাজা খানের সাথে। সাহায্য চান তার ছেলেসহ নির্যাতনের শিকার হতে থাকা নিরীহ মুসলিম ছেলেদেরকে রক্ষার জন্য। ওই মায়ের কান্নায় বিচলতি হয়ে পড়েন তৌকির রাজা। বুঝতে পারেন ভারতে মুসলিমদের এমন দূরাবস্থা থেকে উদ্ধারে সকল বিভাজন পেছনে ঠেলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সিদ্ধান্ত নেন ধর্মীয় চিন্তাচেতনায় তার ঘোর বিরোধী দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিমের সাথে সাক্ষাৎ করে করণীয় নিয়ে আলোচনা করবেন।
সে অনুযায়ী গত ১০ মে মুহতামিম মাওলানা আবুল কাসিম নোমানীর সাথে সাক্ষাৎ করেন তার অফিসে গিয়ে। প্রখ্যাত দুই আলেমের এই ঐতিহাসিক সাক্ষাৎ ভারতের মুসলমান, এমনকি অমুসলিমদের মধ্যেও আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
সাক্ষাতে তারা উভয়ে ভারতের মুসলিমদের জন্য কাজ করতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই বলে নিজেদের মত ব্যক্ত করেন এবং এক সাথে কাজ করার প্রতিজ্ঞা করেন। নোমানীর সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদেরকে তৌকির রাজা খান বলেন, “এখন সময় এসেছে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং যারা আমাদের নিরিহ ছেলেদেরকে জেলে পুরতে চায় তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার।”
দেওবন্দি এবং বেরলভিপন্থীদের এমন ঐক্যের ডাক দেয়ার বিষয়ে ভারতের জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়ার ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক স্টাডিজের অধ্যাপক প্রফেসর আখতার উল ওয়াসি বলেন, আমাদের ছেলেদেরকে সিস্টেমেটিক নিপীড়নের টার্গেট বানানো হচ্ছে। তারা আমাদেরকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে হেয় করতে চায়। যদি শত্রুরা আমাদেরকে এক চোখে দেখতে পারে, আমাদের ধর্মীয় মতপার্থক্যকে আমলে না নিয়ে সমানভাবে আমাদের বিরুদ্ধে শত্রুতা করতে পারে, তাহলে আমরা কেন নিজেদের মধ্যে পার্থক্য জিইয়ে রাখবো?”
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৬ রাত ১০:০০